শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী
কওমি মাদ্রাসার মাধ্যমেই মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে
সংবর্ধনা আমার জন্য না, শুকরিয়া যে কওমি সনদটার স্বীকৃতি দিতে পেরেছি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার মাধ্যমেই মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। কওমি শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সংবর্ধনা তার জন্য নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, সংবর্ধনা আমার জন্য না, এটা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা দরকার যে আমি কওমি সনদটা দিতে পেরেছি।
প্রধান অথিথির বক্তব্যে শোকরানা মাহফিল আয়োজন করার জন্য শুকরিয়া আদায় করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা দীন ইসলামের খেদমত করছেন তাদের মধ্যে উপস্থিত হতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। আমাকে যখন আল্লামা শফী সাহেব বললেন যে এই বিল আমরা পার্লামেন্টে পাস করেছি, তিনি একটি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। তখন আমি বললাম, সংবর্ধনা আমার জন্য, বরং এটা হবে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করার।
শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না। আমি যে বারবার গ্রেনেড হামলা, গুলি থেকে বেচে যাই, মনে হয় এটা আল্লারই ইচ্ছা। আপনাদের স্বীকৃতি দেবো না এটা কখনো হতে পারে না। আপনারা সকলে এমনভাবে কাজ করবেন, যাতে মাদ্রাসা থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে তারা যাতে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে যেতে পারে। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাবে, এজন্য আমি একটি আররি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় করে দিতে চাই এজন্য জায়গাও ঠিক করে রেখেছি।
যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারা কখনো জঙ্গিবাদে-সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক তা আমরা চাই না। শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আল্লাহ আমাকে যতটুকু শক্তি দিয়েছেন তা দিয়ে জনগণের খেদমত করে যেতে চাই-এই দোয়াটাই সবসময় করি
আপনাদের দোয়া চাই। সামনে নির্বাচন আছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাইলে আবারও জনগণের খেদমত করতে পারবো। আর যদি না চান…আমি পুরোটাই আল্লার ওপরই ছেড়ে দিয়েছি।
আজ রোববার ৪ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিআাতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘শুকরানা মাহফিলে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথাগুলো বলেন। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ পাস হওয়ায় এ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে সংসদে আইন পাস করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা জানান শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কমিশন আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ আয়োজিত শুকরানা মাহফিলে এ সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। শুকরানা মাহফিলে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম এবং সারা দেশ থেকে আসা কয়েক লক্ষ আলেম ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মাননা জানানোর আগে তাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেন কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিআাতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র সদস্য মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
পরে বক্তৃতা শুরু করেই মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আলেম-ওলামাদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা সংযুক্ত হলেই একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ হয়। আর কেউ যেন কওমি স্বীকৃতি বাতিল করতে না পারে সেজন্য এই আইন (স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি) করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলামী সংস্কৃতির বিস্তারের জন্য দেশের প্রতিটি অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে লিপ্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারে বিশ্বাস করবেন না। সরকার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
শোকরানা মাহফিলে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি হওয়ার মধ্য দিয়ে কওমি শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, এখন থেকে দেশের সব শিক্ষিতই এক পরিবারভুক্ত।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত দিকনির্দেশনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে। উলামায়ে কেরামের প্রণীত নীতিমালার ভিত্তিতেই এ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বীকিৃতির বিল সংসদের উত্থাপিত হওয়ার পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কওমি স্বীকৃতির আইন যেন দ্রুত বাস্তবায়য়েন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। উলামায়ে কেরামের তৈরি নীতিমালার ভিত্তিতেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্বীকৃতির আইন পাস করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই আমি কওমি মাদরাসার যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।
‘কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির মাধ্যমে সরকার এদেশে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চার মাযহাবের অনুসারী ছাড়া আর কোনো আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অস্তিত্ব নেই।’ শুকরানা মাহফিলে স্বাগত বক্তব্যে এ কথা বলেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব ও ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আবদুল কুদ্দুস।
তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা ধারার উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। অন্য কেউ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত নয়। যারা নবীদের নিষ্পাপ মনে করে না, সাহাবীদের নিষ্পাপ মনে করে না তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
মাওলানা আবদুল কুদ্দুস আরও বলেন, আমরা সরকারের কাছে কখনো টাকা পয়সা নেব না। আমরা কেবল শিক্ষার মান চেয়েছি। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও যে শিক্ষিত সরকারিভাবে এটি যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।
‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’র ব্যানারে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মো. জয়নাল আবেদীন।
বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, হাইআতুল উলইয়ার কো চেয়রম্যান আল্লামা আশরাফ আলী, মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা আরশাদ রাহমানী, মাওলানা আবদুল বছির, মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজিদুর রহামান, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, শেখ আবদুল্লাহ, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মাওলানা আবু তাহের নদভী প্রমুখ।