অসম্ভবকে সম্ভব করা দুই বোন
জয়নব আর জান্নাত রহমান (১৬)। বৃটেনে বসবাসকারী এই দুই বোন সব অসম্ভবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে আছেন। তারা জমজ বোন। মায়ের গর্ভে তারা ছিল জোড়া লাগা অবস্থায়। ওই সময়ই চিকিৎসকরা গর্ভপাত করে তাদেরকে ফেলে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, এ শিশুদের জন্মের পর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দশ লাখের মধ্যে এক ভাগ। কিন্তু সেই ভবিষ্যতবাণী মিথ্যে হয়ে গেছে। বেঁচে আছে জয়নব আর জান্নাত।
এখন তারা অভিজাত অক্সফোর্ডে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তাদেরকে নিয়ে একটি ফিচার প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ডেইলি মেইল।
জয়নব ও জান্নাতের মা নিপা (৩৬) একজন নার্স। আর পিতা লুৎফর (৪২) একজন ব্যবসা বিষয়ক পরিচালক। তাদের বসবাস পূর্ব লন্ডনে। নিপা যখন সন্তান সম্ভাবা হন তখন চিকিৎসকরা তাকে বলেন, তার গর্ভে রয়েছে পেটে জোড়া লাগা জমজ দুই মেয়ে। তারা জন্ম নেয়ার পর তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তাই গর্ভপাত করে ফেলাই উত্তম। কিন্তু নিপা ও লুৎফর তা শোনেন নি। যথারীতি জন্ম নেয় জয়নব ও জান্নাত। ঠিকই বুকে, পেটে, লিভারে তাদের জোড়া লাগা। এই জোড়া না ছুটালে তারা বড় হয়ে জটিলতার মুখোমুখি পড়বে। তাই পিতামাতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হলো, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে পাঠানো হলো অপারেশন থিয়েটারে। তখন জয়নব ও জান্নাতের বয়স মাত্র ৬ সপ্তাহ। তাদের ওপর চালানো হলো অস্ত্রোপচার। সাড়ে চার ঘন্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো তারা। সবার তখন মুখে কোনো কথা নেই, বাঁচবে তো মেয়ে দুটি!
কিন্তু সব জটিলতাকে পশ্চাতে ফেলে, সব অসম্ভবকে সম্ভব করে সেই জয়নব আর জান্নাত বেঁচে আছে এখনও। তাদের বয়স এখন ১৬ বছর। সুস্থ আছে তারা। তাদেরকে হাসিখুশি দেখায়। এখন তাদের স্বপ্ন অক্সফোর্ডে পড়া।
তাদের মা নিপা ও পিতা লুৎফর তাই এখন গর্ব করেন। নিপা বলেন, এখন আমাদের মনে হয় আমরা এক ভয়াবহতাকে অনেক দূরে ফেলে এসেছি। আজকের এই দিনটিকে ওই সময় আমি কখনো কল্পনা করারও সাহস পাই নি। কিন্তু এখন যখন মেয়েদের দিকে তাকাই তখন বিস্ময়ে, আনন্দে বুকটা ভরে যায়। গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে ২০ সদস্যের শক্তিশালী সার্জিকেল টিম তাদেরকে আলাদা করেছেন। এখন তারা এ-স্টার প্রত্যাশী শিক্ষার্থী।
জয়নবের প্রত্যাশা কেমব্রিজে পড়ার। গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিটে একজন পুষ্টিবিদ হতে চায় সে। অন্যদিকে তিনটি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছে জান্নাত। তার পরিকল্পনা অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা এবং একজন আইনজীবী হওয়া।
মেয়েদের এমন অর্জনে পিতা লুৎফর গর্বিত। তিনি বলেন, এই বিশ্বে আমিই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান পিতা। আমি যখন দুটি মেয়ের দিকে তাকাই তখন মনে হয়, আল্লাহ আমাকে উপহার হিসেবে ওদের পাঠিয়েছেন। সেই উপহারকে এখনও আমরা লালন করছি, প্রতিদিন। তারা দু’জনেই আমাদেরকে গর্বিত করেছে। তারা আমার কাছে এক অলৌকিক বিষয়। আমি তাদেরকে বলেছি, এই বিশ্বের খুব মহৎ প্রয়োজনে তাদেরকে এখানে পাঠানো হয়েছে। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে এবং সম্মান করতে হবে।
১লা ডিসেম্বর ১৬ বছর পূর্ণ করেছে জয়নব ও জান্নাত। তাদের মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জীবনীশক্তি। তারা বলেছে, আলাদা করা হলেও তারা এখন একে অন্যের বেস্ট ফ্রেন্ড। তারা শুধু একটি রাত আলাদা কাটিয়েছে। জান্নাত বলেছে, ওটা ছিল একটি স্কুলের রাত। সে রাতে আমি ভাল ছিলাম না। আমরা আলাদা থাকতে চাই না।