কবি গোলাম মোস্তফার অনবদ্য সৃষ্টি ‘বিশ্বনবী’
অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৫-১৯৬৪) তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। একাধারে গীতিকবিতা, শিশতোষ কবিতা, মহাকাব্য, গান, অনুবাদ, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি মূল্যবান অবদান রেখে গেছেন। মুসলিম জাগরণের কবি হিসাবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর রচিত অসংখ্য গান, কবিতা ও প্রবন্ধে তিনি ইসলামী আদর্শ, ভাব-বিষয় ও মুসলিম জাগরণের কথা বলেছেন। তাঁর লেখায় শিশুরা যেমন উদ্বুদ্ধ-অনুপ্রাণিত হয়েছে, বড়রাও তেমনি উৎসাহ লাভ করেছে।
কবি হিসাবে তিনি সমধিক খ্যাতি অর্জন করলেও মননশীল প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব অসাধারণ। তাঁর রচিত চিন্তামূলক গদ্য রচনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলো তাঁর রচিত ‘বিশ্বনবী’। এটি এক অনবদ্য রচনা। অনেকে এটাকে গোলাম মোস্তফার শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে উল্লেখ করেছেন। সমগ্র বাংলা সাহিত্যেই এ গ্রন্থটি একটি অসাধারণ পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ। জনপ্রিয়তার দিক থেকে মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ এবং মোহাম্মদ নজিবর রহমানের ‘আনোয়ারা’ উপন্যাসের সাথে এর তুলনা চলে। ১৯৪২ সালের অক্টোবর-এ বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হবার পর ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। কবির জীবনকালে ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে এর অষ্টম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রত্যেক সংস্করণেই লেখক কিছু কিছু পরিমার্জনা ও সংযোজন করেছেন। ফলে প্রথম সংস্করণের প্রায় পাঁচশো পৃষ্ঠার এ বইটি অষ্টম সংস্করণে গিয়ে ৫৮৭ পৃষ্ঠায় দাঁড়িয়েছে। এটা কোন গতানুগতিক জীবনী গ্রন্থ নয়; লেখকের প্রগাঢ় নিষ্ঠা, গভীর ভক্তি-ভাব, জ্ঞান, পান্ডিত্য, ইতিহাস-চেতনা সর্বোপরি কবিত্বময় সাবলীল ভাষা গ্রন্থটিকে যেমন অনবদ্য করে তুলেছে তেমনি করেছে একে সর্বশ্রেণীর পাঠকের নিকট গ্রহণযোগ্য।
এ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় লেখক উল্লেখ করেছেন “হজরতের জীবনী সংক্রান্ত আরবী-উর্দু-ইংরেজী-বাংলা বহু গ্রন্থ দেখিবার সৌভাগ্য হইয়াছে; কিন্তু সেগুলির মধ্যে একটা বিষয়ের অভাব লক্ষ্য করিয়া নিরাশ হইয়াছি। অনুভূতির আবেদন (Emotional appeal) খুব কম গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়। ফলে অধিকাংশ লেখাই হজরতের জীবনীর সৌন্দর্যলোকে প্রবেশ করিতে পারে নাই। মহাপুরুষের জীবন শুধু ঘটনার ফিরিস্তি নহে; শুধু যুক্তি-তর্কের শয্যাও নহে; সে একটা ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিস্ময় ও অনুভবের বস্তু; তাহাকে বুঝিতে হইলে একদিকে যেমন চাই সত্যের আলোক ও বিজ্ঞানের বিচারবুদ্ধি, অপরদিকে ঠিক তেমনি চাই ভক্তের দরদ, কবির সৌন্দর্যানুভূতি, দার্শনিকের অন্তর্দৃষ্টি, আর চাই প্রেমিকের প্রেম। আশেকে রাসূল না হইলে সত্যিকার রাসূলকে দেখা যায় না।”
