মায়ের লাশ নিয়ে সাইকেল যাত্রা সন্তানের
মৃত মাকে নিয়ে এক কিশোরের সংগ্রাম আর জাতিভেদের নির্মম নিষ্ঠুরতার এক ঘটনা দেখা গেল ভারতের উড়িষ্যায়। মৃত মায়ের দেহ নিয়ে এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার উপর দিয়ে যখন সাইকেল ঠেলে যাচ্ছিল কিশোর সরোজ, পায়ের নিচে নুড়ি-পাথরের ঘা খেয়ে সরে যাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারেনি। সাইকেলের ক্যারিয়ারে মা জানকী সিনহানিয়ার দেহ পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাপড় মুড়িয়ে আড়াআড়ি ভাবে শোয়ানো ছিল। অথচ লক্ষণীয় যে, একসময় তিনি যেখানে বসতেন, ছেলে সাইকেল চালানোর সময় যখন বাঁক নিত, তিনি নিজের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সম্প্রতি কুয়া থেকে পানি আনার সময় রাস্তায় পড়ে যেয়ে মারা যান ৪৫ বছরের জানকী সিনহানিয়া। দশ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তার। স্বামী ছিলেন সুন্দরগড় জেলার বাসিন্দা। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি তার পিতার গ্রাম উড়িষ্যার কারপাবালে এসে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর গ্রামের একজন প্রতিবেশীও তার সৎকারে এগিয়ে আসেনি। সৎকার করতে তার দেহ বহন করে নিয়ে যেতে কেউ সরোজকে সাহায্যও করতে চায়নি। একটাই কারণ, তারা ‘নীচু জাত’। তাই লাশ নিয়ে একাই পথ চলতে হয়েছে ১৭ বছরের সরোজকে। এজন্য, মায়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘরের পুরোনো কাপড় দিয়ে বেঁধে পুরো শরীর ঢেকে দেয় সে। তারপর সাইকেলের ওপর তৈরি করে বাঁশের বিছানা। এরপর ক্যারিয়ারে বাঁধা সেই বিছানায় মায়ের লাশ রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নেয়। অতঃপর শুরু হয় মৃত মাকে নিয়ে সারোজের একা শবযাত্রা। এভাবে ৪-৫ কিলোমিটার বয়ে নিয়ে যেত হয়েছে মাকে। শ্মশানে দাহ করার সুযোগও দেয়া হয়নি। নির্মম আর নিষ্ঠুর জাতিভেদের শিকার হয়ে দূরের জঙ্গলে মাকে সমাহিত করতে হয়েছে ওই কিশোরকে।