লাগাতার ৫৯ দিন ঘুমালেন এক ব্রিটিশ তরুণী
রাতভর এপাশা ওপাশ করেও যাদের চোখে তন্দ্রা পর্যন্ত আসে না তারা প্রতিবেদনের শিরোনামটি দেখে ঈর্ষাকাতর হবেন স্বাভাবিকভাবেই। সত্যিই বিস্ময়করভাবে লাগাতার ৫৯ দিন ঘুমালেন এক ব্রিটিশ তরুণী। তবে সম্প্রতি শেষ করা এই জম্পেশ ঘুমের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়ার কাজ সেরেছেন তিনি। আচরণ করেছেন একেবারেই শিশুদের মতো।
লন্ডনের গ্লোল্ডস্মিথস ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা এই তরুণীর নাম ইমাল ডুপ্রে।
তবে ইমালের এই ঘুমের রহস্য জানা গেলে নিশ্চয় ঈর্ষাকাতুরেরা এক ধরনের স্বস্তিই পাবেন। কারণ, স্বাভাবিকভাবে নয়, ঘুমজনিত একধরনের অস্বাভাবিকতার শিকার হয়েই ২৩ বছর বয়সী তরুণী এমন ঘুমিয়েছেন।
ঘুমের ক্ষেত্রে ইমাল যে ধরনের অস্বাভাবিকতা ভুগছেন তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ক্লেইন-লেভিন’ বা স্লিপিং বিউটি সিনড্রম বলা হয়।
তিনি কখন ঘুমান বা কখন জেগে থাকেন তা মাঝে মধ্যে বোঝা যায় না। কারণ ঘুমের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরাসহ অন্যান্য কাজ কর্ম সারেন তিনি।
এই বিপজ্জনক সময়টাতে ইমালকে দেখাশোনার কাজ করেছেন মা কেরি গ্রিফিথস ও বোন শাহনেকুয়া ডুপ্রে।
পেশায় শিক্ষক মা কেরি বলেন, যদি কেবলই ঘুম হতো তবে অনেক সহজ ব্যাপার হতো। যেমন, আমরা তাকে জাগিয়ে দিলে সে যদি তখন খাবার গ্রহণ করতো কিংবা ঘুমাতো তাহলে এতো চিন্তা ছিল না। কিন্তু সে একেবারেই ভিন্ন চরিত্রের মানুষ।
তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে ও কোথায় থাকে আমরা বুঝে উঠতে পারি না। একেবারেই চাপের মধ্যে সময় কাটে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রথম এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করেন ইমাল। তখন একটি পারিবারিক উৎসবের পর টানা ১০ দিন ঘুমান ইমাল।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঘুমের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হলেও আত্মবিশ্বাসী ইমাল তার মেধার জোরে লন্ডনের গোল্ডস্মিথস ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটা তার জন্য কঠিন বুঝতে পারলেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে বরাবরই অটল থাকেন ইমাল। শেষ পর্যন্ত সফলও হন তিনি।
জানা যায, ইমালের মতো এ ধরনের ক্লেইন লেভিন সিনড্রমে ভোগা মানুষ সারা বিশ্বে এক হাজারের মতো হবে। এর মধ্যে ৭০ ভাগই পুরুষ।
এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো পথ্য আবিষ্কার করতে পারেননি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এসব রোগীকে সবসময় চোখে চোখে রাখা আবশ্যক। নতুবা যেকোনো সময় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।