স্ত্রীর পরকীয়া, স্বামীর আত্মহত্যা
স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার পর ফেসবুকে অভিমানী স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ। তিনি নিজের শরীরে নিজেই ইনজেকশন পুশ করেন বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার। চিকিৎসকেরা বলেছেন, শিরায় বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর আগে ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাসে মোস্তফা মোরশেদ আকাশ স্ত্রীর সাথে তোলা একটি ছবি দেন এবং তাতে লেখেন ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে। একাধিক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর দিনের পর দিন পরকীয়া কুরে খাচ্ছিল ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে। যন্ত্রণা এতটা প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে পাপের পথ থেকে ফেরাতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তরুণ সম্ভাবনাময়ী এ চিকিৎসক। ডা. আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর নন্দনকানন এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিতুকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
আকাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৩২ বছর বয়সী আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাংলাবাজার বরকল এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে তাদের পরিবারের বসবাস।
আকাশের স্ত্রী মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান শুক্রবার জানান, আত্মহত্যার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ওই দম্পতির মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছিল। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু কিছু কিছু বিষয় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। আবার কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ করে যান। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার ‘বন্ধুদের’ বেশ কিছু ছবিও তিনি ফেসবুকে তুলে দিয়ে যান।
অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বছর তিনেক আগে প্রেম করে বিয়ে করেন আকাশ ও মিতু। বিয়ের পর পরই মিতু যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তখন থেকেই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। তিনি জানান, গত ১৩ জানুয়ারি মিতু দেশে আসার পর তা আরও বেড়ে যায়। বুধবার রাতে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হাতাহাতিও হয়। সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।
চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি স্ত্রীর সাথে রাতে ঝগড়া করেন আকাশ। ভোর ৪টার দিকে তার স্ত্রী রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আকাশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে একপর্যায়ে নিজের শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করে বুধবার রাতে ওই চিকৎসক বাসায় যান। ভোর সোয়া ৬টার দিকে ডা: আকাশকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার ভাই নেওয়াজ মোরশেদ। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আকাশের ফেসবুক পেইজে ভোর ৫টার দিকে দেয়া দু’টি স্ট্যাটাস আছে। সেখানে তিনি জানান, ২০০৯ সালে পরিচয়ের পর সম্পর্ক গড়ে ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে ‘চিটার’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও করেন।