খালি হাতে দেশে ফিরতে পারেন মে
চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বাড়ছে
ব্রিটিশ সংসদে সমর্থন আদায় করতে ইইউ’র কাছ থেকে ছাড়ের আশায় ব্রাসেলস গেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তিতে কোনো রদবদলে নারাজ৷ ফলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে রদবদলের চেষ্টা চালাতে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে যান৷ আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ‘ব্যাকস্টপ’ সংক্রান্ত বোঝাপড়ায় কিছু পরিবর্তন আনতে পারলে ব্রিটিশ সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করানো সম্ভব হবে, এমন যুক্তি সম্বল করে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ তবে বুধবারও ইইউ আবার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ বিশেষ করে ইইউ সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ডের স্বার্থ কোনো অবস্থায় হুমকির মুখে ফেলা হবে না৷ বুধবার আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকারের সঙ্গে আলোচনার পর ইইউর দুই শীর্ষ নেতাই এমন আশ্বাস দিয়েছেন৷ ফলে মে-র পক্ষে কোনো ছাড় আদায় করার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়লো৷
ব্রেক্সিট চুক্তির ক্ষেত্রে যে কোনোরকম রদবদল সম্ভব নয়, ইইউ শুরু থেকেই তা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ অন্যদিকে ব্রিটিশ সংসদ তা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়৷ কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ও সংসদ ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার স্পষ্ট ও সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো বিকল্পও তুলে ধরতে পাচ্ছে না৷ ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার মেয়াদ সীমিত করা বা একরফাভাবে তা থেকে বেরিয়ে আসার অধিকারের মতো প্রস্তাব ইইউ নাকচ করে দিয়েছে৷ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আইরিশ সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ সহজ করার প্রস্তাবও ইইউ-র কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ, এমন ব্যবস্থা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে৷ ফলে বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থা কাটার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না৷ এই অবস্থায় মে ব্রাসেলস থেকে খালি হাতে দেশে ফিরলে কী হবে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷
ব্রেক্সিটের আগে শেষ প্রহরে ব্রিটিশ রাজনীতির এমন অবাস্তব আচরণ সম্পর্কে বিরক্তি ও ক্ষোভ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, বুধবারই তার এক দৃষ্টান্ত দেখা গেল৷ আইরিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইইউ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, ব্রিটেনে যারা কোনো পরিকল্পনার রূপরেখা ছাড়াই ব্রেক্সিটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, নরকে তাদের বিশেষ স্থান কেমন হবে, সে বিষয়ে তার কৌতূহল রয়েছে৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার এতটা কড়া ভাষা প্রয়োগ না করেও স্পষ্ট করে দেন, যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন যে ইইউ কমিশন ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়৷
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৯শে মার্চ কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেন ও ইইউ-র বিচ্ছেদের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এই সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোর বিরোধী৷ কোনো স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলেও ইইউ তা মেনে নেবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ বিরোধী লেবার পার্টির দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী যদি ব্রিটেনকে স্থায়ীভাবে ইইউ শুল্ক এলাকায় রাখতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডের সীমানা নিয়ে জটিলতা কাটানো সম্ভব হতে পারে৷ তবে টেরিজা মে নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন৷
শেষ পর্যন্ত চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট ঘটলে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে সমস্যা দেখা দিলেও ইইউ সে দেশকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে৷ এমন অবস্থায় ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আইরিশ প্রজাতন্ত্রে যোগ দিতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে৷ গত কয়েক মাস ধরে উত্তর আয়ারল্যান্ডে জনমত সমীক্ষায় এমন পুনরেকত্রীকরণের পক্ষে সমর্থন বেড়ে চলছে৷ এই প্রশ্নে গণভোটের পক্ষেও অনেকে সোচ্চার হচ্ছেন৷