পরবর্তী সকল সংস্করণে লেখক কিছু কিছু পরিমার্জন ও সংযোজন করেছেন তার প্রমাণ গ্রন্থটির উত্তরোত্তর কলেবর বৃদ্ধি। গ্রন্থটির তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা থেকেও এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লেখক সেখানে বলেছেন “বিশ্বনবীর আগমনের আগাগোড়া এবার দেখিয়া দিয়াছি। বহুস্থানে ফুটনোট দিয়া অথবা কিছু কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করিয়া আমার ধারণাগুলোকে অধিকতর সুস্পষ্ট করিতে চেষ্টা করিয়াছি। ‘হজরতের বহু বিবাহের তাৎপর্য’ স্বতন্ত্রভাবে আলোচিত হইয়াছে। এতদ্ব্যতীত ‘থিওসফি ও মিরাজ’, ‘ইসলাম কি?’ এবং ‘হজরত মোহাম্মদ কে?’ এই তিনটি নতুন প্রবন্ধ সংযোজিত হইয়াছে।”
কিন্তু লেখক এতেও পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেন নি, তিনি আরো বলেন “এ অনেকটা চূড়ান্ত নয় নির্দেশনা। আরও এমন কথা আছে- যাহা এখনও বলা হয় নাই যাহা এখনও এই অধম লেখকের মনে। চিন্তা ও দৃষ্টি-সীমার বাহিরে পড়িয়া আছে।”
‘বিশ্বনবী’ সাধারণ পাঠকের জন্য নয়; এটা শিক্ষিত বিদগ্ধ পাঠকের উপযোগী। এটা সাধারণ কোন জীবনীগ্রন্থও নয়। জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবনী, রিসালত, কারামত, অন্য সকল মহাপুরুষের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সপ্রমাণ করার জন্য তিনি এ অমর গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। এ সম্পর্কে এ গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকায় লেখক লিখেছেন “এই আলোকের যুগে ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদকে উন্নতভাবে বুঝিবার সময় আসিয়াছে। ‘বিশ্বনবী’তে আছে সেই প্রয়াস। আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞান সম্বন্ধে খানিকটা জ্ঞান থাকা তাই পাঠক-পাঠিকার জন্য অপরিহার্য হইয়া পড়িয়াছে। জড়বাদ, অদ্বৈতবাদ, ডায়ালেকটিকস (Dialectics) ইত্যাদি কাহাকে বলে, স্থান-কাল-পাত্র প্রভৃতি সম্বন্ধে আধুনিক বিজ্ঞানের মত কি, বৈজ্ঞানিকদের লক্ষ্য এখন কোন দিকে এসব বিষয়ে পাঠক-পাঠিকার সজাগ হইতে হইবে। মননশীলতার উৎকর্ষ না হইলে জাতীয় জীবন শক্তিশালী হয় না।”
‘বিশ্বনবী’ প্রণয়নে লেখক যে কী ধরনের পরিশ্রম ও অসাধারণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন এর অষ্টম সংস্করণের শেষে প্রদত্ত এ গ্রন্থ রচনায় সহায়ক গ্রন্থসমূহের তালিকা থেকে তা সুস্পষ্ট। এ তালিকায় বিশ্ববিখ্যাত মোট ৬২টি গ্রন্থের নামোল্লেখ করা হয়েছে। এতে রয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, আল-হাদীস, আরবি-উর্দু-ইংরেজী-বাংলা ভাষায় রচিত বহু খ্যাতনামা সীরাত গ্রন্থ। এমনকি, বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকদের রচিত গ্রন্থ থেকেও তিনি এতে অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-তথ্য ও যুক্তি-তর্কের অবতারণা করে ইসলামের সত্যতা ও মাহাত্ম্য তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। এ ধরনের মাত্র কয়েকটি বইয়ের নাম নীচে উল্লেখিত হলো। এ থেকেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে।
