সংসদে রেহাই পেলেন মে, তবে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে আপাতত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন৷ পূর্বাভাস সত্ত্বেও বুধবার রাতে সংসদে তার ঘোষিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহ দেখা গেল না৷ ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরিবর্তিত ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পেশ করতে হবে৷ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সেই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিলে তিনি আগেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করে রেখেছেন৷ তার আওতায় চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট অথবা ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর প্রচেষ্টার প্রশ্নে সংসদ তার রায় দেবার সুযোগ পাবে৷ সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করলেন না সংসদ সদস্যরা৷ বরং লেবার দলের সদস্য ইভেট কুপার-এর আনা একটি প্রস্তাবের প্রতি বিপুল সমর্থনের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি মানতে প্রধানমন্ত্রীর উপর আরও চাপ সৃষ্টি করলেন তারা৷
সংসদে কিছুটা রেহাই পেলেও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না৷ বিরোধী লেবার দল এবার ব্রেক্সিট সংক্রান্ত দ্বিতীয় গণভোটের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে৷ উল্লেখ্য, এতকাল এই দল ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক কাঠামোর মধ্যে স্থায়ীভাবে রাখার পক্ষে সওয়াল করে আসছিল৷ বুধবার সংসদে সেই মর্মে এক প্রস্তাব অনুমোদন করতে ব্যর্থ হওয়ায় লেবার দল গণভোটের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে৷
প্রবল রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এখনো ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী৷ বুধবারের ভোটাভুটির আগেই জনপ্রিয় দৈনিক ‘ডেইলি মেল’-এ এক প্রতিবেদনে তিনি দাবি করেন, ব্রেক্সিট চুক্তি ব্রিটেনের হাতের কাছেই এসে গেছে৷ সংসদ সদস্যদের কর্তব্য পালন করার পরামর্শ দেন তিনি৷
বুধবারের ভোটাভুটির ফলে শুধু একটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টতা পাওয়া গেছে৷ শেষ পর্যন্ত চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হলে ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে৷ এই মর্মে সরকারের গ্যারেন্টি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংসদে অনুমোদিত হয়েছে৷ তবে যে সংসদ সদস্য এই প্রস্তাব এনেছিলেন, সরকার তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷
ব্রিটেনের রাজনীতির উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের মতামত ও মূল্যায়ন জানাচ্ছেন৷ বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন এলে কী করা হবে, সে বিষয়ে তাদের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখো বুধবার ২৯ মার্চের সময়সীমা বাড়ানোর শর্ত তুলে ধরেছেন৷ তার মতে, ব্রিটেন নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যের ভিত্তিতে বাড়তি সময় চাইলে অবশ্যই তা বিবেচনা করা হবে৷ তা না হলে ফ্রান্স এমন অনুরোধের প্রতি সমর্থন জানাবে না৷ আগাম নির্বাচন, দ্বিতীয় গণভোট অথবা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন কোনো সমাধানসূত্র ছাড়া এমন অনুরোধের পক্ষে কোনো যুক্তি দেখছে না ফ্রান্স৷ উল্লেখ্য, ইইউ-র সব সদস্য দেশের সম্মতি ছাড়া ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব হবে না৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ম্যাখোর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েও কিছুটা নরম সুরে বলেন, ব্রিটেন কিছুটা বাড়তি সময় চাইলে ইইউ তা মেনে নিতে অস্বীকার করবে না৷ তবে ব্রিটেন যাতে সুষ্ঠুভাবে ইইউ ত্যাগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করাই হলো লক্ষ্য৷