আঞ্চলিক রাজনীতির ফাঁদে বন্দী রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভাবনা ক্রমাগত স্লান হচ্ছে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, কেট ব্ল্যানচেট, গিগি হাদিদ, প্রিয়াংকা চোপড়ার মতো অনেক তারকাই শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন, কিন্তু লাভ কিছুই হয় নি।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা মূলত ইতিহাস এবং ভূগোলের যাঁতাকলে আটকা পড়েছে, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কৌশলের। দশকব্যাপী মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো অবস্থান প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় নি। আর সেটি যদি হয় বাংলাদেশ-রাখাইন বেল্টের মতো ভূ-রাজনৈতিক স্থানে তবে আন্তর্জাতিক বিশ্বের অবহেলার কারণ আরো স্পষ্ট হয়। সত্যিটা হলো, বিশ্বনেতাদের কাছে সংঘর্ষমুক্ত মিয়ানমার যতটা না প্রত্যাশিত, বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ে তারা ততটা মাথা ঘামান না। যতক্ষণ না বাংলাদেশ ধর্মীয় চরমপন্থার মতো চ্যালেঞ্জিং কোন পরিস্থিতিতে না পড়ছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই সহজভাবেই নিয়েছে।
মঙ্গলবার কানাডার বিশেষ দূত বব রে রোহিঙ্গা ইস্যু আঞ্চলিক সংকটে রুপ নিতে চলেছে বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত ও চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করায় তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’ যদিও বব রে’র এই আশাবাদী মন্তব্য বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সাউথ এশিয়ান মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুযোগের প্রেক্ষিতে কানাডাও মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য করবে এবং তাদের ‘মানবিক’ অবস্থান রইবে না।
সাউথ এশিয়ান মনিটর জানায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতা প্রসারে সামরিক শক্তির চেয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই চীন নীরবে মিয়ানমারের জাতিগত নিধনকে অনুমোদন করছে, ভারতও তাই। কিন্তু বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশ চীন মিয়ানমারে যেভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে ভারতের কাছে সেই সুযোগ নেই। এই সঙ্গে চীন বাংলাদেশকেও তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অংশ করতে বদ্ধ-পরিকর। বাংলাদেশও চীনা বিনিয়োগ দ্বারা লাভবান হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গা ইস্যু চীনের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। কানাডা, চীন ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন বহুপক্ষিয় সমাধানের কথা বললেও তার কোন ভবিষ্যত অগ্রগতি নেই। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ব্যতিত রোহিঙ্গারা দক্ষিণ এশিয়ার ফিলিস্তিনি শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন উত্তর এই সময়ে নেই। তাই অ্যাঞ্জেলিনা জোলি যতই বিশ্বের কাছে আকুতি জানাক তা শোনার আগ্রহ কারো নেই।