আর জীন জীন্স রচিত: The Mystrious Universe, The Universe Around Us, স্যার জেম্স জীন্স রচিত The New Background of Science, The Growth of Physical Science, জে. ডব্লিউ .এন.সার্লিভ্যান রচিত Bases of Modern Science, Limitations of Science,, আর্থার এডিংটন রচিত The Expanding Universe, The Nature of the Physical World, এ.এন. হোয়াইটহেড রচিত Science and the Modern World, আলবার্ট আইনস্টাইন রচিত The Theory of Relativity, বাট্রার্ন্ড রাসেল রচিত The A.B.C. of Relativity, ই.স্লোসোন রচিত Eassy Lessons in Einstein, আইভর.এল.টাকেট রচিত Evidence for the Supernatural, জর্জ গ্যামো রচিত One, Two, Three… Infinity, বার্নরেড-ব্যানেট-রাইচ রচিত New Handbook of the Heavens,, আর্থার.সি.ক্লার্ক রচিত The Exfloration, হ্যারোল্ড লেল্যান্ড গুড-উইন রচিত Space Travel, জে.এন.লিওন্যার্ড রচিত Flight into Space, ভন ব্রাউন এন্ড হুমিপ্পল রচিত Man on the Moon ইত্যাদি।
এছাড়া, খ্রিস্টান ধর্ম, জোরাথ্রুস্ট, হিন্দু প্রভৃতি প্রাচীন ধর্ম ও সেসব ধর্মের পবিত্র গ্রন্থসমূহ এবং এসব ধর্মের উপর লেখা বহু গ্রন্থ তিনি পাঠ করেন। এ থেকে তাঁর কঠোর পরিশ্রম, সীমাহীন অধ্যবসায় ও গভীর পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে ‘বিশ্বনবী’ সর্বদিক দিয়েই হয়েছে এক অসাধারণ কালজয়ী মহৎ গ্রন্থ। এতে উচ্চাঙ্গের অলংকারবহুল কাব্যময় ভাষা, অপূর্ব ভক্তি-ভাব, ইতিহাস-চেতনা, যুক্তি-তর্ক, মননশীলতা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের একত্র সুসমন্বয় ঘটেছে। ‘বিশ্বনবী’ প্রকাশের পর বহু ভাষাবিদ সুপন্ডিত ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন,
“মৌলভী গোলাম মোস্তফা কবিরূপে সুপরিচিত। তাঁর নব অবদান ‘বিশ্বনবী’। বলাবাহুল্য, ইহা বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদের (সঃ) একটি সুচিন্তিত প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠাব্যাপী জীবন চরিত্র। এই গ্রন্থকার হজরত সম্বন্ধে তাঁর দীর্ঘকালের গভীর চিন্তা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিচয় দিয়েছেন। আমরা এই পুস্তকখানিতে গোলাম মোস্তফা সাহেবকে একজন মোস্তফা-ভক্ত দার্শনিক ও ভাবুকরূপে পাইয়া বিস্মিত ও মুগ্ধ হইয়াছি। ভাষা, তথ্য ও দার্শনিকতার দিক হইতে গ্রন্থখানি তুুলনীয় হইয়াছে।”
‘বিশ্বনবী’ সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহিত্যিক মনোজ বসুর মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “আপনার ‘বিশ্বনবী’ পড়লাম। অপূর্ব! জাতির একটা বড় কাজ করলেন আপনি। আমি ও আমার মত আরও অনেকে ধর্মে মুসলমান না হয়েও হজরতকে একান্ত আপনার বলে অনুভব করতে পারলাম। মহানবীর কাছে পৌঁছবার আপনার এ সেতু-রচনা আপনার তুুলনীয় সাহিত্য রীতি। ভাষা, কবিত্ব-ঝংকার ও ভাব-লালিত্যে অপরূপ মহিমা লাভ করেছে।”
অধ্যাপক আব্দুল হাই এবং সৈয়দ আলী আহসান-এর যৌথভাবে প্রণীত ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’ এ ‘বিশ্বনবী’ সম্পর্কে বলা হয়েছে “গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ (১৯৪২) হজরত মোহাম্মদের (সা) জীবনী এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার ও বিস্তৃতি সম্পর্কে এ শতাব্দীতে রচিত একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বইটি অত্যন্ত সুলিখিত এবং সুখপাঠ্য। কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’তে তাঁর কবি মনের প্রকাশ সুস্পষ্ট এবং রচনাও আবেগ প্রণোদিত। ‘বিশ্বনবী’ গোলাম মোস্তফার সাহিত্যিক জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি।”
