স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় পেলেন মিন্দানাওয়ের মুসলমানরা

ফিলিপাইনের দক্ষিণের মুসলমান অধ্যুষিত মিন্দানাওয়ে নতুন একটি স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির ভোটাররা। স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে গত সোমবারের গণভোটে প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোটার ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে মত দিয়েছেন। গণভোটে ওই অঞ্চলের প্রায় ১৭ লাখ ভোটার ভোট দেন। শুক্রবার রাতে নির্বাচন কমিশন ভোটের ফল ঘোষণা করে। ভোটারদের রায় স্বায়ত্ত শাসনের পক্ষে হওয়ায় আগামী তিন বছরের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। স্বায়ত্তশাসন চালু হলে ওই অঞ্চলের নাম হবে ‘বাংসামোরো’।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২২ সাল নাগাদ ‘বাংসামোরো’তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের লোকজন নিজস্ব পার্লামেন্ট ও মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করবে। তখন কেন্দ্র সরকার থেকে বেশ কিছু ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের কাছে যাবে। এ ছাড়া, ওই অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য তহবিলের জোগান বাড়াবে এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থানীয় সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। এশিয়ার সবচেয়ে সংঘাতময় অঞ্চল মিন্দানাওয়ে শান্তি ফেরানোর আশায় এ গণভোট আয়োজন করা হয়েছে।

ফিলিপাইনের বেশির ভাগ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হলেও মিন্দানাও মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল। গত ২১ জানুয়ারির ভোট স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যাওয়ায় এখন আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ফেব্রুয়ারির গণভোটে আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দাদের তারা ‘বাংসামোরো’ স্বায়ত্ত শাসিত থঅঞ্চলে সংযুক্ত হতে চায় কি না তা জিজ্ঞাসা করা হবে।

গণভোটের রায় স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যাওয়ায় এমআইএলএফ এখন ওই অঞ্চলের বৈধ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হবে এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলটি সেখানকার অধিক চরমপন্থী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলোকে দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। ‘হ্যাঁ ভোট’ জয়যুক্ত হওয়ার ফলে অধিকতর স্বায়ত্ত শাসন ও সম্প্রসারিত অঞ্চল নিয়ে মুসলিম বাংসামোরো অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এর ফলে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলমান সহিংসতার অবসান ঘটতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

দেশটির নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার অনুষ্ঠিত গণভোটে মিন্দানাও অঞ্চলে স্বায়ত্ত শাসনের বিষয়ে জনগণের মত জানতে চাওয়া হয়। এতে দেড় লাখ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাংসামোরো কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, স্বায়ত্ত শাসন আইনের অনুমোদনের ফলে নতুন সরকার গড়ে তোলা ও শান্তির পক্ষে অগ্রযাত্রার প্রথম পদক্ষেপ। মুসলিম স্বাধীনতাকামী সংগঠন মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট ও সরকারের দীর্ঘ দিনের আলোচনার পর ২০১৪ সালে অঞ্চলটির স্বায়ত্ত শাসনের পক্ষে সমঝোতা হয়। গত বছর ফিলিপাইনের কংগ্রেস এই বিষয়ে অনুমোদন দেয়।

চুক্তি অনুসারে, মুসলিম বিদ্রোহীরা স্বাধীন দেশের জন্য সংগ্রামের ইতি টানবে। তাদের অঞ্চলটিতে স্বায়ত্তশাসনের পরিধি আরো বাড়বে। যদিও বিদ্রোহীরা আরো ক্ষমতাসহ ফেডারেল ব্যবস্থা চেয়েছিল। তাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার যোদ্ধাকেও অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। আঞ্চলিক পার্লামেন্ট অঞ্চলটির দৈনন্দিন শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবে। গত সোমবার ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলের মিন্দানাও, লানাও দেল সুর, বাসিলান দ্বীপপুঞ্জ, কোটাবাটো ও ইসাবেলার শহর তাওটি-তাওটি ও সুলুতে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পাঁচটি অঞ্চল ‘স্বায়ত্ত শাসিত’ মুসলিম মিন্দানাও প্রদেশে অবস্থিত। শেষের শহর দু’টি মিন্দানাওয়ের বাইরে অবস্থিত।

গণভোটে ভোটারদের কাছে জানতে চেয়েছে যে, তারা মিন্দানাওকে সম্প্রসারিত মুসলিম বাংসামোরো স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সাথে একীভূত হতে চায় কি না? গণভোটের ফলে মিন্দানাও মুসলিম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে সম্প্রসারিত বাংসামারো মুসলিম অঞ্চলের সাথে একীভূত করে নতুন আইন পাস করবে দেশটির সরকার।

দেশটির নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে যে, কোটাবাটো শহরে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ৩৬ হাজার ৬৮২টি আর ‘না’ ভোট পড়েছে ২৪ হাজার ৯৯৪টি। মিন্দানাও অঞ্চলে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ছয় লাখ আট হাজার। বিপরীতে ‘না’ ভোট পড়েছে ৯ হাজারের মতো। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বুধবার গণভোটের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

ফিলিপাইনের মুসলিম অধ্যুষিত এসব অঞ্চলের মানুষ অবশ্য ইতোমধ্যে বিজয় উদযাপন শুরু করেছে। ঐতিহাসিক এই গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে মূলত গত বছরের (২০১৮) জুলাইতে সরকার ও মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে, যাকে ‘বাংসামোরো অরগানিক ল’ নামে অবহিত করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button