কাশ্মিরে ‘দয়ার প্রাচীর’

ভারতশাসিত কাশ্মিরে ইতোমধ্যেই কামড় বসাতে শুরু করেছে তীব্র শীত। বেশির ভাগ লোক এখন ঐতিহ্যবাহী পিরহান পরিধান করে শীত ঠেকানোর চেষ্টা করছে। ৬০ বছর বয়সী আলি মোহাম্মদ কাশ্মিরের শ্রীনগরের একজন বাসিন্দা। শ্রীনগরে পথ চলার সময় একটি দেয়ালে ঝুলে থাকা একটি সোয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণ করে দরিদ্র আলি মোহাম্মদের। কাছে থাকা একটি ছেলেকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, বাবা এ সোয়েটারটির জন্য কত দাম দিতে হবে।

তাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটি জানাল, চাচা এটি বেচার জন্য নয়, তবে যার প্রয়োজন আছে সে এমনিতেই তা নিয়ে যেতে পারেন। হতবাক আলি মোহাম্মদ তখন বলেন, তাহলে আমার চেয়ে বেশি প্রয়োজন আর কার হতে পারে? অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, আমার তিনটি মেয়ে। অথচ আমার আয়ের কোনো পথ নেই। খুবই গরিব আমি। শেষ পর্যন্ত আলি সেখান থেকে একটি জ্যাকেট, কয়েকটি সোয়েটার ও জুতা নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে যান। বলে যান, এটি আমাদের মতো গরিবের জন্য খুবই ভালো একটি ব্যবস্থা। যারা এ কাজটি করেছে, আল্লাহ তাদের ভালো করুন।

তরুণদের একটি দল ইরান ও তুরস্কের এ ধরনের কাজ থেকে প্রেরণা নিয়ে কাশ্মিরে শুরু করেছিল ‘ওয়াল অব কাইন্ডনেস’ বা দয়ার প্রাচীর। আয়োজকদের একজন আবরার আলি বলেন, কাশ্মিরে এখন তীব্র শীত চলছে। কিন্তু অনেক অভাবী লোক রয়েছেন, যাদের গরম কাপড় কেনার মতো সামর্থ্য নেই। আবরার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়টি প্রচার পাওয়ার পর অনেক লোকই এতে অংশ নিয়েছেন। আমরা কাশ্মিরের বিভিন্ন অংশে এমন কার্যক্রম শুরু করার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি মনে করি আমরা এতে সফল হয়েছি।

তীব্র শীত
কাশ্মিরে এখন তীব্র শীত চলছে। স্থানীয়ভাবে ছিলাই কালান নামে পরিচিত এই শীত মূলত শুরু হয় ডিসেম্বরের ২১ তারিখ থেকে, যা শেষ হয় জানুয়ারির শেষপর্যায়ে গিয়ে। তাপমাত্রা সে সময়ে মাইনাস আট ডিগ্রিতে নেমে যায়। স্বাভাবিকভাবেই তখন তুষারপাত হয়।

জম্মু ও কাশ্মির সরকারের করা ২০১৪-১৫ সালের অর্থনৈতিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল কাশ্মিরের ২১ দশমিক ছয় শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। স্বাভাবিকভাবে তাদের বেশির ভাগই শীতকালীন পোশাক কেনার সামর্থ্য রাখেন না। এ অবস্থায় শুরু করা হয়েছিল দয়ার প্রাচীরের এ কার্যক্রম। এর সফলতার পরিপ্রেক্ষিতে বুদগাম, বারামুল্লাহ ও অনন্তনাগেও এ ধরনের কার্যক্রম চালু হয়েছে।

অনন্তনাগের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, আমরা অনুভব করছি মানবতার সেবায় এটি একটি ভালো কার্যক্রম। প্রসিদ্ধ কবি জারিফ আহমদ জারিফ বলেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করা উচিত যেখানে ছাত্রসহ বাইরের লোকজনকে বই, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিস দেয়া হবে।

শ্রীনগরের সাংবাদিক ইউসুফ জামিল বলেন, ২০১৪ সালে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দেখা গেছে, মানুষ একে অপরকে হৃদয় খুলে সাহায্য করছেন। এর ধারাবাহিকতায় দয়ার প্রাচীর একটি উৎসাহব্যাঞ্জক পদক্ষেপ। কিন্তু অনেক মানুষ দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও সেখানে গিয়ে সবার সামনে এভাবে জিনিস আনতে পারবেন না। তবে এ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শ্রীনগরসহ পুরো কাশ্মিরেই এ ধরনের দেয়াল আরো স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button