হাজার গল্পের রচয়িতা রাবেয়া খাতুন
রহিমা আক্তার মৌ: রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে জন্মেও নারীর অবরুদ্ধতার অবসান ঘটিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন যিনি, তিনিই সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে অল্প বয়সেই লেখনীর সূচনা ঘটান সাহিত্যে। সাহিত্য-অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন নিজের অবস্থান। বলছি একুশে পদক, একাডেমি পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার পাওয়া লেখিকা রাবেয়া খাতুন এর কথা। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর মামার বাড়ি তৎকালীন ঢাকার বিক্রমপুরে পাউসার গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারের অলি-গলির দুর্বান্ন অন্বেষণেই কেটেছে তাঁর শৈশবকাল। পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত ষোলঘর গ্রামে। বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন। ১৯৪৮ সালে আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাস করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় লেখালেখির জন্য ছোটবেলা থেকেই মেনে নিতে হয়েছে বকুনি আর তিরস্কার। লেখাপড়া ভালো লাগেনি তাঁর কোনওদিনই। এসএসসি পাশ করার পর আর আগ্রহ ছিল না নিজের। পরিবারও আর জোর করেনি।
বড় বোনের কাছে ছোটবেলায় গল্প শুনতে খুব ভালো লাগত। গল্প শোনার অভিজ্ঞতা তার লেখালেখিতে অনেক অবদান রেখেছে। সেখান থেকেই গল্পকে ভালেবাসা। ধীরে ধীরে নিজের আগ্রহ তৈরি হয় গল্প লেখাতে। বিভিন্ন পত্রিকায় ডাক মারফত লেখা পাঠানো শুরু পঞ্চাশের দশকেই। ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। ১৯৪৮ সালে প্রগতিশীল সাপ্তাহিক ‘যুগের দাবী’তে ছাপা হয় ছোটগল্প ‘প্রশ্ন’।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক, চিত্র পরিচালক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি রাবেয়া খাতুুন। সামাজিক ও পারিবারিক তথাকথিত প্রথা এবং গন্ডি পেরিয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন সাহিত্য রচনায়। মজার কথা তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘নিরাশ্রয়া’ এখনো অপ্রকাশিত। বিয়ে প্রসঙ্গে রাবেয়া খাতুুন বলেন-
‘জাহানারা ইমামের পত্রিকা খাওয়াতীন এ কাজ করতাম। এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম মহিলা পত্রিকা। জাহান আপার সঙ্গে প্রেস শো দেখতে গিয়ে দূর থেকে দেখেছি সম্পাদক ফজলুল হককে। বাসার পরিস্থিতি খুব খারাপ। বিয়ের কারণে আমার ওপর পরিবার রীতিমতো বিরক্ত। কোনো পাত্রই পছন্দ হয় না। আত্মীয় পরিজনরা হাসাহাসি করে, বলাবলি করে ও হবে এ দেশের বড় লেখিকা। আর ওর জন্য আকাশ থেকে আসবে রাজপুত্র। সত্যি এলো রাজপুত্র, তবে আকাশ থেকে নয়, জমিন থেকে ফজলুল হক আর কাইয়ুম চৌধুরী (এখন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী)। তখন জুটি হিসেবে সাইকেলে ঘোরাফেরা করে। প্রথম জন চালক আর দ্বিতীয় জন রডে বসা আরোহী। কাইয়ুম আমার বাড়ি চেনে। এক বিকেলে দু’জন এসে বাবার সঙ্গে আলাপ করে গেল। বাসা থেকে আমার ওপর এলো প্রবল চাপ। এরা কেনো এলো। আমি তো আসলেই কিছু জানি না। চিন্তাও করিনি এমন দুঃসাহস। জাহানারা ইমামের সঙ্গে প্রেস শো দেখতে গেছি প্রবোধ স্যান্নালের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ মায়া সিনেমা হলে। এক ফাঁকে ফজলুল হক আমার সঙ্গে কথা বলতে এলো। প্রস্তাব রাখল আমি যদি রাজি থাকি তবে বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে তার আত্মীয়স্বজন। টল, স্মার্ট, সুদর্শন এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত যুবক। আপত্তি নেই জানিয়েছিলাম। দু’সপ্তাহের মধ্যে কাবিন হয়ে গেল। বাবা-কাকার মত ছিল না। চেনা জানা নেই, দূরদেশ (?) বগুড়ার ছেলে। কিন্তু ভীষণ খুশি হলো আমার মা। হকের বাড়িতে এর বাবা ভাইবোন সবাই বেজায় খুশি। বেজার শুধু ওর মা কারণ তিনি স্থানীয় ধনী কন্যাকে ঠিক করে রেখেছিলেন। বায়ান্ন সালের তেইশে জুলাই আমাদের বিয়ে হয়। ঢাকার সিক্কাটুলীতে বাসা নেয়া হলো। আমার বয়স তখন উনিশ, রান্নাবান্নাও জানি না। অবশেষে বাবুর্চি এলো। দশটায় খেয়েদেয়ে দু’জনে অফিসে চলে যাই। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের একটা বিশাল বাড়ির দোতলায় সিনেমা পত্রিকার অফিস। পত্রিকা চালায় মূলত তিনজন। ফজলুল হক। ওর ছোট ভাই ফজলুল করীম (এখন বিশ্ববিখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ) ও কাইয়ুম চৌধুরী। ওদের সাথে যুক্ত হলাম আমি। পরিচিত হতে লাগলাম উদীয়মান সাহিত্য প্রতিভাদের সঙ্গে। এক কথায় সাহিত্যাঙ্গনের স্বপ্নের মানুষদের সঙ্গে।’
চার সন্তানের জননী রাবেয়া খাতুুন, চার সন্তান হলেন ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী। ১৯৬৩ সালের ১ জুলাইতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই মধুমতী। একজন সাহিত্যিককে এমনিতেই সমাজের প্রতিকূলে সাঁতার কাটতে হয়। সেখানে শতাব্দীর চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকের পটভূমিতে একজন নারীর পক্ষে সেই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমেয়।
নারীদের জন্যে সামাজিক বাধাবিপত্তি অতীতে ছিলো, এখনো আছে। এ দেশের মহিলা সাহিত্যিকদের চলার পথ নানা কারণে দুর্গম। লেখালেখির ক্ষেত্রে পরিবার থেকে উৎসাহের বদলে পেতে হয় অবহেলা এবং সামাজিকভাবে চোখ রাঙানি। রাবেয়া খাতুনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তখনকার বেশকটি পত্রিকায় নিয়মিত গল্প প্রকাশ হচ্ছিল তাঁর, বিষয়টা বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে জানাজানি হলে তারা ইয়া লম্বা চিঠি পাঠালেন তাঁর বাবার কাছে। লেখা থাকে-
“আপনার পরিবারের একটি কন্যার হস্তাক্ষর বাইরের পর পুরুষেরা দেখিতেছে। উভয় খানদানের জন্য ইহা অত্যন্ত অসম্মান এবং লজ্জার ব্যাপার। বিষয়টির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাইতেছে-।”
লেখালেখির পাশাপাশি এক সময় শিক্ষকতা করেছেন রাবেয়া খাতুুন, করেছেন সাংবাদিকতাও। ইত্তেফাক, সিনেমা ও খাওয়াতীন পত্রিকায়, ছাড়াও পঞ্চাশ দশকে বের হতো তাঁর সম্পাদনায় ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তিনি বাংলা একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ও টেলিভিশনের ‘নতুন কুড়ির বিচারক’, বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্কের জুরি বোর্ডের বিচারক ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আরও যুক্ত আছেন বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে। সাংবাদিকতায় আসা প্রসঙ্গে রাবেয়া খাতুুন বলেন-
‘আমি যখন সাংবাদিকতায় আসি তখন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন। ফজলুল হক, কাইয়ুম চৌধুরী, জহির রায়হান সহ হাতেগুনা কয়েকজন।’
পঞ্চাশের দশকে যে লেখকদের সক্রিয়তা বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে, রাবেয়া খাতুুন তাঁদের অন্যতম। মুসলিম নারীদের জীবন যখন অনেক বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দী, ঠিক তেমন সময়ই রাবেয়া খাতুুন আত্মপ্রকাশ করেন একজন লেখক হিসেবে। লেখাই যাঁর জীবন ও ধ্যানজ্ঞান। রাবেয়া খাতুুন সমকালীন বাংলা সাহিত্য এবং এই সময়ের বাঙালি লেখকদের আলোকিত ও আলোচিত নাম।