‘বিশ্বনবী’র নবম সংস্করণের ভূমিকা (প্রসঙ্গ-কথা) লিখতে গিয়ে বিশিষ্ট কবি-সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান ১লা জানুয়ারী, ১৯৬৭ সালে লেখেন “বাংলা সীরৎ গ্রন্থগুলির মধ্যে কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে অন্য কোনটির ভাগ্যে তা হয়নি। এর ভাব যেমন উচ্চস্তরের, ভাষাও তেমনি প্রাঞ্জল, গতিশীল ও ওজস্বিনী। গোলাম মোস্তফা সাহেব একাধারে সুনিপুণ বাক্শিল্পী, কবি ও ভক্ত। তাই তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ ভক্তির ভাবোচ্ছ্বাস ও কাব্যের লালিত্য গ্রন্থটিকে সুষমামন্ডিত করেছে। তাঁর ভাব ও ভাষায় ভক্তিপ্রবণ বাঙালি অন্তরের মর্মকথাই কাব্যের ললিত রচনায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ভক্ত প্রেমিকের মধুঢালা রচনা-বিন্যাস বইটিকে অসাধারণ জনপ্রিয়তার অধিকারী করেছে।”
‘বিশ্বনবী’র অষ্টম সংস্করণের ভূমিকায় লেখক লিখেছেন: “বিশ্বনবী’র উর্দু অনুবাদ সম্পূর্ণ হইয়াছে। এখন মুদ্রণ ও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। ভারতীয় মুসলমানদের আগ্রহের ফলে বিশ্বনবীর একটি ভারতীয় সংস্করণ কলিকাতা হইতে প্রকাশিত হইয়াছে।”
‘বিশ্বনবী’র সংস্করণের ভূমিকায় ২৭ আগস্ট, ১৯৬৮ তারিখে সৈয়দ আলী আহসান আবার লেখেন “কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ একটি আশ্চার্যরূপ সফল গ্রন্থ। হৃদয়ের আবেগ বিশ্বাস শব্দে যেভাবে সমর্পিত হয়েছে, আন্তরিক অনুভূতির বর্ণনায় যেভাবে উচ্চকিত হয়েছে এবং চিত্তের উপলব্ধিজনিত আনন্দ ভাষার আবহে যেভাবে জাগ্রত হয়েছে তার তুলনা আমাদের গদ্য সাহিত্যে সত্যিই বিরল। যদিও কখনও কখনও কবি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিষ্ঠায় যুক্তির সমর্থন খুঁজেছেন কিন্তু সে সমস্ত যুক্তি উচ্ছ্বাসে সচকিত এবং বিশ্বাসের অবিচল নিষ্ঠায় প্রবহমান।”
‘বিশ্বনবী’ গোলাম মোস্তফার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি এবং সমগ্র বাংলা সাহিত্যে এর সমতুল্য গ্রন্থ অতিশয় দুর্লভ। গোলাম মোস্তফা অন্য কিছু না লিখে শুধু ‘বিশ্বনবী’ লিখলেও বাংলা সাহিত্যে চির অমর ও স্মরণীয় হয়ে থাকতেন, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলা সাহিত্যে রাসুলুল্লাহর (স) জীবনী সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে ‘বিশ্বনবী’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শুধু উল্লেখযোগ্য বললে যথেষ্ট হয় না, সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ হিসাবে সর্বজনপ্রিয়। এ গ্রন্থে বিশ্বের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবন, জীবনের নানা ঘটনা, মোজেজা উল্লেখের সাথে সাথে ইসলামের চির শাশ্বত কল্যাণময় মানবিক আদর্শ, সৃষ্টিরহস্য ইত্যাদি নানা বিষয় অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিষয়ের সাথে সংগতি রেখে লেখক এ গ্রন্থটি লিখেছেন অত্যন্ত অনুসন্ধিৎসূ দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে ভাবের সাথে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-তথ্য ও যুক্তির সমন্বয় ঘটেছে। সমগ্র বিষয়টিই তিনি গভীর আবেগের সাথে বর্ণনা করেছেন। ভাবের সাথে শব্দের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি এক অসাধারণ ব্যঞ্জনা ও কাব্যিক মাধুর্য সৃষ্টি করেছেন। এ গ্রন্থের বিষয় যেমন সুন্দর ও আকর্ষণীয়, এর ভাষা ও বর্ণনাও তেমনি অনন্য। ভাব, বিষয়, ভাষা ও বর্ণনা সব মিলিয়ে ‘বিশ্বনবী’ বাংলা সাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি।