মাসের সর্বনিম্ন দরে উইনাইটেড এয়ার
সপ্তাহের টার্নওভারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেবা খাতের কোম্পানি উইনাইটেড এয়ার মাসের সর্বনিম্ন দরে লেনদেন হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ১৯.৪০ টাকা। ৩০ দিন আগে এর শেয়ার মূল্য ছিল ২০.৮০ টাকা। মাসের ব্যবধানে শেয়ার দর কমেছে ৭.২১ শতাংশ। এ সময়ে শেয়ারটি প্রতিদিন ‘টপটেন’ টার্নওভারের তালিকায় থাকলেও দরের ক্ষেত্রে নিম্নমুখী অবস্থানে থাকে।
কোম্পানিটি গত বুধবার সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও কোম্পানিটির শেয়ারের দর পড়ে যায়। বিনিয়োগাকরীরা বলছেন, কোম্পানিটি আগের বছরের তুলনায় এবছর ডিভিডেন্ড কম দেয়ায় এর শেয়ারের দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজার পর্যালোচায় দেখা যায়, গত বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৮ টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়। ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩২ টাকার উপরে উঠে। রেকর্ড ডেটের পর কোম্পানিটির শেয়ার দর আবার ২৮ টাকার ঘরে নেমে আসে।
তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, রেকর্ড ডেটের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন না করার অভিযোগ এনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ঐ বছর কোম্পানির আয় থেকে ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন না করার সত্যতা খুঁজে পায়। এপরপর ডিএসই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিকট প্রেরণ করে। বিএসইসি ঐ রিপোর্টের ভিত্তিতে আর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিএসইসির পরবর্তী কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
এরপর ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন না করার বিষয়কে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ার দরে ক্রমাগত নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২০ টাকার ঘরে নেমে আসে। দীর্ঘদিন যাবত এর শেয়ার দর একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিনিয়োগাকারীর বলছেন, ডেফার্ড ট্যাক্সকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটি বিতর্কে আসার কারণে এর শেয়ারের প্রতি বড় পুঁজির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যায়। অন্যদিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যায়। ফলে প্রায় প্রতিদিনই শেয়ারটি টার্নওভারের তালিকায় থাকলেও দরের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়না।
সমাপ্ত অর্থবছরের আয় থেকে কোম্পানিটি গত দুই অর্থবছরের ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন করেছে। এ কারণে সমাপ্ত অর্থবছরে এর আয় কমে যায়। সমাপ্ত বছরে এর শেয়ারপ্রতি দাঁড়ায় ১.১০ টাকা। কোম্পানি সূত্র জানায়, ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন করা না হলে এর শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়াতো ১.৮৭ টাকায়। উল্লেখ্য, ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন না করায় এর আগের বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১.৮৪ টাকা।
ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান বলেন, সমাপ্ত অর্থবছরের আয় থেকে দুই বছরের ডেফার্ড ট্যাক্স বাদ দিয়ে কোম্পানিটি খুব ভালো কাজ করেছে। এতে একদিকে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন না করার অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটলো। অন্যদিকে, কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আগ্রহ আগের মতো ফিরে আসবে।
জাকির হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ইউনাইটেড এয়ার একটি সম্ভাবনাময় কোম্পানি। প্রতিবছর কোম্পানিটির বহরে এয়ারক্রাফটের সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এর নেটওয়ার্কও সম্প্রসারণ হচ্ছে। কোম্পানিটি সমাপ্ত বছরে ডেফার্ড ট্যাক্স কর্তন করে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন শেয়ারটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব ধীরে ধীরে কেটে যাবে।