তার সাহিত্য সৃষ্টিতে বহুমাত্রিকতা, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের মনের অন্তঃচেতনার জাগরণ, নির্লিপ্ততা, শিল্পের জন্য শিল্প, মানুষের জন্য শিল্প, সাহিত্যের বস্তুতান্ত্রিকতা, নারী জাগরণ, সমাজের ব্রত অন্তজ আবহমান বাংলা জীবনের ছবির সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের নৈসর্গ চেতনা মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে তার সৃষ্টিকর্মে। আর এ কারণেই সমকালীন সাহিত্যে আলোচিত ও প্রাসঙ্গিক নাম রাবেয়া খাতুুন। রাবেয়া খাতুুন অনেকটা উদার পরিবেশে নিজের স্বাধীনতা নিয়ে শুধু বেড়ে ওঠেননি, তৎকালীন মুসলিম সমাজের একজন নারী হিসেবে অগ্রসরমান থেকে শিল্প-সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করেছেন বেশ আগ্রহ সহকারে।
রাবেয়া খাতুুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’। ২০১১ সালে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতী’ অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মধুমতী’। এ ছাড়া অভিনেত্রী মৌসুমী ২০০৩ সালে তার লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’। তার কাহিনী নিয়ে ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম কিশোর চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। রেডিও ও টিভি থেকে প্রচারিত হয়েছে তাঁর রচিত অসংখ্য নাটক। তার প্রথম উপন্যাস মধুমতী তাঁতী সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবনের দু:খগাঁথা নিয়ে রচিত। পরবর্তীতে এই উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি ও ইরানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে রাবেয়া খাতুনের অনেক গল্প।
রাবেয়া খাতুনের প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস এবং স্মৃতিকথা মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ফেরারী সূর্য, বায়ান্ন গলির এক গলি, দিবস রজনী, নীল নিশীথ, জীবনের আর এক নাম, ই ভরা বাদর মাহ ভাদর, মেঘের পরে মেঘ, একাত্তরের নয়মাস, বাগানের নাম মালনিছড়া, রমনা পার্কের পাঁচ বন্ধু, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, শঙ্খ সকাল ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। প্রায় এক হাজার ছোটগল্প লিখেছেন তিনি।
রাবেয়া খাতুুন ভ্রমণ করেছেন বহুদেশ, এগুলো হলো- ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, জাপান, নেপাল, ভারত, সিকিম, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিসর, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তাসখন্দ, মারিশাস, মালদ্বীপ ও ইত্যাদি। এছাড়াও টরেন্টো ইউনিভার্সিটি বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে ঘুরে এসেছেন কানাডা।
তিনি শুধু ভ্রমণ করেন নি, ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন, এগুলো হলো- ‘হে বিদেশী ভোর’, ‘মোহময়ী ব্যাংকক’, ‘টেমস থেকে নায়েগ্রা’, ‘কুমারী মাটির দেশে’, ‘হিমালয় থেকে আরব সাগরে’, ‘কিছুদিনের কানাডা’, ‘চেন্নি ফোঁটার দিনে জাপানে’, ‘মমি উপত্যকা’, ‘ভূস্বর্গ সুইজারল্যান্ড’ ইত্যাদি। ‘একাত্তরের নয় মাস’ ও ‘স্বপ্নের শহর ঢাকা’ নামের দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ রয়েছে রাবেয়া খাতুনের।
