আল ক্বিবলা ট্রাভেলসের উদ্যোগে ওমরাহ সেমিনার অনুষ্ঠিত
আল ক্বিবলাহ ট্রাভেলসের উদ্যোগে দেড় শতাধিক পুরুষ-মহিলার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ওমরাহ সেমিনার। ১০ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের মাদানী গার্লস স্কুল মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আবুল কালাম আজাদ ওমরাহ হজ্জযাত্রীদের প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা পেশ করেন। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন আল-হুদা মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, আল-কিবলাহ ট্রাভেলসের ডাইরেক্টর আলহাজ্ব খান, আল কিবলা ট্রাভেলসের হেড অব ওমরাহ মাহবুবুর রহমার চৌধুরী ও আল ক্বিবলার ম্যানেজার আব্দুল মালিক।
মূল আলোচনায় ড. আবুল কালাম আজাদ ওমরাহ যাত্রীদের মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন- মক্কায় গেলেন ওমরাহ পালন করতে, কিন্তু মন যদি লন্ডনে ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়ে থাকে তাহলে ওমরার প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হবেনা। তিনি বলেন, ঘর থেকে রওয়ানা দেওয়ার সাথে সাথে ব্যবসা বানিজ্যের কথা সম্পুর্ণভাবে ভুলে যেতে হবে। শুধু মক্কা মদীনার কথাই ভাবতে হবে। মক্কায় পৌঁছার পর বেশি করে তালবিয়া পড়তে হবে। তিনি বলেন, আল্লাহর ঘরে সকলেই সমান। এখানে ওমুক সাহেব, তমুক সাহেবের আলাদা কোনো মর্যাদা নেই। কোনো মন্ত্রীর ঘরে তাঁর সাক্ষাতের জন্য গেলে কত পিএস এপিএস ধরতে হয়। কিন্তু আল্লাহর ঘরে যেতে হলে কাউকে ধরতে হয়না। এই ঘর সকলের জন্য উন্মুক্ত। এটা আল্লাহ তায়ালার একটি অশেষ দান।
জনাব আবুল কালাম আজাদ পবিত্র কাবা ঘরের কিছু বৈশিষ্ট তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আপনারা দেখবেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি কাবা ঘরের উপর দিয়ে উড়োউড়ি করে। কিন্তু কাবা ঘরের উপর পাখির কোনো বিষ্ঠা দেখতে পাবেন না। পাখিরাও কাবা ঘরকে সম্মান করে। এটা আল্লাহর ঘরে একটি বড় মাহাত“। তাছাড়া তিনি ওমরাহ যাত্রীদের মক্কায় মোবাইল দিয়ে অযথা ফটো তুলতে ব্যস্ত না হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন এমনিতেই ফটো তোলা জায়েজ নেই, উপরন্তু ওমরাহ পালনকালে কাবা ঘরের সম্মুখে ফটো তোলা, সেলফি তোলা হজ্জের মুল উদ্দেশ্য নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া তাওয়াফকালে মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, অনেকেই একদিকে তাওয়াফ করেন এবং অন্যদিকে ফোনে কথা বলতে থাকেন। বলেন, আমি এখন চতুর্থ তাওয়াফে আছি। আপনি কত নম্বরে আছেন। তাওয়াফ যখন করবেন তখন মন থাকবে আল্লাহ তায়ালার দিকে, মোবাইলের দিকে নয়।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা প্রশ্ন করেন, এক সাথে কয়টা ওমরাহ করা যাবে। জবাবে তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) এক সফরে একবারই ওমরাহ করেছেন। সুতরাং একটা ওমরাহ করাই উত্তম। তবে ইতিপুর্বে নিজের ওমরাহ করে থাকলে দ্বিতীয়বার যখন যাবেন তখন নিজের জন্য আবার না করে মা-বাবা ভাই বোন কিংবা আত“ীয়-স্বজনের জন্য করা ভালো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই রাসুল (সাঃ) এর রওজায় সালাম পৌঁছে দেয়ার জন্য বলেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। রাসুল (সাঃ) রওজার পাশে দাঁড়ানোর পর নিজের সালাম পেশ করা শেষ হলে যে ব্যক্তি সালাম দিতে বলেছেন, তার নাম বলে তাঁর পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেবেন।
আল-ক্বিবলার ডাইরেক্টর আলহাজ্ব খান বলেন, অনেকেই এই ছুটিতে প্রথম ওমরা যাচ্ছেন। আমাদের আল-কিবলার ট্রাভেলসের সাথে ওমরাহ যাত্রার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। যেহেতু নতুন যাচ্ছেন তাই মক্কা মদীনায় আপনাদের জন্য রোমাঞ্চকর অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। আশাকরি আপনারা ওমরাহ শেষে মক্কা মাদীনার ভালো স্মৃতি নিয়ে ফিরবেন। তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। আল-ক্বিবলার হেড অব ওমরাহ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওমরাহ অথবা হজ্জ পালনে গেলে ধর্য্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। কোনো কোনো জায়গায় একটু বেশি অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষকরে জেদ্দা এয়ারপোর্টে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই এসব ক্ষেত্রে ধর্য্যধারণ করা খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। তিনি বলেন, আমরা হজ্জ এবং ওমরাহকে শুধু ব্যবসা হিসেবে দেখিনা। ব্যবসার মাধ্যমে আল্লাহর ঘরের অতিথিদের সেবা করার চেষ্টা করি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে ওমরাহ যাত্রীদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করার। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় আশাতীত সেবা করা সম্ভব হয়না। এজন্য আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা।
উল্লেখ্য, আল-ক্বিবলাহ ট্রাভেলস বৃটেনের অন্যতম বৃহৎ হজ্জ ও ওমরাহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। হজ্জ ছাড়াও প্রতি বছর ৮টি গ্রুপের ওমরাহ পালনের ব্যবস্থা করে থাকেন। এ বছর ইতোমধ্যে দুটি গ্রুপ ওমরাহ করে এসেছেন। চলতি মাসে স্কুল হলিডেতে দুটো গ্রুপে ওমরাহ যাচ্ছেন ১৫০ জন পুরুষ-মহিলা। আগামী এপ্রিল মাসে আরো দুটো গ্রুপ যাবে। তাছাড়া আগামী রামাদ্বানের শেষ দশ দিনে ই’তেকাফের জন্য আরো একটি গ্রুপ নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন হেড অব ওমরাহ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। -সংবাদ বিজ্ঞপ্তি