দাবি মন্ত্রী ওমপ্রকাশের
ভারতে মুসলিম শাসকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি
একের পর এক জায়গার নাম বদল হচ্ছে
ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্যে মুসলিম শাসকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। এমনটাই দাবি করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের আলোচিত মন্ত্রী ওমপ্রকাশ রাজভর। তিনি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য এবং সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির (এসবিএসপি) প্রেসিডেন্ট। ওমপ্রকাশ বলেছেন, মুসলিমরা আমাদের দেশে যা দিয়েছে তা অন্য কেউ দেয়নি। মুঘল আমলের স্মৃতি মুছে ফেলা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমরা কি জিটি রোড ছুঁড়ে ফেলে দেব? লালকেল্লা কে বানিয়েছে? তাজমহল কে বানিয়েছে?
তিনি বলেন, অনগ্রসর এবং পিছিয়ে থাকা মানুষ যাতে উন্নয়নের দাবিতে আওয়াজ তুলতে না পারে সেই কারণেই শহরের নাম বদল করছে বিজেপি।
রাজভর বলেছেন, শাসক দল সবার আগে তাদের তিন মুসলমান নেতার নাম বদলাক। কোন তিনজন, সে কথাও বলতে কুণ্ঠা বোধ না করেই রাজভর নাম নিয়েছেন বিজেপি জাতীয় মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন, মন্ত্রিসভার সদস্য মহসিন রাজা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির নাম। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ এবং ফয়েজাবাদের নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা রাখা হয়েছে। এর পরেই রাজভরের এই বিবৃতি সামনে এসেছে। গত বছর উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাই স্টেশনে নাম বদলে দীন দয়াল উপাধ্যায় স্টেশন রাখা হয়। এদিকে বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম শুক্রবার দাবি তুলেছেন মুজফফরনগর জেলার নাম বদলে লক্ষীনগর রাখতে হবে।
শনিবার রাজভর এক সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘সরকার তৈরি হওয়ার পর থেকে এরা কেবলই দলিত, গরিব, পিছিয়ে থাকা মানুষদের ভুল বুঝিয়ে চলেছে যাতে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হতে পারে। যাতে তারা ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা বা চাকরিবাকরির কথা না ভাবতে পারে। মানুষের নজর বদলানোর ব্যাপারে এদের বহুরকম চক্রান্ত রয়েছে। এরা শুধু নাম বদলে চলেছে।’ রাজভর আরও বলেছেন, ‘তোমরা যখন নামই বদলাচ্ছ, তাহলে তোমাদের সঙ্গের লোকদের নাম বদলাচ্ছ না কেন? মোহসিন রাজা, শাহনওয়াজ হুসেন, মুখতার আব্বাস নকভির নাম বদলাও। সেটা করার পর এদিকে নজর দাও। এসব শুধু নৌটঙ্কি।’ এর উত্তরে বিজেপি মুখপাত্র বলেছেন, ‘কিছু রাজনেতিক নেতা আছেন, যারা সংবাদ শিরোনামে থাকার জন্য এ ধরনের গিমিক দিয়ে থাকেন। রাজভর তেমনই একজন নেতা। খুব সম্প্রতি তিনি বলেছেন আসন্ন ভোটে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে লড়বেন তিনি। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে উনি কী ধরনের রাজনৈতিক নেতা।’
এদিকে ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব নাম পাল্টানোর সংস্কৃতির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘বিজেপির সবার আগে অমিত শাহের নাম পাল্টানোর কথা ভাবা উচিত। ওর পদবি ‘শাহ’-এর উৎস পারস্যে। এটা গুজরাতি নয়। এমনকি গুজরাত নামটাও এসেছে ‘গুর্জরত্র’ থেকে। এর শিকড়ও পারস্যে। এটাও পালটাক।’
গতকাল রোববার সকালে আগ্রা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক জগনপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘আগ্রা কথাটার কোনও মানে নেই। কী তাৎপর্য আছে আগ্রা নামটার? আগে এখানে অনেক জঙ্গল ছিল। আগরওয়াল সম্প্রদায়ের লোকেরা থাকতেন এখানে। তাই আগ্রা নামটা সরিয়ে, তা হওয়া উচিৎ ‘অগ্রবন’ বা ‘অগ্রওয়াল’।’
সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হলেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ইরফান হাবিব অমিত শাহের পদবি প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তার মতে, ‘এগুলো সবই সংঘের হিন্দুত্ববাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ।
প্রবীণ নেতা শরদ যাদবও এদিন বলেন, ‘প্রত্যেক শহরের আলাদা ইতিহাস রয়েছে। বিজেপি যা করছে, তার সঙ্গে উন্নয়নের কোনও দূর দূরান্তের কোন সম্পর্ক নেই।