রাজউকের পরিদর্শণ

রাজধানীর ৭০ শতাংশ বহুতল ভবনই ত্রুটিযুক্ত

হামিম উল কবির: রাজধানীর অধিকাংশ বহুতল ভবন ত্রুটিযুক্ত। রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করেছে এমন ভবন হাতে গোনা যাবে। এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের পর রাজউক রাজধানীর সকল বহুতল ভবনগুলো পরীক্ষা করে কম ভবনই ত্রুটিহীন পেয়েছে। গত সোমবার থেকে রাজউকের ২৪ টিম ঝুকিপুর্ণ ভবন চিহ্নিত করার কাজ করছে। বুধবারও বিভিন্ন রাজউকের বিভিন্ন জোনে পরিদর্শণে গেছে রাজউক। রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিনদিনে তারা ৭০ শতাংশের বেশি ভবনে কোনো কোনো ত্রুটি পেয়েছেন। বড় ধরনের ত্রুটি পেয়েছেন ৫০ শতাংশের বেশি ভবনে।

গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ জেলার কিছু অংশসহ রাজধানীকে রাজউক আটটি জোনে ভাগ করেছে। প্রত্যেকটি জোনেই রাজউকের পরিদর্শণ টিম কাজ করছে ঝুঁকিপুর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে। রাজউকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, খুব দু:খের সঙ্গে জানাচ্ছি যে পরিদর্শণে আমরা ত্রুটিহীন ভবনই পাচ্ছি না। যেমন নকশায় ১০তলার অনুমোদন থাকলেও আরো দুই তলা বাড়িয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। আবার নকশা অনুসরণ করলেও প্রশস্ত সিড়ি নেই। বারান্দাটি চলে গেছে রাস্তার উপর।

২০১৬ সালে ভবনটি তৈরি করা হলেও তা করা হয়েছে ২০০৬ সালের আগের নকশা অনুযায়ী। এখানে দোষের কি হলো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রথম সমস্যাটি হলো-২০০৬ সালের অনুমোদিত নকশাটি ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে করা হয়েছে। ওই বিধিমালায় ভবনের সামনে পেছনে ও দুই পাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল না। দ্বিতীয় সমস্যাটি হয়েছে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় অনুমোদিত নকশা ২০১০ সালের মধ্যেই নির্মাণ করতে হবে। তা ২০১৬ সালে নির্মাণ করা যাবে না।

ওই পরিচালক জানান, পরিদর্শণে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথ ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি অধিকাংশ ভবনে। আবার বেজমেন্টে নেই গাড়ি পাকিং স্থান হলেও গাড়ির সাথে রাখা আছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো বেজমেন্টে রাখা হচ্ছে জেনারেটর। জেনারেটরের থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়লে গাড়িতেও সহজে লেগে যেতে পারে। আর কে না জানে যে গাড়িতে অকটেন ও পেট্রলের মতো উচ্চ দাহ্য জ্বালালী মজুত থাকে সব সময়। গাড়ি আগুন লেগে গেলে পুরো ভবনেই তা ছড়িয়ে যাবে স্বল্প সময়ে। নিয়ম বহির্ভূত এমন ত্রটিপূর্ণ অসংখ্য ভবনের দেখা মিলেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। পরিদর্শণে দেখা গেছে, নকশায় সিড়ি ও লিফট যেভাবে চিহ্নি করা হয়েছে বাস্তবে সিড়ি ও লিফট রয়েছে বিপরীত পাশে। ভবনের নিরাপত্তার জন্য যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভহুতল ভবনগুলোতে দুইটি লিফট ও বিপরীত পাশে দুইটি সিড়ি থাকা নকশায় বাধ্যতামূলক করা হলেও বাস্তবে পাওয়া যাচ্ছে একটি মাত্র সিড়ি ও লিফট। গ্রাউন্ডফ্লোর যেভাবে খোলামেলা ও প্রশস্ত থাকার কথা নকশায় বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ গ্রাউন্ড ফ্লোরই ব্যবহার হচ্ছে এবং বানিজ্যিক কাজে। গত তিন দিনে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে ৮০টির ভবন পরিদর্শন করেছে রাজউকের ২৪ টিম। রাজউকের কর্মকর্তারা ভবনগুলোর নকশা সংগ্রহ করে নেন পর্যালোচনা করে দেখার জন্য যেন প্রতিবেদন দিতে সহজ হয়।

রাজউক তাদের পরিদর্শণে যেসব ভবনে ত্রুটি পেয়েছে সাথে সাথে ভবন মালিককে নোটিশ দিয়েছে ত্রুটি চিহ্নিত করে। রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে ত্রটি পাওয়া যাচ্ছে গুলশান-বণানীর বহুতল ভবনগুলোতে। এসব ভবনের মালিকদের প্রায় সকলই নানাভাবে প্রভাবশালী। এদের কারো কারো রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এরা ইচ্ছামতো নকশা ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে। কারণ এসব প্রভাবশালীদের রয়েছে সবকিছুই ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা। রাজউককে এরা কোনো সমস্যাই মনে করেন না।

বণানীতে একটি ভবন পাওয়া গেছে যারা অনুমোদনের কোনো কাগজই দেখাতে পারেনি। আরেকটি ভবনের মালিকদের খুঁজে পেলেও তারা নকশা দেখানো কথা বলে বলে চলে গেছে। রাজউকের কর্মকর্তারা তাদের খুঁজে পাননি। এ ধরনের বড় ধরনের ত্রুটি পাওয়া গেছে গুলশান -বনানীর ভবনগুলোতে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে চাননি। একজন পরিচালক জানিয়েছেন, তারা এখন কোনো তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত। একবারে প্রকাশ করবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button