ভোট দেবো কাকে

মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান: ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন। বিরাট প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কাকে ভোট দেবো। জীবনে হয়তো অনেক ভুলত্রুটি করেছি। এবার আর নয়। এবার এমন দল বা লোককে ভোট দেবো, যিনি আমার মহান প্রভুর কাছে অপ্রিয় নন। আমার প্রভু যিনি আমাকে বিনা পয়সায় আলো-বাতাস, অক্সিজেন, মাটি-পানি দিয়ে এবং রাত-দিনের আবর্তন করে গোটা বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন। সামান্য একটা ভোট দিয়ে আমি তাঁর বিরাগভাজন হতে রাজি নই। ভোট পাবেন এমন লোক, যিনি জ্ঞানত প্রভুর মর্জিমাফিক চলেন, যার দল সব সময় প্রভুর আনুগত্য মেনে চলার চেষ্টা করে। আমার রাজনীতি, আমার ভোট, আমার মিছিল, আমার মিটিং ও আমার সভা সব কিছু প্রভুর সন্তুষ্টি ঘিরে যেন আবর্তিত হয়। অর্থাৎ ভোট দিয়ে প্রভুকে খুশি করে জান্নাতে যেতে চাই। মানুষ এখন রাজনীতি ও ইবাদতকে আলাদা করে দেখে। ভোট দেয়া ইবাদতের অংশ। একটা খারাপ লোককে ভোট দিলে যে তার জন্য পরকালে জবাবদিহি করতে হবে, এটা আর কেউ মনে করেন না।

সূরা ইমরানের ২৮ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি কখনো ঈমানদারদের বাদ দিয়ে অবাধ্যদের সাথী বানাতে পারে না, যারা এমন করে তাদের সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই’। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ যেহেতু মুসলমান তাই, যারা সংবিধানের মহান স্র্রষ্টার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে পারবে তাদের সমর্থন দেবো। দুনিয়ায় আল্লাহর কর্তৃত্ব চলবে আর আমাদের সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসে জায়গা হবে না, এটা হতে পারে না। কোনো ব্যক্তি বা দল জিতল সেটা দেখার বিষয় নয়। আমি ভোট নিয়ে আমার মহান প্রভুকে খুশি করতে পারলাম কি-না, এটিই আমার বিবেচ্য বিষয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় আমার ভোট দেয়াকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেবো। সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইস্যু।

যারা সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করবে, মৌলিক অধিকারের ২৬-৪৭ অনুচ্ছেদ পরিপন্থী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না, সাংবিধানিক পদগুলোতে নিরপেক্ষ লোকদের নিয়োগ করবে এবং যারা মানুষের অবাধ ভোট দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি ও সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ করবে, তাদের ভোট দেয়া আমার দায়িত্ব। যারা রাষ্ট্রপতিকে তার দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করবে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে তার শাসন বিভাগ সংক্রাপ্ত পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি তা শুনতে বাধ্য নন এমন বিধান যারা প্রবর্তন করবে। সংবিধানিক সংস্কার হিসাবে ৫৫(১) ও ৫৬(১) অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা বা অভিপ্রায় সংশোধন করে জনসংখ্যানুপাতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া প্রতি কোটি জনসংখ্যার জন্য অনধিক একজন করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিযুক্ত করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি, এমন বিধান যারা সংযোজন করবে। সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী যাতে হতে পারে সে বিষয়ে নজর রাখা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কেবল ফ্লোর ক্রসিংয়ের বিষয়ে বর্তমান বিধান চালু রেখে বাকিটা সংশোধন করবে। যারা বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবে। যারা রায় বিপক্ষে গেলেও এস কে সিনহার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে, তা থেকে দূরে থাকবে। যারা সংবিধান মেনে চলবে।

যারা রাজনীতিতে ব্যক্তি, পরিবার ও দল নয়, মানব কল্যাণকর ইস্যুকে প্রাধান্য দেবে। কোনো দলে এক ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নয়। রাজনীতিতে সিন্ডিকেট, টাকা ও পেশিশক্তি নয়- অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতাকে মূল্যায়ন করবে যারা। একই সময়ে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলীয় প্রধান পদে থাকা বারিত করতে যারা সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করবে। কোনো দল তার দলের কেন্দ্রীয় সর্বজ্যেষ্ঠ ১০ জনের বাইরে কাউকে দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেবে না। সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদের বিধান ছাড়া সব কোটা যারা বাতিল করবে।

বিচারের নামে অবিচার বন্ধ করবে। দুর্নীতি বন্ধ করবে। জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে, তারাই ভোট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন যারা বাতিল করবে। যারা ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রেখে বন্ধ সব গণমাধ্যম চালু করবে। নির্বাচনে পর যারা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন, মোবাইল বিল ও অযৌক্তি খাজনা বা করারোপ করবে না। যারা নিরাপদ সড়কের দাবির মতো যেকোনো গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবারিত করবে। একটা ব্যক্তি ছাত্রলীগ করলে যদি চাকরি পায়, তবে ছাত্রদল বা শিবির করলে যারা ব্যতিক্রম করবে না। যারা সব ধরনের দলীয়করণ, ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, নিয়োগ, মনোনয়ন ও টেন্ডারবাণিজ্য বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে সক্ষম। দেশের সব নিয়োগে যারা মেধা, যোগ্যতা ও সততার মূল্যায়ন করবে। দলীয় সঙ্কীর্ণতা পরিহার করবে।

প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, বিভিন্ন বাহিনী, দফতর ও সংস্থা প্রধান, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও অন্যান্য সচিবসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন কালে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কালো সংস্কৃতি রোধ করবে। সাংবিধানিক সব পদে নিয়োগ দানকালে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে বেশির ভাগের মতামতের আলোকে সাংবিধানিক ‘নিয়োগ কমিশন’ গঠন এবং তার মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা করবে।

নারীদের বিজ্ঞাপনের পণ্য যারা না বানাবে। ছবির ব্যবহার নিয়ে শরিয়তে কিছু বিধিনিষেধ আছে, এ বিষয়ে যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত মানুষের ছবি টানানো বন্ধ করবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচ নির্বাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের চাহিদা ও রাষ্ট্রের সামর্থের আলোকে অর্থ নির্দিষ্ট করবে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে প্রতিপক্ষকে দমনের কাজ থেকে বিরত থাকবে। বিচারের নামে অবিচার বন্ধ করবে। দুর্নীতি বন্ধ করবে। জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে, তারাই ভোট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button