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় রাবেয়া খাতুনের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ। সাহিত্যকর্ম বিবেচনায় তিনি একদিকে গ্রামভিত্তিক মধ্যবিত্ত সমাজের রূপান্তরের রূপকার এবং অন্যদিকে নাগরিক মধ্যবিত্তের বিকাশ ও বিবর্তনের দ্রষ্টা। সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর নিজস্ব জীবনবোধ ও অন্তর্দৃষ্টিমূলক প্রতিভার সমন্বয়। ছোটগল্প, ভ্রমণসাহিত্য, স্মৃতিকথামূলক রচনা, শিশুসাহিত্যে তাঁর স্বকীয়তা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ও গল্প রচনায় তাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সংখ্যার দিক থেকে রাবেয়া খাতুনের গ্রন্থের পরিমাণ বিপুল। মোটা দাগে তাঁর রচনাসম্ভারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। একদিকে তিনি ঔপন্যাসিক, অন্যদিকে ছোট গল্পকার; শিশুসাহিত্যের লেখক হিসেবেও তিনি সমাদরণীয়। ভ্রমণ যেমন তাঁর শখের বিষয়, তেমনি তা আবার সাহিত্যেরও উপকরণ! রাবেয়া খাতুনের প্রতিভারও সবচেয়ে উজ্জ্বল ও জ্বলন্ত অধ্যায় হচ্ছে উপন্যাসগুলো। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম ছিল নিরাশ্রয়া (অপ্রকাশিত), বিদায় (অপ্রকাশিত) অশোক-রেবা (অপ্রকাশিত), ‘মধুমতী’, সাহেব বাজার’, ‘অনন্ত অন্বেষা’, ‘রাজারবাগ শালিমারবাগ’, ‘মন এক শ্বেতকপোতী’, ‘ফেরারী সূর্য’, ‘অনেকজনের একজন’, ‘জীবনের আর এক নাম’, ‘দিবস রজনী’, ‘সেই এক বসন্তে’, ‘মোহর আলী’, ‘নীল নিশীথ’, ‘বায়ান্ন গলির এক গলি’, ‘পাখি সব করে রব’, ‘নয়না লেকে রূপবান দুপুর’, ‘মিড সামারে’, ‘সে এবং যাবতীয়’, ‘হানিফের ঘোড়া’, ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র’, ‘এই বিরল কাল’, ‘চাঁদের ফোটা’, ‘নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস’, ‘বাগানের নাম মালনীছড়া’, ‘প্রিয় গুলসানা’, ‘বসন্ত ভিলা’, ‘ছায়া রমণী’, ‘সৌন্দর্য সংবাদ’, ‘হৃদয়ের কাছের বিষয়’, ‘ঘাতক রাত্রি’, ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’, ‘মালিনীর দুপুর’, ‘রঙিন কাচের জানালা’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘যা কিছু অপ্রত্যাশিত’, ‘দূরে বৃষ্টি’, ‘সাকিন ও মায়াতরু’, ‘রমনা পার্কের পাঁচ বন্ধু’, ‘শুধু তোমার জন্য’, ‘ঠিকানা বিএইচ টাওয়ার’, ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’, ‘প্রথম বধ্যভূমি’, ‘কমলিকা’, ‘দশটি উপন্যাস’, ‘শঙ্খ সকাল প্রকৃতি’, ‘যা হয় না’, ‘আকাশে এখনো অনেক রাত’, ‘উপন্যাস সমগ্র’, ‘স্বনির্বাচিত উপন্যাস’, ‘জাগতিক, স্বপ্নে সংক্রামিত’, ‘ও কে ছিল’, ‘মহাপ্রলয়ের পর’, ‘নির্বাচিত উপন্যাস’, ‘শহরের শেষ বাড়ি’, ‘মাইগো’, ‘এই দাহ’, ‘রাইমা’ ইত্যাদি।
সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাবেয়া খাতুুন ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে একুশে পদক পান। ১৯৯৪ সালে পান বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, ১৯৯৬ সালে জসিমউদ্দিন পুরস্কার, শেরে বাংলা স্বর্ণপদক, ও শাপলা দোয়েল পুরস্কার। নাটকের জন্য টেনাশিনাস পুরস্কার পান ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৮ সালে পান ঋষিজ সাহিত্য পদক, ও অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে পান লায়লা সামাদ পুরস্কার ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার। মিলেনিয়াম এ্যাওয়ার্ড পান ২০০০ সালে, টেলিভিশন রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড ২০০১ সালে। বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড ও শেলটেক পদক পান ২০০২ সালে। চলচ্চিত্রের জন্য ২০০৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার পান। সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাবেয়া খাতুুনকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়।