ইস্ট লন্ডন মসজিদের ‘ইসলামিক উইল প্রজেক্টে’র যাত্রা: প্রথমদিনেই ব্যাপক সাড়া

ইস্ট লন্ডন মসজিদের নতুন ফান্ডরেইজিং প্রজেক্ট ইসলামিক উইল সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর লন্ডন মুসলিম সেন্টারের কনকোর্স এরিয়ায় এই প্রজেক্টের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এসময় ইসলামিক উইল নিয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলেন মসজিদের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি আইয়ূব খান এবং ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম। জুমার খুৎবায়ও ইসলামিক উইলের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

উদ্বোধন উপলক্ষে ইসলামিক উইল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিতে ‘ফারানী টেইলার সলিসিটর্স’ নামে একটি আইনী প্রতিষ্ঠান এলএমসি কনকোর্স এরিয়ায় অস্থায়ী স্টল স্থাপন করে। জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা আগ্রহীদের এ সংক্রান্ত লিফলেট প্রদান ও পরামর্শ দেন। মানুষ ইসলামিক উইল প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়। উইল নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এসময় ফারানী টেইলার সলিসিটর্স এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র এস্টেট প্লানার জাহুর চৌধুরী, বিজনেস ডেভেলাপমেন্ট ম্যানেজার ব্যান লকইয়ার্ড ও পাবলিক রিলেশনশীপ অফিসার আমিন আনোয়ার চিশতি।

ইস্ট লন্ডন মসজিদের সেক্রেটারি আইয়ূব খান বলেন, ইসলামি শরীয়তে মৃত্যুর আগে নিজের সম্পদ উইল বা অসিয়ত করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। নতুবা মৃতু্যর পর উত্তারাধিকারদের মধ্যে সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে হানাহানি ঘটার আশংকা থাকে। আমাদের কমিউনিটিতে অনেক বিত্তবান মানুষ আছেন, যারা নিজের সম্পদের একটি অংশ সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে উইল করে দিয়ে যেতে চান, কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়া না জানার কারণে বৃদ্ধ বয়সে এসে আর তা করতে পারেন না। তাই আমরা সহজ প্রক্রিয়ায় উইল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগ্রহীরা চাইলে আমাদের মনোনীত আইনী প্রতিষ্ঠান ‘ফারানী টেইলার সলিসিটর্স’ এর মাধ্যমে উইলের কাজটি সম্পাদন করে নিতে পারেন। তাঁরা ডিসকাউন্টেড মূল্যে সেটি করে দেবেন।
তিনি আরো বলেন, সম্পদ উইল করে দিলে ট্যাক্স প্রদান থেকেও বাঁচা যায়। কারণ উইল না করলে সরকার উত্তরাধীকারীদের সম্পদ থেকে ৪০ পার্সেন্ট ট্যাক্স কেটে নেয়। জনাব আইয়ূব খান আরো বলেন, উইল সার্ভিসের প্রতি মানুষের বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। উদ্বোধনের দিনেই ২৬ ব্যক্তি উইল করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ইমাম আব্দুল কাইয়ূম বলেন, আমাদের বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে উইল না করলেও চলে। কারণ মুসলিম দেশগুলোতে আদালত মোটামুটি শরীয়ার আলোকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ সমবন্টন করে দেয়। কিন্তু এ দেশের আদালত যেহেতু বৃটিশ আইনে পরিচালিত হয় তাই এখানে শরীয়া আইনের আলোকে সম্পদের সমবন্টনের সুযোগ নেই। এতে করে অনেকেই শরীয়তের বিধান অনুযায়ী দেওয়া অধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং সম্পদ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির আশংকা থেকে যায়। তাই এসব বিবেচনায় মৃত্যুর আগে উইল বা অসিয়ত করে যাওয়াটা খুবই জরুরী।

ফারানী টেইলার সলিসিটর্স এর সিনিয়র এস্টেট প্লানার জাহুর চৌধুরী বলেন, ইসলামিক উইল প্রমোশন ও এস্টেট প্লানিং নিয়ে ইস্ট লন্ডন মসজিদের সাথে পার্টনারশীপ ভিত্তিকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। একজন মুসলমানের ধর্মীয় দায়িত্ব হচ্ছে মৃত্যুর আগে সম্পদের উইল করে যাওয়া। আমরা ইস্ট লন্ডন মসজিদে প্রতি মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ফ্রি সার্জারি পরিচালনা করছি। আমাদের সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ টিম কমিউনিটির মানুষের সেবায় নিবেদিত রয়েছে। তাঁরা এ সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

উল্লেখ্য, মৃত্যুর আগে নিজের সম্পদ শরীয়া মোতাবেক বন্টন করে দেয়ার নামই হচ্ছে ইসলামিক-উইল। বাংলাদেশে উইলকে অসিয়ত বলা হয়ে থাকে। শরীয়তের আইন অনুযায়ী সম্পদের তিনভাগের এক ভাগ চ্যারিটির জন্য উইল করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি মৃত্যুর আগে তাদের সম্পদ উইল করে দিতে চান। ইস্ট লন্ডন মসজিদ সেই দিকটি বিবেচনা করে উইল প্রজেক্ট চালু করেছে। সাথে সাথে ফারানী টেইলার সলিসিটর্স নামে একটি অভিজ্ঞ সলিসিটর্স ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছে। এস্টেট প্লানিংয়ে প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফার্ম সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সার্জারী পরিচালনা করবে। এছাড়াও সময় সময় তারা মসজিদে সার্জারি, সেমিনার ও স্টল স্থাপন করে এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উইল সংক্রান্ত বিষয়ে জানার জন্য অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করতে 020 7650 3008 অথবা wills@eastlondonmosque.org.uk ইমেইলে যোগাযোগ করা যাবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button