ভবিষ্যত্ প্রজন্মের উপযোগী বিশ্ব চান শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সার্বিক সাফল্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি নতুন, বাস্তবধর্মী ও দায়িত্বশীল বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থায়ন, ওডিএ প্রতিশ্রুতি পূরণ, বাণিজ্যিক সুবিধা এবং সাউথ সাউথ ও ত্রিমুখী সহযোগিতার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘অসমাপ্ত এজেন্ডা : এমডিজির অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণ’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইউএনডিপি প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. জিম ইয়ং কিমও বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংস্থাগুলো, বিশেষ করে ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদার এ ক্ষেত্রে যে আগ্রহ ও সহযোগিতা দেখিয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, এমডিজি ও ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার লক্ষ্য অর্জনে এসব সংস্থার প্রতিশ্রুতি ও ক্রমবর্ধমান সমর্থন জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য হ্রাস, বিদ্যালয়ে লিঙ্গ-সমতা, পাঁচ বছরের নিচের বয়সীদের মৃত্যুহার হ্রাস, এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরই মধ্যে এমডিজি’র বেশকিছু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার দল ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় এমডিজি’র খাতগুলোকে চিহ্নিত করে। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এমডিজি’র ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। এতে শক্তিশালী এমডিজি অর্জন কৌশল নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালের ইউএনডিপি’র মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এমডিজি অর্জনে অসাধারণ দক্ষতার জন্য যে কটি উন্নয়নশীল দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। শেখ হাসিনা ভবিষ্যত্ প্রজন্মের বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গঠনে বিশ্ব নেতৃত্বকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আরও আহ্বান জানিয়েছেন, আসুন আমরা এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলি যেখানে আমাদের শিশুরা, আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম শান্তিতে বাস করতে পারবে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি এই ফোরাম থেকে গুরুত্ব দিতে হবে, এই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশই এখন পেছনে পড়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে তারা এগুতে পারছে না। বাংলাদেশ তার নিজস্ব যোগ্যতা ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় এমডিজি অর্জনে এগিয়ে যেতে পেরেছে। সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশ তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা যে কোনো দেশের সঙ্গে শেয়ার করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনটি মূল বিষয় নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন—অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বিজ্ঞানসম্মত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরের নর্থ লনে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে বান কি মুনের এক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল তাহনির সঙ্গে দেখা করে দ্বিপাক্ষিক বেঠকে মিলিত হন। ম্যানহাটনে জাতিসংঘ প্লাজায় জাতিসংঘে কাতার মিশনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার তিনি ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এটি চলবে দুই পর্বে। একই দিন তিনি ইকসোক চেম্বারে ‘শিক্ষা প্রথম : বৈশ্বিক উদ্যোগ’ বার্ষিকীতে অংশ নেবেন। তিনি মঞ্চে উপবেশন করবেন এবং সুধীজনের সঙ্গে কথা বলবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তি এবং সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত কনভেনশনের যুদ্ধাবশিষ্ট বিস্ফোরক বিষয়ক পঞ্চম প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করবেন। এরপরই সাধারণ অধিবেশনে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ সভার শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় ইউএস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অপরাহপ্ত ৩টার পর তার বক্তব্য রাখবেন। এরপরই তিনি বাংলাদেশ মিশনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা পৌণে ১টায় নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। ৫টায় তিনি হোটেল হিল্টনে প্রবাসীদের সংবর্ধনা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল সোয়া ১১টায় আমিরাত এয়ারলাইন্সে ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন শেখ হাসিনা।