অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তি হিসেবে দ্যা লন্ডন ফেইথ এন্ড বিলিফ এওয়ার্ডে ভূষিত জামান

অসম্ভব তখনই সম্ভব হয়ে উঠে যখন একজন মানুষের থাকে সঠিক উদ্দেশ্য আর দূরদৃষ্টি। তার সততা, সংকল্প এবং দৃঢ়তা এই অসম্ভবকে জয়ে পরিণত করতে সাহায্য করে। এই কর্দমাক্ত চ্যালেঞ্জিং পথটা পাড়ি দিতে প্রয়োজন অনেক ধৈর্য আর চেষ্টা। বিলেতের মাটিতে এই বাধা আর সংগ্রামকে সাথে নিয়ে ব্রিটিশ কমিউনিটিতে বিশেষ অবদানের জন্য এমএফএ জামান দ্যা লন্ডন ফেইথ এন্ড বিলিফ ফোরাম এর ইনস্পারেশনাল ২০১৮ এওয়ার্ডে ভূষিত হন।

লন্ডনের বিখ্যাত দ্যা রয়েল সোসাইটি অব মেডিসিন হলে ২৭ নভেম্বর শীতের সন্ধ্যায় এক জাকজমকপূর্ণ গালা ডিনার পার্টিতে স্যার লেফটেন্যান্ট ক্যান ওলিসা ওবিই তার হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন। জামানের এই বিশেষ অর্জন ব্রিটেনের কমিউনিটি সার্ভিস এবং ভলান্টিয়ার জগতে এক অনন্য উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যা অনেককে উজ্জীবিত করবে জীবনের মোড় ঘুরাতে।

বিগত দুই দশক ধরে দ্যা লন্ডন ফেইথ এন্ড বিলিফ ফোরাম বৃটেনের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন আর একটি সুন্দর সমাজ গঠনে সরকার এবং কমিউনিটি সার্ভিসের সাথে কাজ করছে। প্রায় চব্বিশ হাজার সংগঠন বহু সংস্কৃতির শহর লন্ডনকে সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নিয়ে কাজ করছে। এসব সংগঠন এবং তাদের ভলান্টিয়ারদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি আর অনুপ্রেরণা দিতেই দ্যা লন্ডন ফেইথ এন্ড বিলিফ ফোরাম প্রতিবছর এওয়ার্ড প্রদান করে। এই অনুষ্ঠানে ফিল চ্যাপমেন – ডাইরেক্টর দ্যা লন্ডন ফেইথ এন্ড বিলিফ ফোরাম সহ কমিউনিটির বিশেষ ব্যক্তিবর্গ, এমপি সহ আরো অনেকে।

জামান ব্রিটিশ কমিউনিটিতে এক অনন্য যোগসূত্র স্থাপনের অবদানের জন্য ২০১৮ সালের দ্যা মুসলিম নিউজ আল-বিরুণী এওয়ার্ডে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা মুসলিম এইডের সেরা ভলান্টিয়ার নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সালের দ্যা ক্যালাডরেল কমিউনিটি স্পিরিট অব দ্যা ইয়ার এ্ওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ২০১৭ সালের রমজান মাসে তিনি জো কক্স এমপি ফাউন্ডেশন এন্ড ইডেন প্রজেক্টের এম্বেসেডর হিসেবে ৬১৬ মাইল পায়ে হেটে ইয়র্কশায়ার থেকে লন্ডন আসেন। একমাত্র মুসলিম হিসেবে তিনি বিভিন্ন কমিউনিটি প্রজেক্ট, চ্যারিটি এবং স্থানীয় এমপি, মেয়রদের সাথে মিলিত হন।

