দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করতে চায় ব্রিটেন

সিঙ্গাপুর থেকে সামরিক উপস্থিতির অবসান ঘটানোর পর ব্রিটেন আবারো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে। একই সাথে তারা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও ঘাঁটি স্থাপন করারও চিন্তাভাবনা করছে। টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন বলেন, তারা ১৯৬৮ সালের ‘ইস্ট অব সুয়েজ’ কৌশল থেকে ফিরে যেতে চায়। ওই কৌশলের অধীনে সে সময় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, পারস্য উপসাগর ও মালদ্বীপ থেকে ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছিল ব্রিটেন। গ্যাভিন বলেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান এলাকায় দু’টি নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলতে চাইছে ব্রিটেন। সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা এটি পরিষ্কার করতে চাই যে, এ নীতিটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ব্রিটেন আবারো একটি বৈশ্বিক জাতিতে পরিণত হবে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সিঙ্গাপুর বা ব্রুনাইতে এ ঘাঁটি হতে পারে। অন্য দিকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মন্টসেরাত বা গায়ানায় এ ঘাঁটি স্থাপন করা হতে পারে কয়েক বছরের মধ্যেই। তবে এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীর কোনো উদ্ধৃতি উল্লেখ করেনি টেলিগ্রাফ। এ অঞ্চলে সিঙ্গাপুরের সেম্বাওয়াঙ শিপইয়ার্ডে জাহাজ মেরামত ও সরবরাহ সহায়তা সুবিধা পেয়ে থাকে ব্রিটেন। মূলত দেশটির রাজকীয় জাহাজগুলো এ অঞ্চলে থাকাবস্থায় এ সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। তবে গবেষকেরা বলছেন, ব্রিটেন এ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে সেটিকে স্বাগত না জানানোরই সম্ভাবনা বেশি।

এস রাজরত্ন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজের সমুদ্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কোলিন কোহ বলেন, সিঙ্গাপুর এ ধরনের সামরিক উপস্থিতির প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন নৌবাহিনীর এ ধরনের প্রস্তাবও তারা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তবে তাদের সুবিধাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা সম্মতি দিয়ে থাকে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ-এশিয়ার ঊর্ধ্বতন ফেলো উইলিয়াম চোঙ ব্রিটেনের নতুন এ পদক্ষেপকে খুবই যৌক্তিক, ন্যায্য ও বাস্তবিক প্রসার হিসেবেই দেখছেন। তবে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে খোলাখুলিভাবে ‘ঘাঁটি’ শব্দ ব্যবহারের পক্ষপাতী নন তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর ব্রিটেন বা অন্য কোনো দেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ নয়। এ অঞ্চলে অস্থায়ী মার্কিন উপস্থিতিকে উপস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটেন যে প্রস্তাবনা তৈরি করেছে, যদি সঠিকভাবে তা উপস্থাপন করা হয় তাহলে তা গ্রহণ করা সিঙ্গাপুরের জন্য অযৌক্তিক নাও হতে পারে।

১৯৬৮ সালে ব্রিটেন সিঙ্গাপুর থেকে তাদের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নেয়। আর সর্বশেষ ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ হিসেবে এইচএমএস মারমেইড ১৯৭৫ এ অঞ্চল ত্যাগ করে চলে যায়। এরপর ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ব্রুনাইয়ে স্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। আইএসইএএস-ইউসুফ আইজ্যাক ইনস্টিটিউটের শীর্ষস্থানীয় ফেলো আইয়ান স্টোরে বলেন, আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশ স্থায়ীভাবে ব্রিটেনকে সামরিক সুবিধা দিতে রাজি হবে না। কারণ এ ধরনের ঘাঁটিগুলো অভ্যন্তরীণভাবে বিতর্কিত। পাশাপাশি এগুলো এ অঞ্চলে চীনের ক্ষুব্ধতাকে বাড়িয়ে তুলবে।

ব্রিটেন ২০১৮ সালে আগের চেয়ে এশিয়ায় তাদের উপস্থিতি অনেক বাড়িয়েছে। এমনকি তারা এ অঞ্চলে তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে, যা ছিল ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে ড. স্টোরে ব্রিটিশ এ উপস্থিতি টেকসই হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী অর্থনৈতিক সমস্যা, নর্থ আটলান্টিক অঞ্চলে রুশ সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি ও ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর মাত্র ১৯টি ফ্রিগেট এবং ডেস্ট্রয়ার আছে, আর এ কারণে তিনি এ সন্দেহ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button