ব্রিটিশ ভিসার সুযোগ
মুকুল হায়দার: যুক্তরাজ্যের নিউ হ্যামকে বৃটিশ এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার অভিযানে নেমেছেন ওই এলাকার মেয়র স্যার রবিন ওয়েলস। নিউ হ্যামে সবচেয়ে কম শেতাঙ্গের বসবাস। স্যার রবিন মনে করেন এই এলাকায় যারা থাকবেন তাদের ইংরেজি জানতে হবে এবং বৃটিশ মুল্যবোধ ধারণ করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন। ফলে অপেক্ষাকৃত সহজে মিলছে অভিবাসীদের ব্রিটিশ ভিসা। তবে এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি কি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছেন নাকি দুরে ঠেলে দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন উঠেছে।
নিউ হ্যামের একটি মিলনায়তনে মিলিত হয়েছেন ১৩টি দেশের ৩১জন নাগরিক। তাদেরকে বৃটিশ পাসর্পোট দেওয়ার জন্যই এ আয়োজন। প্রত্যেক সপ্তাহের মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানের। সেই অনুষ্ঠানে ৮০ জনকে দেওয়া হয় বৃটিশ নাগরিকত্ব। নিউ হ্যামে এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে থেকে তৈরি হয় ভিন্ন ধরনের অনুভূতি। কারণ তারা বছরের পর বছর অপেক্ষার পর বৃটিশ নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। সেই অনুষ্ঠানের স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যামেরায় ছবি তুলতে আলোর ঝলকানি একটি অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ভারতের কেরালা থেকে আসা দম্পতি শিবু এবং মিনি পেলেন বৃটিশ নাগরিকত্ব। তারা যখন প্রথম নিউ হ্যামে এসেছিলেন তখন ছিল গাছ গাছালিতে ভরা। এখানকার পরিবেশ তাদের কাছে ভারতের মতই মনে হত। অন্য বাসিন্দাদের সাথে তারা ভারতীয় ভাষাতেও কথা বলতে পারছেন। এখন তারা ভারতে বসবাস করছেন এমনটাও তাদের এখন মনে হয়। তবে শিবু মনে করে এই পরিবেশও একধরনের সমস্যা তৈরি করে।
তিনি বলেন, ‘শেতাঙ্গরা নিউ হ্যাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এখানে বাইরের অন্য দেশের লোকদের বসত বাড়ছে। এটা ভালো বলে আমি মনে করিনা। করন, ইংলিশরা এখানে থাকলে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হতো। এবং এটা সকলের জন্যই বেশি ভালো হতো।’
নিউ হ্যামের রাস্তায় নামলেই চোখে পড়বে নানা ধরনের বৈচিত্র। রাস্তায় যাকেই জিজ্ঞাসা করুন না কেন, দেখবেন যে সে অন্য দেশ থেকে এখানে এসেছে। তাদের বেশির ভাগ-ই ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না। অনেকে ভাঙ্গাভাঙ্গা ইংরেজি বলেন। তবে এখানে বৃটিশদের অনেক পুরানো ভবন এবং ঐতিহ্য রয়ে গেছে।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত স্যার রবিন ওয়েলস বৃটিশ সংস্কৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিউ হ্যাম লাইব্রেরী থেকে বিদেশি ভাষার সব পত্রিকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে ভাষার অনুবাদ শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাতে করে সবাই ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ সেখানে স্ব স্ব কমিউনিটির মধ্যে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। নিউ হ্যামে সেই ধরনের অনুষ্ঠানে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্যার রবিন ওয়েলস ২০০২ সাল থেকে মেয়র রয়েছেন।
মেয়র রবিন বলেন, ‘আমরা কিছু ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। যাতে নিউ হ্যামে বসবাসকারিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখানে বসবাস করতে পারে। আলাদা আলাদা কমিউনিটির মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে ঘুরপাক খেলে সেটা তাদেরকে সমস্যায় ফেলছে। একই সাথে যুক্তরাজ্যের জন্যও সমস্যা তৈরি করছে।’
তবে, অনুবাদ শাখা বন্ধ করা বা বিদেশি ভাষার পত্রিকা লাইব্রেরীতে না রাখা সম্পর্কে মেয়র অর্থ সংকটের কথাই উল্লেখ করছেন।
দু’সপ্তাহ পর নিউ হ্যামের সেই মিলনায়তনেই আরো অনেককে বৃটিশ নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম এবং তার জাকিয়া রহমান বৃটিশ পাসপোর্ট পান। তারা ১৮ বছর থেকে সেখানে বাস করছেন। তারা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না তবে, তারা খুব খুশি।
তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমি এখন বৃটিশ নাগরিক বা বৃটিশ পরিবার। এটা অন্যরকম এক অনুভূতি।’
অনুষ্ঠানে বৃটিশ নাগরিত্ব পেয়ে তারা বৃটিশ পতাকার দিকে তাকিয়ে আবেগ প্রবন বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, যারা বিভিন্ন দেশের মানুষ বৃটিশ নাগিরক হলেন তারা নিউ হ্যামের মেয়রের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতটা ভূমিকা রাখবেন ? বিবিসি