বুশকে জুতা মারার এক দশক পূর্তি
মো: বজলুর রশীদ: আজ ১৪ ডিসেম্বর। এমন এক দিনে ইরাকের বাগদাদে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিক জায়েদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বুশকে জুতা মেরেছিলেন। আজ সে ঘটনার এক দশক পূর্তি হলো। জুতা মারার দৃশ্যটি তাবৎ মিডিয়ায় ও টেলিভিশনে বারবার দেখানো হয়েছিল। আমাদের অনেকেরই সে দৃশ্য মনে পড়তে পারে। এই এক দশকে জুতা মারার ঘটনা জায়েদিকে আরব বিশ্বে এক ধরনের বীরের আসনে বসিয়েছে।
বাগদাদে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ উপস্থিত ছিলেন। ২৯ বছরের তরুণ মুনতাজার আল জায়েদি তখন ইরাকি আল বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। জায়েদি একটির পর আরেকটি কালো রঙের ১০ নম্বর মোকাসিন জুতা পা থেকে খুলে প্রেসিডেন্ট বরাবর নিক্ষেপ করেছিলেন। বুশ ঝট করে চেহারা সরিয়ে নেয়ায় জুতা তার মুখে লাগেনি। দু’বারই একই অবস্থা। জুতা মারার সময় জায়েদি আরবিতে বলেছিলেন, ‘কুকুর! তোমার বিদায়ী চুমু। এটা ইরাকি বিধবা ও এতিমদের পক্ষ থেকে।’ স্মর্তব্য আট বছরের দুই মেয়াদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষের দিকে বিদায়ী সফর হিসেবে বুশ ইরাক গিয়েছিলেন। ঘটনার সংবাদ ও ভিডিও বিদ্যুৎ গতিতে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনার পরপরই জায়েদিকে নিরাপত্তারক্ষীরা গ্রেফতার এবং মারধর করে। পুলিশের মারে তার দাঁত পড়ে যায়; পাঁজরের হাড় ভাঙে, পায়ে ডাণ্ডার বাড়িতে যখম হয়ে যায়। জায়েদি বলেছিলেন, ‘ওই পায়েই তো জুতা ছিল।’ আরব বিশ্বে ও ফিলিস্তিনে ওই ঘটনা নতুন মাত্রা পেয়েছিল। জায়েদি ও কালো রঙের মোকাসিন জুতা বীর ও বীরগাথায় পরিণত হয়।
ইরাক আক্রমণের আগে প্রেসিডেন্ট বুশ বলতেন, ইরাকে ডব্লিউএমডি বা ওয়েপন অব মাস ডেসট্রাকশন, মানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। তখন বিশ্বের কেউ এ কথা বিশ্বাস করেনি। শুধু তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এর আগুনে তেল ঢেলেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করা থেকে সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর করা পর্যন্ত এমন কোনো অস্ত্রের সন্ধান আর পায়নি। কিন্তু তাতে কী, বুশ বিদায়ী সফরে আবিষ্কার করেন- ইরাকে এমন অস্ত্র রয়েছে, যা ডব্লিউএমডির চেয়েও ভয়াবহ। এ অস্ত্র সিকিউরিটি স্ক্যানিংয়ে বা রাডারে ধরা পড়ে না।
অস্ত্র রাখার জন্য কোনো স্থাপনার দরকার পড়ে না, কোনো গার্ড বাহিনী রাখা কিংবা খরচেরও প্রয়োজন পড়ে না। এ অস্ত্র পরপর দু’বার বা একজোড়া ব্যবহারের সুযোগ থাকে। এখন সমালোচকেরা বলছেন, জায়েদি এমন অস্ত্র নিক্ষেপ করে প্রমাণ করলেন, প্রেসিডেন্ট বুশ আসলে কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তার বক্তব্য কতটা সঠিক! তিনি পাদুকা ‘অস্ত্র’ সম্পর্কে সজাগ ছিলেন বলে আক্রান্ত হননি। এর আরো একটি কারণ রয়েছে। ষাটের দশকে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ জাতিসঙ্ঘে এ অস্ত্র প্রয়োগ করে ধীকৃত হয়েছিলেন। তবে আজ জায়েদি পুরস্কৃত। বাগদাদের সে ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বুশ অবসর নিয়েছিলেন। ওই কিছু সময়ের জন্য তার ওভাল অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি বিশেষ করে সাংবাদিকদের সাথে আর কোনো প্রেস কনফারেন্স করবেন না। তবে জরুরি কোনো কারণ ঘটলে মসজিদের ভেতর বক্তব্য রাখতে পারেন। মসজিদে যারা ঢোকেন তাদের পা খালি থাকে।
এ মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগে তিনি কেন আক্রান্ত হলেন না, এ নিয়ে বাংলাদেশেও অনেক কার্টুন-কমেডি লেখা হয়েছিল। তাকে নাকি প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিভাবে তিনি এমন যুতসই টর্পেডো আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলেন? প্রেসিডেন্ট বুশ নাকি জানিয়েছিলেন, বাসায় অহরহ ফার্স্টলেডি এ মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করে থাকেন, আর তিনি গা বাঁচাতে চেষ্টা করেন বিধায় ভালো প্র্যাকটিস এবং বডি ফিটনেস তৈরি হয়ে গেছে। একটি পশ্চিমা পত্রিকায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- ‘মুসলমানেরা যে সন্ত্রাসী তার প্রমাণ আছে। জুতা কেন মসজিদের ভেতরে নেয়া হয় না, তা প্রমাণ করে, মুসলমানরা পাইকারিহারে সন্ত্রাসী।’ সে ঘটনার পর ইরাকি কেবিনেট মন্ত্রীদের যৌথ মার্কিন-ইরাকি সভায় মন্ত্রীদের খালি পায়ে সভাকক্ষে ঢুকতে হয়েছিল। তবে ইরাক সরকার ওই ফটো প্রচার করতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল।
সাংবাদিকের সেই জুতার দাম ১০ মিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। জায়েদির জুতা মারা ছিল নির্ভুল। সোজা টর্পেডোর মতো ছুটে গিয়েছিল। এ জন্য বোধহয় জুতার দাম আকাশে উঠে যায়। ইরাকি ফুটবল টিমের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর আদনান হামাদ জুতার দাম তুলেছিলেন এক লাখ ডলারে।
অনেক দেশে প্রতিবাদ করতে মিসাইলের মতো টমেটো, ডিম, ক্রিম, কেক অহরহ নিক্ষিপ্ত হয়। এটা উন্নত গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক। ঘটনার সময় ইরাকের অর্থনীতি খুবই খারাপ ছিল। অত পয়সা কোথায় এসব কেনার? তাছাড়া, এসব অস্ত্র নিয়ে সিকিউরিটির বাধা অতিক্রম করা যায় না। সে ক্ষেত্রে স্ক্যানারে ধরা পড়ে না, এমন অদৃশ্য অস্ত্র একমাত্র জুতা।
সাংবাদিকের সেই জুতার দাম ১০ মিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। জায়েদির জুতা মারা ছিল নির্ভুল। সোজা টর্পেডোর মতো ছুটে গিয়েছিল। এ জন্য বোধহয় জুতার দাম আকাশে উঠে যায়। ইরাকি ফুটবল টিমের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর আদনান হামাদ জুতার দাম তুলেছিলেন এক লাখ ডলারে। হামাদ জানান, প্রেসিডেন্ট বুশকে জুতা মারা ইরাকি জনগণের সবার মনের বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরো বলেছেন, বুশ সেই লোক; যিনি ইরাক ও ইরাকি জনগণকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
এক ইরাকি তেল ব্যবসায়ী জানান, যেকোনো মূল্য হোক না কেন, তিনি ওই জুতা কিনবেন। এর মধ্যে ৬০ বছরের এক সৌদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক মিডিয়ায় বলেছেন, জুতা জোড়া না হলেও অন্তত এক পাটি জুতা ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনা দরকার। জুতার প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড নাম পরিবর্তন করে রেখেছে ‘সাংবাদিকের জুতা’। আরেক সিরিজের নাম রেখেছে ‘মুনতাজা সু’। হু হু ইরাকজুড়ে এ জুতার কদর বেড়ে যায়। কোম্পানির জুতা ব্যবসা আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সে জুতা কোথায়? ইরাকি পুলিশ এই জুতা নষ্ট করে ফেলেছে। তাঁবেদার সরকারের ভয় ছিল, কখন না আবার সাংবাদিকের জুতা ‘অমরত্ব’ লাভ করে। কেননা এরই ভেতর জুতার বিরাট মনুমেন্ট তৈরি করে লোকজন সেলফি তুলতে থাকে। স্থানটি তীর্থ ভূমিতে পরিণত হয়।
লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আল জায়েদিকে লিবিয়ার সাহসিকতার জাতীয় খেতাব দেয়া হবে। ২০০ জন আইনজীবী ঘোষণা দেন, তারা সম্মিলিতভাবে আদালতে জায়েদির পক্ষে লড়বেন। আল বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেল জায়েদিকে মুক্ত করার জন্য ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকিকে সম্বোধন করে বারবার ঘোষণা প্রচার করেছিল। তারা দাবি জানান, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ইরাকে কাজ করবে বলে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে। তাই জায়েদিকে আবদ্ধ রাখার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সাংবাদিক জনগণের পক্ষে কথা বলবেন, সেটা কলম দিয়েই হোক আর জুতা দিয়েই হোক। এ ক্ষেত্রে তিনি স্বাধীন। দেশে এমন কোনো আইন নেই যার বলে মতপ্রকাশের জন্য জুতা ব্যবহার করা যাবে না। তবে জায়েদির পরিবারের সদস্যরা শঙ্কার প্রহর গুনছিলেন কখন আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস অপারেটররা তাকে গুলি করে ফেলে দেয়।
জেল থেকে বের হওয়ার পর জায়েদিকে ইরাক ও তাবৎ আরব বিশ্ব দাওয়াত দিয়ে ভোজ খাওয়াতে থাকে। একই সাথে সেই বিখ্যাত উক্তি ‘কুকুর! তোমার বিদায়ী চুমু। এটা ইরাকি বিধবা ও এতিমদের পক্ষ থেকে’ ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে যায়। প্রেসিডেন্টের মাথা নিচু করার ছবি দিয়ে মিসরে দেদার টি-শার্ট বিক্রি হলো। তুরস্কে বানানো হয় শিশুদের ভিডিও গেম। লাখ লাখ মানুষ জায়েদির প্রশংসায় নানা উপকরণ ব্যবহার করতে থাকেন। ইরাকিরা মনে করেন, এতদিন তাদের নেতারা জনগণের জন্য যা করেননি, জায়েদি কয়েক মিনিটেই তা করতে সক্ষম হয়েছেন।
অনেক সমালোচক মনে করেন, সাদ্দাম হোসেনের পর ইরাকে বীর নেতার আকাল নেমে এসেছে। ইরাকি বীরদের নিয়ে বীরগাথা লেখার উপকরণ থাকলেও বীর নেই। জায়েদি এ অভাব পূরণ করেছেন। কবিরা এতে বীরগাথা লেখার ‘গরম’ উপকরণ পেয়ে গেছেন। মার্কিন সেনাদের গুলির মুখে ইরাকিরা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কেউ নেই। বরং অনেকে আছে তাদের তোষণ করা নিয়ে। এই দুর্দিনে জায়েদি যেন বীরত্বের প্রতীক হিসেবে অন্ধকারাচ্ছন্ন ইরাকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে এসেছিলেন। ইরাকের ব্যবসায়ী সালাহ আল জানাবি বলেন, এ যেন বাইবেলে বর্ণিত হজরত দাউদ আ:-এর সাথে দৈত্যের যুদ্ধ।
জায়েদি যেখানে আগে চাকরি করতেন, সেখানকার বস তাকে একটি গাড়ি এবং চার বেডের ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। সবাই আল বাগদাদিয়া টিভি মালিকের সাথে যোগাযোগ করে জায়েদির জন্য হেলথ কেয়ার, টাকাকড়ি- এসব নানা গিফট দেয়ার জন্য নাম রেজিস্ট্রি করেছেন। ইরাকিরা যেন জায়েদিকে উপহার দেয়ার এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। সম্পাদক আবদুল হামিদ সাজ জানান, মরক্কোতে বসবাসরত এক ইরাকি তার কন্যাকে জায়েদির সাথে বিয়ে দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ইরাকে বিয়ে করা খুব খরচের ব্যাপার। নানা অনুষ্ঠান ছাড়াও উপঢৌকন, উপহার কনেকে দিতে হয়। আর বাবাকেও বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হয়। এ কারণে বরপক্ষ ফতুর হওয়ার উপক্রম ঘটে। তাই বরের টাকাকড়ি কম থাকলে ইরাকে কপালে বউ জুটে না। যুদ্ধের এ আক্রার সময়ে বিনা-পয়সায় বউ উপহার পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। মরক্কোর এক নাগরিক সোনার জিন লাগানো ঘোড়া জায়েদিকে উপহার দেয়ার জন্য নাম রেজিস্ট্রি করেন।
বহু ফিলিস্তিনি মহিলা সাংবাদিক জেলে থাকাকালে বিয়ের আবেদন জানিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। টিভি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সম্ভবত এগুলো আবেগপ্রসূত। কেননা টিভি কর্তৃপক্ষ এ রকম আবেদন সামাল দিতে পারছিল না। তারা ঘোষণা দেন, জেল থেকে সে আগে বের হোক, তারপর দেখা যাবে, কে কে তাকে সত্যিই বিয়ে করতে চান। ফিলিস্তিন পশ্চিম তীরের নাবলুসের এক বৃদ্ধ চাষি আহমেদ জৌদা টেলিভিশনে জুতা মারার এবং জায়েদিকে ধরে নেয়ার দৃশ্য দেখে পরিবারের সবাইকে ডেকে কয়েক হাজার ডলার সংগ্রহ করে আইনি লড়াই চালানোর জন্য ইরাকে পাঠাতে নির্দেশ দেন। এ জন্য আহমেদ নিজের ভেড়ার পাল অর্ধেক বিক্রি করে দিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় সিক্ত। অবরোধের দুর্দশা কত কষ্টের, তা আমাদের জানা। জায়েদি যা করেছেন, সব আরবের জন্যই করেছেন। শুধু ইরাকিদের জন্য নয়। আরব বিশ্বের সমস্যার জন্য কেউ দায়ী থাকলে তিনি হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ।’
উল্লিখিত সংবাদ সম্মেলনে বুশের নিজস্ব নিরাপত্তা গার্ড ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্টই এ প্রটোকল পেয়ে থাকেন। তাদের সামনেই ‘সু টপের্ডো’ ছুটে আসতে দেখেও কেউ জায়েদিকে গুলি করেনি। বুশও জায়েদিকে গুলি বা হত্যা করা অথবা জেলে ঢোকানোর জন্য কোনো বক্তব্য না দিয়ে বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। জায়েদির ভাই মায়সাম আল জায়িদ বলেন, ‘তিনি (সাংবাদিক জায়েদি) সবসময় চিন্তা করতেন যেন শহীদ হয়ে মারা যেতে পারেন। জায়েদি ভাবতেন, হয়তো আলকায়েদা বাহিনী বা মার্কিন বাহিনী তাকে হত্যা করছে। সন্ত্রাসীরা জায়েদিকে কয়েক দফা ধরেও নিয়ে গিয়েছিল। মায়সাম বলেন, ‘অবাক হই এটাই ভেবে যে, বুশের গার্ডরা কেন তাকে গুলি করেনি?’ মুনতাজারও কি ভয় পেয়েছিলেন? তিনি জেল থেকে জানান, আর সাংবাদিকতা করবেন না এবং বের হতে পারলে ইরাকি অনাথদের নিয়ে অনাথালয় পরিচালনা করবেন। ২০০৯ সালে তিনি কমান্ডো বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। মার্কিন সেনারা জায়েদিকে দু’বার গ্রেফতারও করেছে। তার ভয় ছিল, কেউ না কেউ তাকে হত্যা করতে পারে। সেই সাংবাদিক ভালো আছেন এবং গত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছিলেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে গার্ডিয়ান পত্রিকায় জায়েদির বড়সড় এক নিবন্ধ ছাপা হয়। যা থেকে কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো। জায়েদি এতে লিখেছেন, ‘আমি মুক্ত; কিন্তু আমার দেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ। বছরের পর বছরব্যাপী যুদ্ধে ১০ লাখ ইরাকি বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। ইরাকে এখন ৫০ লাখ অনাথ, ১০ লাখ বিধবা, অগণিত লাখ লাখ গৃহহীন। দেশের ভেতর ও বাইরে লাখো উদ্বাস্তু। এখন এটিই ইরাকের চিত্র। এর জন্য দখলদার বাহিনী দায়ী। তাদের আক্রমণ-নির্যাতন ভাইকে ভাই থেকে, পড়শিকে পড়শি থেকে পৃথক করেছে; গৃহগুলো পরিণত হয়েছে দাফনের স্থানে। আমার দেশ নির্যাতিত। বাগদাদ জ্বলছে। হাজার হাজার দুদর্শাগ্রস্ত মানুষের ফটো আমার মস্তিষ্কের কোষে অহরহ আঘাত করছে। আবু গারিবের কলঙ্ক, ফালুজা হত্যাকাণ্ড; নাজাফ, হাদিজা, সদর সিটি, বসরা, দিয়ালা, মসুল প্রজ্বলিত হচ্ছে। ইরাক ক্ষতবিক্ষত। অনেক জায়গায় ঘুরেছি, দেশের মানুষের কষ্ট কত তীব্র, তা নিজ চোখে দেখেছি। তাদের দুঃখের দহনে আমি জ্বলেছি। সুযোগ যখন এলো, তখন আর হাতছাড়া করলাম না। ক্রিমিনাল বুশকে যখন জুতা মারলাম, তখন বোঝাতে চেয়েছিলাম, কী পরিমাণ নির্জলা মিথ্যা তিনি বলে চলেছেন; চেয়েছি সেটি ওখানেই প্রত্যাখ্যাত হোক, প্রতিবাদ হোক। কোনো হিরো হওয়ার বাসনা আমার ছিল না, এর চিন্তাও করিনি।’
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার