এগিয়ে চলছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ কাজ
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ কাজ। দিল্লীর আশ্বাস, ঢাকার আশ্বস্ত হওয়া আর বরাক নদীর ভাটি এলাকা মণিপুর-মিজোরাম-বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদ বিক্ষোভ সব কিছুই বিফলে। বরং ভারত তাদের বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে আরেকটি বাধা অতিক্রম করতে যাচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীসরকারের নির্দেশে মনিপুর ও মিজোরাম রাজ্য সরকার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রা৩শ’ বর্গকিলোমিটার জঙ্গলের বিরল জাতের ৮২ লাখ গাকেটে ফেলার অনুমত দিয়েছে। খুব শিগগিরই এসব গাকেটে ফেলা হবে। তবে সেখানে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বিরোধী অ্যাকশন কমিটি গাকাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আন্দোলনের মুখে কিভাবে নির্বিঘে গাকাটা যাএ নিচেলতি মাসেই দু’টি রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনাবসবে কেন্দ্রীসরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেনে, বাংলাদেশের ক্ষতি হএমন কোন প্রকল্প ভারত করবে না। তাছাড়া টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়ন করাটা এক রকম অসম্ভব। এরপরও এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হলে আমরা অবশ্যই এর প্রতিবাদ জানাবো।
এদিকে ভারতের গণমাধ্যম জানায়, বিরল জাতের গাকাটা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দু’টি রাজ্যেই। ভারতে নদীতে বাঁধ দিিেবদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নতুন ঘটনা নয়। অন্যত্র নদীতে বাঁধ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বনাঞ্চলে হাত দিতে হয়েছে। তবে সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বনাঞ্চল যতটা ধ্বংস করতে হয়েিেটপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে তা শতভাগ ছাড়িযোবে। দু’টি রাজ্যের পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি হবে তা চিন্তা করে বিশাল বনাঞ্চল উজাড় করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হউেঠেঅ্যােকশন কমিটি।
মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের জঙ্গলে চেনা ও অচেনা অনেক প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে। মণিপুরের জঙ্গলের ৮২ লাখ বিরল জাতের গাকাটার পাশাপাশি মিজোরাম রাজ্যের এক হাজার ৫৫২ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হযোবে। দু’টি রাজ্যের জঙ্গলে বাস করবোঘ, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, কালো চিতাবাঘ, উল্লুক, পিগ টেল্ড ম্যাকাক, ভালুক, মালভালুক, প্যাঙ্গোলিন, অজগর, হিমালয়ান হলুদ গলার মারটেন, ঘড়িয়াল, ধনেশ পাখিসহ বিলুপ্ত প্রাঅনেক প্রাণী।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সমভারত-বাংলাদেশ যৌথ ইস্তেহারের আর্টিক্যাল ৩০ এ বলা হয়েছিলো: “ভারতীপ্রধামন্ত্রী টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন।” এরপর ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সমঘোষিত যৌথ ইস্তেহারে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেেদয়া মনমোহনের বক্তৃতাএকই “আশ্বাস” আবারও উচ্চারিত হয়। গতবছর ২৪ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মণি বলেছেন, “টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে নয়া দিল্লি যে নিশ্চয়তা দিয়েতোতে ঢাকা ‘আশ্বস্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশের মোট পানি প্রবাহের উৎসের শতকরা ৯ ভাগ আসে বরাক নদী থেকে। আর এই বরাক নদীর পানি আটকিয়েইে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারত শুধু বরাক নদীতে যেমন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে তেমনি গঙ্গার উপর নির্মিত ফারাক্কা ব্যারেজের প্রতিক্রিয়া কতটা ভয়ঙ্কর-এদেশের মানুষ আঁচ করছে। শুধু ফারাক্কা ব্যারেজের মাধ্যমেই গড়ে ৪০ হাজার কিউসেক বা এক হাজার ১৩৩ কিউমেক পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই প্রত্যাহার করে ভাগিরথি নদীতে নিযো”েভারত। এতে করে গোটা উত্তারাঞ্চলের মরুকরণ শুরু হয়েছে। পরিবেশে দেখা দিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
এদিকে, আসামের কাছার অঞ্চলের মৌসুমি বন্যা প্রতিরোধের নামে মনিপুরের ২৭৫.৫০ বর্গ কি.মি. এলাকার ১৬টি গ্রাম পুরোপুরি ডুবিএেবং আরও ৫১টি গ্রামকে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন-জীবকা ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ধ্বংস করার পরিকল্পনা মনিপুরবাসী কখনই মেনে নেয়নি। ফলে মনিপুরের বরাক নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের স্থান ক্রমশই পরিবর্তিত হতে থাকে যথাক্রমে ১৯৫৫ সালে ময়নাধর, ১৯৬৪ সালে নারায়নধর এবং তার পর ভুবন্দর এবং সবশেষে ১৯৮০’র দশকে তুইভাই এবং বরাকনদীর সংগম স্থলের ৫০০ মিটার ভাটিতে বাংলাদেশের অমলসিদ পয়েন্ট থেকে ২০০ কিমি দূরে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ভারতের টিপাইমুখ হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টে যে হাই ড্যাম নির্মাণ করা হবে তার উচ্চতা ১৬২ দশমিক ৮ মিটার। এর পানি ধারণ ক্ষমতা ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০০ মেগাওয়াট। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এর নির্মাণ ব্য১২ হাজার কোটি রুপি ধরা হয়েছে।
টিপাইমুখ বাঁধ যখন পূর্ণ কার্যক্ষম থাকবে তখন বরাক নদী থেকে অমলসিধ পয়েন্টে সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা নদীর দিকে পানি প্রবাহ জুন মাসে ১০ শতাংশ, জুলাই মাসে ২৩ শতাংশ, আগস্ট মাসে ১৬ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ শতাংশ কমে যাবে। কুশিয়ারা নদীর পানির উচ্চতা অমলসিধ স্টেশনে কমবে জুলাই মাসের দিকে গড়ে ১ মিটারেরও বেশি আর ফেঞ্চুগঞ্জ, শেরপুর ও মারকুলি স্টেশনে কমবে যথাক্রমে ০.২৫ মিটার, ০.১৫ মিটার এবং ০.১ মিটার করে। অন্যদিকে একই সমসেুরমা নদীর পানির উচতা সিলেট এবং কানাইয়ের ঘাট স্টেশনে কমবে যথাক্রমে ০.২৫ মিটার এবং ০.৭৫ মিটার করে।