ঝুলে গেলো ‘আরব ন্যাটো’ গড়ার পরিকল্পনা
নেপথ্যে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির খুন
রাশিয়ার প্রভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইউরোপে যেমন গড়ে উঠেছে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন যা সংক্ষেপে ন্যাটো, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ঠেকাতে মহাশক্তিধর সেই দেশটির মদদে ‘আরব ন্যাটো’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
গতকাল (৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আরব দেশগুলোর সেই সামরিক জোট গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরুতেই হোঁচট খেলেও, সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির খুনের মধ্য দিয়ে তা হয়ে উঠেছে জটিলতর।
মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটিজিক অ্যালায়েন্স বা ‘মেসা’ গঠন করে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি মুসলিম দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মিশর এবং জর্ডানের সরকারগুলো চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তোলার যা শিয়া মুসলিম দেশ ইরানকে প্রতিরোধ করতে পারবে।
কিন্তু, সৌদি আরবের নেতৃত্বে এর মিত্র দেশগুলো যখন কাতার বয়কট শুরু করে তখন হোঁচট খায় সৌদি প্রস্তাবিত ‘মেসা’ জোট। আগামী জানুয়ারিতে এই জোটের প্রাথমিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিলো। সেই অনুষ্ঠানে আরব নেতাদের পাশে থাকার কথা ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের একজন কূটনৈতিক রয়টার্সকে জানান যে সেই চুক্তি সাক্ষরের অনুষ্ঠানটি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। কেননা, বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছে এর তারিখ।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তান্বুলে অবস্থিত সৌদি কনসুলেটে সাংবাদিক খাশোগি এক ব্যক্তিগত কাজে এসে খুন হন কনসুলেটের ভেতর। তুরস্কের কর্তাব্যক্তিরা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের জন্যে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি সূত্র জানায়, খাশোগির হত্যার ফলে পানি এতোটাই ঘোলা হয়েছে যে ‘আরব ন্যাটো’ নিয়ে এখন কেউ কথা বলতে চাচ্ছেন না। কেননা, এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যদি সৌদি যুবরাজের সঙ্গে দেখা করেন তাহলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। যা কোনোভাবেই ট্রাম্পের জন্যে সুখকর হবে না।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন- ‘আরব ন্যাটো’-র প্রস্তাবটি এতোটাই বিস্তৃত যে তা কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশ বা ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একজন শীর্ষ উপদেষ্টা রবার্ট ম্যালি বলেন, আসছে জানুয়ারির সম্মেলনে সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হওয়াটা অনেক ঝামেলাপূর্ণ হবে। “এছাড়াও, আমার মনে হয় না যুবরাজ এখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসতে চাইবেন।”
ট্রাম্প প্রশাসনের আরব সামরিক জোট ‘মেসা’-র প্রধান আলোচনাকারী অবসরপ্রাপ্ত মেরিন জেনারেল অ্যান্টনি জিনি বলেন, প্রস্তাবটি ‘এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’ কিন্তু খাশোগির মৃত্যুর প্রভাব কতোটা পড়েছে তা পরিষ্কার নয়।
তবে সম্প্রতি এক ইমেল বার্তায় জিনি রয়টার্সকে জানান, “আমার মনে হয় খাশোগি হত্যার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।”
এদিকে, জোট সঙ্গী কোনো দেশই ‘মেসা’ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।