মানবতার মাঝেই সন্ত্রাসের সমাধান নিহিত: জাসিন্ডা
মানবতার মাঝেই সন্ত্রাসের সমাধান নিহিত বলে মন্তব্য করেছেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন উগ্র সন্ত্রাসবাদের চক্রে আটকে গেছে। তবে এর সমাধান মানবতার মাঝেই নিহিত।‘ বৃহস্পতিবার নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় নিহতদের স্মরণে শোকসভা পালন করে দেশটির সরকার। জাসিন্ডা ছাড়াও সেখানে কথা বলেছেন দেশটির মুসলিম নেতা ও হামলায় বেঁচে যাওয়ারা।
১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নূর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তা-বের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। এরমধ্যে ৪০ জনেরও বেশি নিহতকে ক্রাইস্টচার্চের নিউ পার্ক সমাধিতে দাফন করা হয়েছে। হামলার পর থেকেই এর নিন্দা জানিয়ে নিহতদের প্রতি ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন নিউ জিল্যান্ডবাসী। হামলার প্রায় ১০ দিনের মাথায় শনিবার (২৩ মার্চ) আয়োজন করা হয় বিশাল স্মরণ অনুষ্ঠান ও জমায়েতের। হেগলি পার্কে আয়োজিত ওই কার্যক্রম সম্প্রচার করা হয় দেশব্যাপী। কড়া নিরাপত্তায় সেখানে অংশ নেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সেখানে পারফর্ম করেন ইসলাম গ্রহণ করা ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী ক্যাট স্টিভেন্স।
আল নূর মসজিদের সামনেই ওই পার্কে উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্যে করে জাসিন্ডা বলেন, আমরা ঘৃণা, ভয় ও অন্যান্য ভাইরাস থেকে মুক্ত নই। কখনও ছিলাম না। কিন্তু আমরা এমন একটা জাতি হতে পারি যারা এই রোগ নিরাময় করতে পারে।’ সেসময তার সঙ্গ অন্যান্য দেশের সরকারি প্রতিনিধিরাও ছিলন।
সেদিন হামলায় বেঁচে যাওয়া ফরিদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন স্মরণ অনুষ্ঠানে। হামলায় স্ত্রী হারিয়েছেন তিনি। তারপরও শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার হৃদয় একটি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিতে রুপ নিক। আমি চাই ভালোবাসায় পূর্ণ একটি হৃদয়, যেখানে সহানুভূতি থাকবে।’
ক্যান্টাবেরির মুসলিম পরিষদের প্রধান সাগাফ খান, হামলা পরবর্তী সময়ে নিউ জিল্যান্ডের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘এই বিদ্বেষ থেকে কত ভালোবাসার তৈরি? অন্ধকার থেকে কতটা আলোর সৃষ্টি হলো?’ ক্রাইস্টচার্চের মেয়র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহাবান জানায়।
এর আগে গত ২৩ মার্চ সকালে নিউ জিল্যান্ডের বড় শহর অকল্যান্ডে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। ‘অভিবাসীদের জীবনের দাম আছে’ এবং ‘এখানে শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হয়’ লেখা প্লেকার্ড হাতে তারা সমাবেশ করেন। হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন, এরমধ্যে ২৪ জনকে এখনও ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।