ইউরোপ থেকে বেরুনোর রাস্তা খুঁজতে হয়রান ব্রিটেন
কোন পথে ব্রেক্সিট?
আসছে ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। কিন্তু ব্রিটেনের এই প্রস্থান কিভাবে হবে সে বিষয়ে দেশটির এমপিরা একমত হতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে করে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এজন্য তিনি চান, এমপিরা যেন তাকে সমর্থন করে। মঙ্গলবার স। ব্রিটিশ এমপিরা ব্রেক্সিট ইস্যুতে আরো এক দফা ভোটাভুটিতে অংশ নেন।
মঙ্গলবারও অনেক মতানৈক্য ছিল কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। সেটি হচ্ছে, টেরিজা মে আবারো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ফিরে যাবেন নতুন একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্রেক্সিটের পর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত কেমন হবে, তা সুনির্দিষ্ট করা।
ব্রেক্সিটের প্রেক্ষাপট:
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও এখনো ব্রিটিশ সরকার ঠিক করতে পারেনি তারা কোন শর্তে বেরিয়ে আসবে। মঙ্গলবার পার্লামেন্ট ভোটাভুটির পর এ প্রক্রিয়া নিয়ে আরো জটিলতার আশংকা তৈরি হয়েছে।
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বেক্সিটের বিষয়ে একটি বড় অগ্রগতি হয়েছিল। ব্রিটেনের সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রেক্সিটের শর্ত ঠিক করার জন আলোচনা শুরু করে। সে আলোচনার পর উভয়পক্ষ একটি চুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছিল। তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেন, “ব্রেক্সিট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে ব্রিটেনের জনগণ আর সময় অপচয় করতে চায় না।” কিন্তু টেরিজা মে’র জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল সে চুক্তি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদন করানো। প্রধানমন্ত্রীর নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি সে চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত সে ভোটাভুটিতে টেরিজা মে সরকারের বড় পরাজয় হয়েছিল। মঙ্গলবার দিন শেষে সাতটি সংশোধনীর উপর ভোট হয়। অধিকাংশ সংশোধনী বাতিল হয়ে যায় ভোটের মাধ্যমে। মাত্র দুটি সংশোধনী পাশ হয়েছে :
১. আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে নতুন আলোচনা
টেরিজা মে ব্রাসেলসে যে চুক্তি করেছিলেন সেখানে বলা হয়েছে আয়ারল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত খুব কঠিন হবে না। অর্থাৎ এ সীমান্ত দিয়ে ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কোন রকম তল্লাশি ছাড়াই মালামাল পরিবহন করা যাবে। এটিই একমাত্র জায়গা যেখানে ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থল সীমান্ত রয়েছে এবং এখানে অবাধে মানুষ চলাচল এবং বাণিজ্য হয়।
টেরিজা মে’র কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে অনেক প্রভাবশালী সদস্য রয়েছেন যারা এর বিপক্ষে। তারা চান ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সীমান্ত সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে। ফলে টেরিজা মে যে চুক্তি করেছিলেন সেটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।
২. চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট না হওয়া
অধিকাংশ এমপি বলেছেন, কোন রকম চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা ঠিক হবে না। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনীর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
এরপর কী ঘটবে?
আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে নতুন আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে আলোচনা করতে চায়না এবং তারা নতুন আলোচনার কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।
তারা বলছেন, সীমান্তের এ বিষয়টি এরই মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য আয়ারল্যান্ডও এ বিষয়ে কোন পরিবর্তন চায়না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি নতুন আলোচনায় রাজী না হয়, এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যদি বিষয়টি সুরাহা করতে না পারে – তাহলে কী হবে?
তখন একমাত্র উপায় হবে কোন রকম চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসা। এর অর্থ হবে কোন রকম সময় ছাড়াই হঠাৎ করে বেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু কোন রকম চুক্তি ছাড়া ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে দেশটির জন্য ভালো হবে না। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে খাদ্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ব্রিটেনে আসতে দেরি হবে। সেজন্য ব্রিটেনের বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। -বিবিসি