দেওবন্দে পড়তে ভিসা পাবেন কওমী শিক্ষার্থীরা
এ উপমহাদেশসহ পুরো বিশ্বের ইসলামী শিক্ষার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ভারতের দেওবন্দে অবস্থিত দারুল উলুম, যা একনামে দারুল উলূম দেওবন্দ নামেই সবার কাছে পরিচিত। বিশ্ববিখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করতে অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমান। কিন্তু ছাত্র হিসেবে বৈধভাবে দেওবন্দে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। তারা অনেক সময় টুরিস্ট ভিসা বা অন্য কোনো পন্থায় দেওবন্দ পৌঁছার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ তাতে সফল হলেও অনেকেই ধরা পড়ে যান সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর হাতে। অনেককে মাসের পর মাস জেলেও থাকতে হয়েছে।
গত বছর এমনই একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমস্যা সমাধানের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল কওমী মাদরাসাকেন্দ্রিক বেশ কিছু সংগঠন। তখন কিছুটা অগ্রগতি হলেও পরে থেমে যায় কার্যক্রম। দীর্ঘদিন পর আবারো এ সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে। গত বুধবার দেশের সর্ববৃহৎ কওমী শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি সমাধানের জন্য লিখিত আবেদন জানান।
এই বিষয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষার্থীদের দেওবন্দ পড়াশুনা সহজ করার লক্ষ্যে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক শাইখুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদসহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাই। সেখানে মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করি। শিক্ষা সচিব বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়ান হাই কমিশন, দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন ও কলকাতায় অবস্থিত ডেপুটি হাই কমিশনে দেওবন্দ যেতে ইচ্ছুক ছাত্রদেরকে স্টুডেন্ট ভিসা প্রদানের জন্য লিখিতভাবে নির্দেশনা দেন।
তবে বিষয়টি এখনই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশনে কওমী সনদের স্বীকৃতি আইনের অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে। এখন ভারত ভিসা দেবে কি না, সেটাই বিবেচনার বিষয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে বলেছেন। সে হিসেবে বলা যায় কোনো শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় দূতাবাসের জবাবের পর বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে।
এদিকে এ বিষয়ে ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, আলহামদুলিল্লাহ! আমি ড. মুশতাক আহমদ ও আমাদের মুহতামিম হযরত মাওলানা মজিবর রহমান অনেক দিন থেকে পড়াশুনার উদ্দেশ্যে দেওবন্দ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা লাভের বিষয়টি চিন্তা করে আসছি। আমাদের বিশিষ্ট বন্ধু মাওলানা ওমর ফারূক বিষয়টি পিএম অফিসের মুখ্য সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম স্যারকে অবহিত করলে তিনি সদয় হন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
অতঃপর আমরা ৬ সদস্য মুহতামিম হযরত মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেবের নেতৃত্বে ‘কওমী শিক্ষার্থীদের জন্য ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় অধ্যয়নের নিমিত্ত স্টুডেন্ট ভিসা চালু করা’ এর লিখিত আবেদনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করি। আল্লাহ পাকের শোকর, সচিব মহোদয় তখন এই স্টুডেন্ট ভিসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাই কমিশনার অব ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ হাই কমিশন দিল্লি, ডেপুটি হাই কমিশন কলকাতাসহ সকলকে লিখিত নির্দেশ দেন।
সচিব মহোদয় মৌখিকভাবে আরো বলে দিয়েছেন যে, বিষয়টি যেহেতু একান্তই নতুন, তাই আপনারা দেওবন্দের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পেতে আগ্রহীদেরকে যথানিয়মে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলুন। এ ব্যাপারে তারা কোথাও আইনগত সমস্যায় পড়লে আমাদের অবহিত করবেন। আমরা দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। সকলকে ধন্যবাদ।