পারিবারিক সহিংসতা রোধকল্পে নতুন চার্টার ঘোষণা করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল
লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা রোধকল্পে টাওয়ার হ্যামলেটস’ কাউন্সিলের অঙ্গিকার পূণর্ব্যক্ত করে নতুন একটি চার্টার ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাহী মেয়র জন বিগস এবং ডেপুটি মেয়র আসমা বেগম গত ৩১ অক্টোবর এই চার্টার বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এতে সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে কার্যকর সহযোগিতা প্রদান, যেমন আশ্রয়স্থল প্রকল্প, নিজের ঘরেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারিবারিক পরিমন্ডলে নিগৃহিত, নিপীড়িত হওয়া বাচ্চচাদের সহায়তা প্রদানে কাউন্সিলের অঙ্গিকার তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া স্ত্রী-বিদ্বেষকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখার অঙ্গিকারও এই চার্টারে পূণর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়াদের ৭০ শতাংশই হচ্চেন মহিলা এবং প্রতি তিন জনের একজন মহিলা ও বালিকা তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নতুন এই চার্টারে পুরুষরাও পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং নির্যাতিত পুরুষ ও ছেলেদের জন্যও অনেক সহায়তামূলক সার্ভিস রয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসে মাসব্যাপি সেফগার্ডিং বা নিরাপদে রাখার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যান এন্ড গার্লস শীর্ষক এই চার্টার বা ঘোষনাপত্র প্রকাশ করা হয়।
বারায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নির্যাতিত ও উপক্ষিত হওয়ার বৃহত্তর চিত্রের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই এই সেফগার্ডিং কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শোষন কিংবা নির্যাতনের নানা ধরন সম্পর্কে জানতে এবং এব্যাপারে উদ্বেগ তুলে ধরতে বাসিন্দারা যাতে সক্ষম হন, সেজন্য বারার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
ডেপুটি মেয়র এবং কেবিনেট মেম্বার ফর কমিউনিটি সেফটি এন্ড ইক্যূয়েলিটিজ, কাউন্সিলর আসমা বেগম বলেন, এটা ভয়ংকর একটি তথ্য যে, প্রতি তিন জন মহিলার মধ্যে একজন লিঙ্গ সহিংসতার শিকার হন। এই চার্টারে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্য মোকাবেলায় আমাদের অঙ্গিকার ও করণীয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। স্ত্রী-বিদ্বেষকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এর মারাত্মক প্রভাব থেকে মহিলা ও মেয়েদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমি সরকারের প্রতি আহধ্বান জানাচ্ছি। আমাদের কমিউনিটিতে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার কোন অবকাশ নেই।
নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, এই চার্টারে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নির্যাতন ও অবজ্ঞা করার প্রবণতা রোধে মাসব্যাপি সেফগার্ডিং কর্মসূচির শুরু হলো। নির্যাতন নানাভাবে হতে পারে। পারিবারিক সহিংসতা, আর্থিক অপব্যবহার, প্রতারণ, আত্ম-অবহেলা, মানব পাচার ইত্যাদি নানা কিছুই নির্যাতন নিপীড়নের আওতায় পড়ে।
তিনি বলেন, সুরক্ষা প্রদানের মাস পালনকে সামনে রেখে আমি বারার বাসিন্দাদের এবিউজ বা নির্যাতন নিপীড়নের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে এবং কোন প্রাপ্ত বয়স্ক বা বাচ্চাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হলে তা রিপোর্ট করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এই সমাজ থেকে সব ধরনের নির্যাতন নির্মূলে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাবো।
টাওয়ার হ্যামলেটস’ সিসিজি এর চেয়ার, স্যার স্যাম এভেরিংটন বলেন, সিসিজি এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্যকর সেফগার্ডিং। বারার সবচেয়ে অসহায় শিশু কিশোর বয়সী ও প্রাপ্তবয়স্কদের যে কোন ধরনের শারিরিক, মানসিক, আর্থিক পীড়ন থেকে রক্ষা করতে আমরা বিভিন্ন পার্টনার বা সহযোগী সংগঠনের সাথে যৌভভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সেফগার্ডিং মান্থ বা মাসব্যাপি নিরাপদে রাখার কর্মসূচি, যা শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। এরি মধ্যে ১ নভেম্বর ওয়াটনী মার্কেট আইডিয়া স্টোর এবং ৮ নভেম্বর ক্রিসপ সিট্রট আইডিয়া স্টোরে রোডশো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০টায় হোয়াইটচ্যাপল আইডিয়া স্টোরে এবং ২৭ নভে“র রোমান রোড আইডিয়া স্টোরে একই ধরনের রোড শো অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কিভাবে শোষন, নিপীড়নের লক্ষণ চিহ্নিত করা যায় এবং কিভাবে রিপোর্ট করা যায় সেসম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা হবে।
এছাড়া ১৬ নভেম্বর শুক্রবার বেলা ১২.৩০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ২২৯ বেথনাল গ্রীণ রোডস্থ (ই২ ৬এবি) প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে আধুনিক দাসত্বের ওপর একটি নাটক মঞ্চায়িত হবে।
এদিকে ২৫ নভেম্বর হোয়াইট রিবন ডে পালনের মাধ্যমে পারিবারিক সহিংসতা বিরোধী ১৬ দিনের এ্যাকশন কর্মসূচি (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) পালন করবে কাউন্সিল এবং তার সকল পার্টনার সংগঠন।