একশ’ ব্রিটিশ প্রভাবশালীর তালিকায় এবারও মেয়র লুৎফুর রহমান

Lutfur Rahmanসৈয়দ আনাস পাশা: ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক টেলিগ্রাফ প্রকাশিত শীর্ষ ১০০ ব্রিটিশ প্রভাবশালীর তালিকায় এবারও স্থান করে নিয়েছেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রথম নির্বাহী মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর রহমান।
মঙ্গলবার প্রকাশিত টেলিগ্রাফের শীর্ষ ১০০ ব্রিটিশ প্রভাবশালীর তালিকায় ৫৩তম স্থান দখল করে নেন লুৎফুর। এ নিয়ে তিনবার ১০০ ব্রিটিশ প্রভাবশালীর তালিকায় নিজের আসন ধরে রাখলেন মেয়র লুৎফুর।
২০১১ সালে প্রথমবারের মত এই তালিকার ৭৮তম স্থান অধিকার করেন তিনি। ২০১২ সালে ১০ জনকে ডিঙিয়ে লুৎফুর চলে আসেন তালিকার ৬৮তম স্থানে। এবার আরও ১৫ জনকে টপকে ব্রিটেনের এথনিক কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত প্রথম নির্বাহী মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর উঠে আসলেন ৫৩তম স্থানে।
‘টপ ১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েন্শিয়েল লেফট-উইঙার’ তালিকায় স্থান পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি লুৎফুর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ডেইলি টেলিগ্রাফে বলা হয়, একজন সক্রিয় কমিউনিটি লিডার মি. রহমান লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র। এর আগে দুই বছর তিনি একই বারার লিডার অব দ্য কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করেন। লেবার পার্টি থেকে বহিস্কৃত হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন লুৎফুর। টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন করায় একজন সফল মেয়র হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা হয়। লেবার পার্টির অনেকেই মেয়র লুৎফুর রহমানকে আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও পার্টির নেতৃত্ব তাকে একজন এক্সট্রিমিস্ট হিসেবে ব্যাপক সন্দেহের চোখে দেখেন।
‘টপ ১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েন্শিয়েল লেফট-উইঙার’ তালিকায় মূলত জাতীয় নেতাদেরই প্রাধান্য রয়েছে। ব্রিটেনের নির্বাহী পদ্ধতির মোট ১৩টি বারার নির্বাচিত মেয়রদের মধ্যে একমাত্র লুৎফুর রহমানই এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
তালিকায় উল্লেখযোগ্য অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড, শ্যাডো চ্যান্সেলর এড বলস, বিরোধীদলীয় উপনেতা হ্যারিয়েট হারমন, শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ইভেটি কুপার, ফাস্ট মিনিস্টার ফর স্কটল্যান্ড আলেক্স সালমন্ড, শ্যাডো হেলথ সেক্রেটারি এন্ডি বার্নহাম, শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেইট ডগলাস আলেক্সজান্ডার, সাবেক চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার আলেস্টার ডার্লিং, শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেইট ফর জাস্টিস সাদিক খান, হোম এফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ার কীথ ভাজ ও লেবার পিয়ার লর্ড সেইন্সবারী প্রমুখ।
টেলিগ্রাফ প্রভাবশালীদের তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, সাবেক মন্ত্রী টেসা জাওয়েল বা সাবেক ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড মিলিব্যান্ডের মত নেতাদের চেয়ে প্রভাবশালী হওয়ার মত কাজ করেছি কিনা তা আমি জানি না। তবে এটা বলতে পারি, বর্তমান সরকারের চরম তহবিল সংকোচন সময়ে আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। আমাদের বিকল্প এডুকেশন এলাউন্স, ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট ও ফ্রি স্কুল মিল জাতীয়ভাবে আলোচিত হয়েছে। আমরা লন্ডন লিভিং ওয়েজ চালু করেছি এবং দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোস্যাল হাউজ নির্মাণ করার স্বীকৃতি পেয়েছি।
২০০৯ সাল থেকে ‘টপ ১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েন্শিয়েল’ তালিকা প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরের তালিকায়ই রাজনীতিবিদদের উত্থান-পতনের দিকটি লক্ষ্য করা গেছে। এক সময়ে এই তালিকার শুরুর দিকে থাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন গত বছর কোনোভাবে ১০০তম স্থান ধরে রেখেছিলেন। ঠিক তেমনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার গত বছর ২৩তম স্থান দখল করলেও এবার সাবেক এই দুই প্রধানমন্ত্রীই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারকারী এড মিলিব্যান্ডকে প্রভাবশালী নেতা ও ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হলেও তার সঙ্গে চরম বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ইউনাইটেড ইউনিয়ন লিডার লেন মেক ক্লাসকি এবার চতুর্থ স্থান থেকে উঠে এসেছেন তৃতীয় স্থানে। সাবেক ফরেন সেক্রেটারি ডেভিড মিলিব্যান্ড ৪৭ জনের পেছনে পড়ে স্থান পেয়েছেন ৭৬-এ। ব্রিটেনের রাজনীতিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ক্যাম্পেইনার ও বুদ্ধিজীবিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ডেইলি মিরর, গার্ডিয়ান, নিউ স্টেটসম্যান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও বিবিসি’র এডিটর ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বও রয়েছেন ‘টপ ১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েন্শিয়েল লেফট-উইঙার’র তালিকায়।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত প্রথম নির্বাহী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে মেয়র লুৎফুর রহমান ফ্যামিলি এন্ড চাইল্ড প্রটেকশন ল’ স্পেশিয়েলিস্ট সিনিয়র সলিসিটর হিসেবে কাজ করেন।
২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস বারার লেবার দলীয় লিডার অব দ্য কাউন্সিল। পারিবারিক জীবনে বিবাহিত এবং দু’সন্তানের জনক লুৎফুর চার বছর বয়সে পিতা-মাতার সঙ্গে ব্রিটেনে আসেন। তার বাংলাদেশের আদিনিবাস সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামে।
ব্রিটেনের মোট ১৩ জন নির্বাচিত বারা মেয়রের মধ্যে লুৎফুর রহমান ছাড়া বাকি সকলেই শ্বেতাঙ্গ। নির্বাহী মেয়র হিসেবে বর্তমানে তাঁর দায়িত্বে রয়েছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) পাউন্ডের বাজেট এবং তাঁর নেতৃত্বে কাজ করছেন মোট ১১ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button