তাবলীগের শীর্ষ মুরব্বি হাজী আব্দুল ওয়াহাবের ইন্তেকাল

লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত

চলে গেলেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি আলমি শুরার প্রধান হাজি আবদুল ওয়াহাব। দীর্ঘ অসুস্থতার পর আজ রোববার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

হাজী আবদুল ওয়াহাব লাহোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহম্মদ ইলিয়াসের সরাসরি সঙ্গী হিসাবে পরিচিত ছিলেন হাজী আবদুল ওয়াহাব। তাকে পাকিস্তানের প্রথম পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়, যিনি তার সমগ্র জীবন তাবলিগ জামায়াতকে দিয়েছিলেন।

লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে আজ বাদ মাগরিব পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাইবেন্ড এর সুন্দর রোড ইজতেমার মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজী আবদুল ওয়াহাবের ওসিয়ত অনুযায়ী সুন্নাত তরিকায় দ্রুত তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। দ্রুত কাফন দাফনের কথা ওসিয়ত করেছিলেন তিনি।

তার জানাযায় পাকিস্তান পাঞ্জাব প্রদেশের স্পিকার পারভেজ এলাহিসহ পাঞ্জাব পরিষদের বহু শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাবলিগ জামায়াতের মুরব্বি হাজী আব্দুল ওয়াহাবের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হাজী আবদুল ওয়াহাব দীনের অনেক বড় খাদেম ছিলেন। তার জায়গা পূরণীয় নয়। ইসলামের খেতমতে তিনি নিজের জান মাল কুরবান করেছেন। মানুষ তাকে চিরকাল স্মরণ করবে।

উল্লেখ্য, হাজী আবদুল ওয়াহাব ছিলেন পাকিস্তানের তাবলিগ জামাতের আমীর। দাওয়াত ও তাবলীগের আলমি শুরার প্রধান। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিদের তালিকায় যার নাম উঠে এসেছে বারবার। সবচেয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা রাখার জন্যেও তার নাম গণনা করা হয় গিনেস ওয়ার্ল্ডে। ২০১৪ এবং ১৫ তে একটি পরিসংখ্যানে বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ মুসলিম ব্যক্তিদের তালিকায় হাজী আব্দুল ওয়াহাব ১০ নম্বরে উঠে আসেন। তাবলিগ জামাতের নেতৃস্থানীয় নেতা হওয়ার কারণে এ তালিকায় তার নাম আসে।

হাজী আবদুল ওয়াহাব ১৯২৩ সালেন ১ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল নাম রাও মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব। তিনি ঐতিহ্যবাহি রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি হাসিল করেন। পরবর্তীতে তিনি দেশভাগের সময় একটি তহসিলদার হিসেবে কাজ করেন। তিনি মজলিস-ই-আহরার-ই-ইসলামের জন্যও কাজ করেছিলেন।

হাজী আবদুল ওয়াহাব তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হজরতজি ইলিয়াস কান্ধলভীর জীবদ্দশায় তাবলিগে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারী নিজামুদ্দিন মারকাজে আসেন। প্রায় ছয় মাস মওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী রহ. এর সোহবতে কাটান।

সে সময় তিনি তাবলিগ জামাতে মেহনত করার উদ্দেশ্যে চাকরি ছেড়ে দেন। মহান এ মণীষা মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী, ইউসুফ কান্ধলভী এবং ইনামুল হাসান কান্ধলভীর সরাসরি সাথী।

হযরতজী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস রহ.’র শিষ্য হলেও তিনি সোহবত লাভ করেছেন হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ., শায়েখ আব্দুল কাদির রায়পুরী রাহ., শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র।

পরবর্তীতে হাজী সাহেবকে পাকিস্তানের তাবলিগ জামাতের আমির, রায়বেন্ড মারকাজের আমির, শুরা প্রধান ও নিজামুদ্দিন মারকাজের আলমী শুরা হিসেবে মনোনীত করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button