নিউক্যাসেলকে উড়িয়ে দিলো লিভারপুল
ঘরের মাঠ এ্যানফিল্ডে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে আরো এগিয়ে গেছে শীর্ষে থাকা লিভারপুল। এদিকে লিস্টার সিটির কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয়ে আবারো পয়েন্ট হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। গত পাঁচদিনে দ্বিতীয় পরাজয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা সিটিজেনদের থেকে ৬ পয়েন্ট এগিয়ে লিভারপুলের সংগ্রহ এখন ১৯ ম্যাচে ৫১।
বোর্নেমাউথকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সিটিকে এক পয়েন্টে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে টটেনহ্যাম। এদিকে অস্থায়ী কোচ ওলে গানার সোলশুকারের অধীনে ইউনাইটেড আরেকটি জয়ের মুখ দেখেছে। পল পগবার দুই গোলে হাডার্সফিল্ডকে তারা গতকাল ৩-১ গোলে পরাজিত করেছে। শীর্ষ চারে পৌঁছাতে এখনো ইউনাইটেডের আট পয়েন্ট বাকি রয়েছে। এডেন হ্যাজার্ডের গোলে চেলসি ওয়াটফোর্ডকে ২-১ গোলে পরাজিত করে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে থাকলেও ব্রাইটনের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে পঞ্চম স্থানে থাকা আর্সেনাল পয়েন্ট হারিয়েছে। ফলে চতুর্থ স্থানে উঠে আসা হয়নি গানার্সদের।
প্রায় তিন দশক ধরে অধরা থাকা লিগ শিরোপাটা জয় করতে এখনো অনেক দুর পাড়ি দিতে হবে বলেই বিশ্বাস করেন লিভারপুল ম্যানেজার জার্গেন ক্লপ। যদিও আরেকটি সহজ জয়ের সাথে ১৯ লিগ ম্যাচে ১২তম দাপুটে জয়ে লিভারপুল বেশ ভালভাবেই নিজেদের এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বছরের শেষ ম্যাচে তাদের আর্সেনালের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে। এরপরের ম্যাচেই ৩ জানুয়ারি ম্যানচেস্টার সিটি সফরে যাবে অল রেডসরা।
ক্লপ বলেন, ‘ছয় পয়েন্টে এগিয়ে থাকার অর্থ কিছুই নয়। আমাদের পরবর্তী দুটি ম্যাচে আর্সেনাল ও সিটির মুখোমুখি হতে হবে। এটা ভাল যে অন্য দলগুলোর তুলনায় আমরা ৬ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছি। সবসময়ই আমরা এই বিষয়টির উপরই গুরুত্ব দিয়েছি, যেকোন বিরতির আগে যেন নিজেদের অবস্থান শক্ত করে রাখতে পারি। এখন মৌসুমের প্রথম অংশ শেষ হতে যাচ্ছে। এখন আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই।’
গতকাল ম্যাচের শুরুটা ধীরে হলেও ১২ মিনিটে ডিয়ান লোভরেনের ভলিতে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধ ওই এক গোলেই শেষ হয়েছিল। কিন্তু বিরতির ঠিক পরপরই মোহাম্মদ সালাহ ব্যবধান দ্বিগুন করার পর ৭৯ ও ৮৫ মিনিটে জিহার্দান শাকিরি ও ফাবিনহোর গোলে বড় জয় পায় লিভারপুল। ক্লাবের হয়ে এটি ছিল ফাবিনহোর ক্যারিয়ারে প্রথম গোল।
শনিবার ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ৩-২ গোলে পরাজিত ম্যাচের থেকি তিনটি পরিবর্তন করে কাল মূল একাদশ সাজিয়েছিলেন সিটি বস পেপ গার্দিওলা। দলে ফিরেছিলেন সার্জিও আগুয়েরো ও কেভিন ডি ব্রুয়েনে। কিন্তু তারপরেও লিগে চতুর্থ জয় আটকানো সম্ভব হয়নি।
ম্যাচ শেষে গার্দিওলা বলেছেন, ‘আমাদের এটা মেনে নিতে হবে। আমাদের একটি বিষয় উপলব্ধি করতে হবে আরো কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ভাল ফলাফল করে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’
১৪ মিনিটে আগুয়েরোর সহায়তায় বার্নান্ডো সিলভা সিটিজেনদের দারুণ সূচনা এনে দিলেও পাঁচ মিনিট পরেই মার্ক আলব্রাইটন সমতা ফেরান। পুরো ম্যাচে সিটির আধিপত্য থাকলেও ম্যাচ শেষের নয় মিনিট আগে রিকার্ডো পেরেইরা দুর্দান্ত ভলিতে লিস্টারের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচের শেষ মিনিটে ফাবিয়ান ডেলফের লাল কার্ডে সিটির ব্যর্থতার শতভাগই পূরণ হয়েছে।
সিটি যেখানে নিজেদের আরো একবার মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে স্পারসরা কোচ মরিসিও পোচেত্তিনোর অধীনে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলেছে। গত চারদিনে এই নিয়ে ১১ গোলের স্বাদ পেল টটেনহ্যাম। এরপরেও সতর্ক পোচেত্তিনো বলেছেন, ‘আমরা অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছি। কিন্তু তারপরেও লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটিই শিরোপার প্রকৃত দাবীদার।’
এভারটনকে রোববার ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করার পর ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন, সন হেয়াং-মিন ও লুকাস মৌরার গোলে ওয়েম্বলিতে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৬১ মিনিটে হ্যারি কেনের গোলের নয় মিনিট পর দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা সন দ্বিতীয় গোল করলে বড় ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্পারসরা।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সোলশাকার আরো একবার পগবার উপর মূল একাদশে আস্থা রেখেছিলেন। আর ফ্রেঞ্চ তারকা দারুনভাবে কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। নেমাঞ্জা মাটিচের ২৮ মিনিটে গোলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। গত সপ্তাহে কার্ডিফে মূল একাদশে ফিরেই দলের ৫-১ গোলের জয়ে তিনটি গোলে সহায়তা করা পগবরা কাল নিজেই করেছেন দুই গোল। ৬৪ ও ৭৮ মিনিটে পরপর দুই গোল করে পগবা নিজেকে প্রমাণ করতে ভুল করেননি।
ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড বস বলেছেন, আমি জানি এটাই পগবা। সে সবসময়ই একজন হাসিখুশি ছেলে। ম্যান ইউ’র পক্ষে খেলতে হলে এমনই হতে হবে। অবশ্যই এখানে দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন রয়েছে। তবে তাকে দলে পেয়ে আমি দারুণ খুশি।
ব্লুজদের হয়ে হ্যাজার্ডের শততম ও ১০১তম গোলে ওয়াটফোর্ডে বিজয় উৎসব করেছে চেলসি। আর এতেই গানার্সদের থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থান আপাতত নিশ্চিত হয়েছে চেলসির।