ব্রিটিশ কমিউনিটিতে একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন এবং সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত জামানের এই পথটা কখনোই তার জন্য মসৃণ ছিলো না।কারণ বিদেশ বিভুইয়ে যখন একজন মানুষ আসে তখন সবকিছুই তার প্রতিকুলে। ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম আর জীবনযাত্রা নতুনদের কাছে অনেকটা অপরিচিত। আর এটি আরো কঠিনতর হয়ে উঠে যখন আপনি প্রবাসে শুধুই একা; এমনকি কনকনে শীতের মাঝে আপনার মাথা গুজার ঠাইটা পর্যন্ত থাকেনা। পথহারা পথিকের মতো কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে আপনি শুধু একবুক হতাশা নিয়ে হেটে চলছেন। এতকিছুর পরও জামান মহান আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি। কিন্তুজীবন যুদ্ধের একজন সংগ্রামী সৈনিক হিসেবে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যেও নিজের বিশ্বাস, স্বকীয়তা বজায় রেখে তিনি আজ এতদূর আসতে পেরেছেন।তিনি আবার নতুন উদ্যোম আর আশা নিয়ে পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে থাকেন। কারণ বাঘের ভয়ে তো আর নিজের জীবনকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখার যাবেনা কিন্তু এই বাঘকে মোকাবেলা করে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিতে পারাটাই হলো বীরত্বের। একটু একটু করে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ আর আত্ববিশ্বাস আজ তাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে; যা আমাদের জন্য একটি উদাহরণ স্বরূপ।

জামান বলেন, আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই মহান আল্লাহর নিকট কারণ তিনি আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন এই চ্যালেঞ্জিং পথটা পাড়ি দিতে আর স্মরণ করছি সেইসব ব্যক্তি যারা আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। প্রতিটি দিন সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমি অনাকাঙ্খিত মূহুর্তের শংকায় থাকতাম। কি ঘটতে চলছে তা আমি জানতাম না। কিন্তু তারপরও আমি আবার ঘুরে দাড়িয়েছি কিঞ্চিত আশা নিয়ে হয়তো আমি পারবো। কিন্তু এটা কখনোই সহজ ছিলো না। কারণ জীবন সুনামির আঘাতে আমার শেষ বিশ্বাস আর অবলম্বনটুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম। এতকিছুর পরও আমি থেমে থাকিনি। একটু একটু করে হেটে আজ এতদূর আসতে পেরেছি। এই সময়ে আমি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি দেশ, জাতিআর মানবতার জন্য। আমি কোথায় থেকে এসেছি তা কখনো ভুলিনি। আমার প্রতিটি পদক্ষেপ একমাত্র মহান আমার প্রভুকে খুশি করার জন্য। আর তার কাছেই আমি উত্তম প্রতিদান আশা করি। খুবই দুঃখের বিষয় এই সমাজ একজন ব্যক্তিকে তার সামাজিক অবস্থান আর অর্থবিত্তের মাধ্যমে মূল্য দেয়। কিন্তু টাকা-পয়সার মানদন্ডে একজন মানুষকে সম্মান দেয়া ঠিক নয়, যদি না তার মাঝে সততা আর মনুষত্বের ঘাটতি খাকে।

আমাদের দৈহিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য কাজ সবোর্ত্তম উপকরণ আর ভালো কাজ মানুষকে সবসময় খারাপ কাজ-চিন্তা থেকে দূরে রাখে। একজন মানুষের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে এই সততা আর কর্মপ্রচেষ্টা। আজ অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমি এখানে আসতে পেরেছি; যা হয়তো অন্যদেরকে উৎসাহিত করবে কিভাবে জীবনকে পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয় আমার যাত্রা কারণ এই সাফল্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আশা করি আমি শীঘ্রই জয়ের বন্দরে বিজয় এবং শান্তির বার্তা নিয়ে পৌছাবো।

আগামী ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের নির্বাচক জামান লন্ডন অলিম্পিক ২০১২ এর লন্ডন এম্বেসেডর এবং ২০১৫ সালের রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপ ইংল্যান্ডের একজন ভলান্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেইফ এন্ড সেইভ এর ফাউন্ডার জামান ভলান্টিয়ার সেন্টার লুইসামের একজন ট্রাস্টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ৩ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি টিম লন্ডন, নিউহাম ক্রিকেট ক্লাব, ইউনিভার্সেল পিস ফেডারেশন, নিয়ার নেইবার্স, মেট্রোপলিটন এসেক্স ক্রিকেট এসোসিয়েশন এবং বারটস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের একজন সদস্য। জামান ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে বিলেতের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে আসছেন। তিনি পঙ্গু শিশুদের সাহাযার্থে ফান্ড রাইজিংয়ের জন্য লন্ডন ম্যারাথন সহ বিভিন্ন ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button