নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাব ও গুলশানে দুটি পৃথক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০-দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান জোটের সমন্বয়ক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
অন্যদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী সিদ্ধান্তের কথা জানান ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট নির্বাচন নিয়ে আজ যে বক্তব্য তুলে ধরেছে, তা প্রায়ই অভিন্ন। দুটি জোটই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলেছে।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি দুই জোটেরই। দুই জোটের একটি অভিন্ন বার্তা দিয়েছে যে, নির্বাচনে সমতল ক্রীড়াভূমি (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টি করার দাবি দুই জোটেরই।
এ দুটি জোটেরই প্রধান শরিক বিএনপি। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে সামনে রেখেই নির্বাচন করবে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট নেতাদের মূল দাবি হচ্ছে-নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তারিখ অন্তত এক মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি করেছে। সেই সঙ্গে নতুন তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন। কিন্তু এ রকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি থেকে পিছিয়ে আসছে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, তার সঙ্গে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি তারা যুক্ত করছেন। ফখরুল বলেন, আমরা বর্তমান তফসিল বাতিল করে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সে ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জনগণের। এ দাবি পূরণ না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরউল্লাহ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ।
এদিকে গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলের সমন্বয়ক কর্নেল অলি আহমেদ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী সমন্বয় হবে।
জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে অলি বলেন, আমরা আশা করি নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময় ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে অন্তত এক মাস ভোট পেছানোর দাবি জানান অলি আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এল ডি পি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, জাতীয় পার্টির ( কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, জমিতে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাস, মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান এ এইস এম কামরুজ্জামান খান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাস মিয়া প্রধান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, পিপলস লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব হোসেন ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ।