প্রধানমন্ত্রীর ১৪০ সফরসঙ্গীর মধ্যে জাতিসংঘে ঢুকবে মাত্র ১০ জন !
জাতিসংঘের অধিবেশনের উদ্দেশ্যে আসা প্রধানমন্ত্রীর ১৪০ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে মাত্র ১০ জন জাতিসংঘে প্রবেশ করতে পারবেন। আর বাকিদেরকে অপেক্ষায় থাকতে হবে, তবে তাদের প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা খুবই কম। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতিসংঘ অধিবেশনের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে নানা ঝামেলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধানের সাথে আসা এত বড় ডেলিগেটস বিশ্বের আর কোনো রাষ্ট্র প্রধানের সাথে আসেনি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র কালের কন্ঠকে বলেন, আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকালে সংশ্লিষ্ট ১০ ব্যক্তি অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকতে পারবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ, বেশ ক’জন সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন মিলে ১৪০ জনের ওই তালিকা থেকে কোন ১০ জন সেখানে যাবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ওই কর্মকর্তা জানান, সফরসঙ্গীদের মধ্যে মহাজোটে শরিক নেতারা যেমন আছেন, তেমনি ক্ষমতার ৪ বছর দল ও সরকারে গুরুত্বহীন থাকা উপদেষ্টা পরিষদের দু’জন সদস্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দফায় দফায় সফরসঙ্গীদের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন এবং শেষ পর্যায়ে সিনিয়র নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যদের নাম কাটা ঘষার কাজ এখন পর্যন্ত চলছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ অধিবেশনের পুরো সময় নিউইয়র্কে থাকবেন এমন কর্মকর্তারা ‘কমন’ কার্ড পেয়ে থাকেন। ‘বাংলাদেশ’লেখা ওই কার্ড দিয়ে একজন কর্মকর্তার বদলে অন্যজন প্রবেশ করতে পারেন। তবে সেই কার্ডের সংখ্যাও খুব বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। সব মিলে ৪-৫টা কার্ড ইস্যু হতে পারে। দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা বলেন, অতীতের রেওয়াজ এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের তালিকা চূড়ান্ত হবে। সংখ্যা যা-ই হোক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাওয়া শতাধিক কর্মকর্তা অ্যাক্রিডিটেশন পাচ্ছেন না- এটা নিশ্চিত করেন ওই কর্মকর্তা।
সফরসঙ্গী যারা: প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ। প্রত্যেক ভিভিআইপি সফরের আগের এমন তালিকা সংবলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করার রেওয়াজ রয়েছে। ওই তালিকা ঘেঁটে দেখা যায় সেখানে ১৩৪ জনের নাম আছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মূল সফরসঙ্গী ৯৩ জন (সরকারি খরচে)। ব্যবসায়ী আছেন ৪১ জন (নিজ খরচে)। এ তালিকার বাইরেও আরও ৬ জন জাতিসংঘে গেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দফতরের ২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ ঘোষিত তালিকায় আছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াাহিদ-উজ-জামান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ ও সমাজকল্যাণ সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ৯ জন সংসদ সদস্য। বিশিষ্টজনের এ তালিকায় আরও আছেন- ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুন নেসা ও আলেয়ার সারোয়ার ডেইজি, ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক মিনু রহমান প্রমুখ। মহাজোটের শরিক দলের নেতাদের মধ্যে আছেন- গণ আজাদী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম, জাসদের নেত্রী ও জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি শিরিন আক্তার, জাসদের নেত্রী ও পেশাজীবী নারী সমাজের সাধারণ সম্পাদক আফরোজা হক রীনা। আছেন নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান বিশ্বাস।
ভাষণ ছাড়াও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি সংস্থার মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর পরদিন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। দু’টি বৈঠকেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত এজেন্ডা ছাড়াও বৈঠক দুটিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী প্রতিনিধি দলের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য বৈঠকদ্বয়ের প্রথম পর্বে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেলেও শেষার্ধ ওয়ান টু ওয়ান হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন জাতিসংঘ অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা। ৬ দিনের ব্যস্ত সূচি: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে সফরসঙ্গীদের নিয়ে গতরাতে ঢাকা ছাড়লেও আজ নিউ ইয়র্ক সময় সকাল ৮টায় জনএফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মোটর শোভাযাত্রা করে তাকে নিউ ইয়র্কের পার্ক এভিনিউর গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সফরের পুরো সময় অবস্থান করবেন তিনি। সফরের প্রথম দিনেই কমনওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তিনিও যোগ দেবেন। রাতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশন (আইওএসএসসি)-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংস্থাটির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। আগামীকাল জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের দেয়া সংবর্ধনা সভায় যোগ দেবেন। ওইদিন তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ‘অসমাপ্ত কার্য সম্পাদন: এমডিজির অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সাইডলাইন বৈঠকে অংশ নেবেন। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া এক মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমীর তামিম বিন হামাদ আল-সানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে আয়োজিত ‘লিডারস ডায়লগ: এইচএলপিএফ-ফ্রম ভিশন টু অ্যাকশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অন্যতম মূল বক্তা হিসেবে তিনি বক্তৃতা করবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি আরব ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাক্ষাৎ করবেন। ২৫শে সেপ্টেম্বর এমডিজি অর্জনে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সাধারণ পরিষদের সভাপতির উদ্যোগে বিশেষ গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোসক চেম্বারে ‘গোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ (জিইএফআই) অ্যানিভার্সারি ইভেন্টে’ অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাউসে নৈশভোজেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ২৬শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তিনি ‘আর্মস ট্রেড ট্রিটি (এটিটি) অ্যান্ড প্রটোকল অন এক্সপোসিভ রেমনান্টস অব ওয়ার অব কনভেনশন অন সারটেইন কেমিক্যাল উইপনস’এ স্বাক্ষর করবেন। তিনি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনেও যোগ দেবেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর অধিবেশনে ভাষণ দেয়া ছাড়াও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২৮শে সেপ্টেম্বর বিকালে বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ২৯শে সেপ্টেম্বর সকালে দেশের উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন। দুবাই হয়ে ৩০শে সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় পৌঁছার কথা।