পাথর ছুঁড়ে হত্যার ভয়ে ব্রুনাই ছেড়েছে সমকামীরা

তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাই ২০১৩ সালে ঘোষণা দেয়, সেখানে ইসলামের আইন কঠোরভাবে পালন করা হবে। বিশেষ করে সমকামীরা সেই ঘোষণার পর ব্রুনাই ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে থাকেন। তবে সমকামীদের অনেকেই সেখানে থেকে যান। তারা ভেবেছিলেন এ ধরনের কঠোর অবস্থানে ব্রুনাই কখনোই যাবে না। কিন্তু তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে।

সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে কয়েকজন সমকামীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে, যারা ২০১৩ সালের ওই ঘোষণার পর ব্রুনাই ছেড়ে চলে গেছেন। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার স্বার্থে তাদের সবারই নাম গোপন রেখেছে সিএনএন। তাদের একজন বলেন, ওই ঘোষণা সত্যিই ভীতিকর ছিল। আমি ভেবেছিলাম, সমকামী হিসেবে আমাকে কেউই এখানে গ্রহণ করবে না। এমনকি আমার পরিবারও আমাকে মেনে না নিয়ে ধর্মের বিধিনিষেধের কথা শোনাবে। অন্যথায় তারা আমাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলবে। এসব ভেবে আমি সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসি। তিনি আরো বলেন, এটা একেবারেই অমানবিক শাস্তি। এ ধরনের নির্যাতন কোনো মানুষই সহ্য করতে পারে না। কেবল সমকামী হওয়ার কারণে এ ধরনের সাজা কাউকে দেয়া ঠিক নয়।

আরেকজন বলেন, সেখানে কেবল সমকামীদের ক্ষেত্রেই সমস্যা নয়। অন্যরাও সেখানে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। সেখানে নারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ওই জুটিকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা কয়েকজন সমকামী পরিচিত ছিলাম। আমার বাঁচার উপায় খুঁজছিলাম। সে ক্ষেত্রে ব্রুনাই ছেড়ে অন্যত্র চলে আসার বিকল্প খুঁজে পাইনি।

উল্লেখ্য, ব্রুনাই সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিপূর্ণ ইসলামি শরীয়া ভিত্তিক আইন চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এ আইন অনুযায়ী দেশটিতে, সমকামী অপরাধে জড়িত, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননাকারীদের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।

এছাড়াও শরীয়া আইনে চুরি ও গর্ভপাতের শাস্তি হিসেবে অঙ্গচ্ছেদের বিধান থাকছে। ১৮ বছরের কম বয়সী মুসলমান শিশুদের ‘ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের’ জন্য “প্ররোচিত বা উত্সাহিত’ করাটাকে অপরাধমূলক দণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইন বেশিরভাগ মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যদিও কিছু দিক অমুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ব্রুনাই এর সুলতান হাসান আল-বলখাই বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আমি ইসলামিক শিক্ষাকে এই দেশে শক্তিশালী করতে চাই। দেশটি প্রথম শরীয়া আইন চালু করে ২০১৪ সালে। তখন সাধারণ ও শরীয়া দু’ধরনের আইনই বহাল রাখা হয়। এখন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন এই দণ্ডবিধি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন সুলতান। প্রথম দফায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের মতো শাস্তি সমূহ ২০১৪ সাল থেকে চালু করা হয়। তখন অঙ্গচ্ছেদ ও পাথর নিক্ষেপের মতো আইনগুলো পরবর্তী দুই ধাপে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল।

সুলতান শাসিত দ্বীপ রাষ্ট্র ব্রুনাই বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ। তারা বিপুল পরিমান তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে থাকে। সুলতান এর বয়স বর্তমানে ৭২ বছর। যিনি ব্রুনাই এর বিনিয়োগ সংস্থার প্রধান। বিশ্বের কিছু শীর্ষ হোটেলের মালিক তিনি। যার মধ্যে রয়েছে লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেল ও লস অ্যাঞ্জেলসের বিবিয়ারলি হিলস হোটেল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button