যে কোনো সময় দূতাবাস থেকে বহিষ্কৃত হবেন অ্যাসাঞ্জ
উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে যে কোনো সময় বহিষ্কার হতে পারেন। উইকিলিকসের এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানা গেছে। অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করতে ইকুয়েডরের সাথে ব্রিটেনের একটি চুক্তি হয়েছে বলেও ওই টুইটে দাবি করা হয়। ২০১২ সাল থেকে লন্ডনের এ দূতাবাসেই অবস্থান করছেন উইকিলিসের এ প্রতিষ্ঠাতা।
উইকিলিকসের এক টুইটে বলা হয়, আইএনএ পেপার অফশোর কেলেঙ্কারি’তে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দেশটির এক আইনপ্রণেতার ফাঁস করা আইএনএ পেপারে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পায়। এসব নথি উইকিলিকসে প্রকাশিত হয়েছে।
ইকুয়েডরের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তাকে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই দেশটির লন্ডন দূতাবাস থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়ে গেছে। এদিকে অনলাইনে এ বহিষ্কার ও গ্রেফতার ঠেকানোর আহ্বান জানানো হলে বিক্ষোভকারীরা পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত এ দূতাবাসের সামনে জড়ো হন।
গত মঙ্গলবার ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, লন্ডন দূতাবাসে আশ্রয়ের শর্ত ‘বারবার ভঙ্গ’ করছেন অ্যাসাঞ্জ। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পারিবারিক ছবি প্রকাশের জন্য উইকিলিকস ও অ্যাসাঞ্জকে দায়ী করেন মোরেনো।
তিনি আরো বলেন, কারো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা ফোনে আড়ি পাতার অধিকার অ্যাসাঞ্জের নেই। অন্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অধিকারও নেই তার, বিশেষ করে ওইসব দেশের যাদের সঙ্গে ইকুয়েডরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।” এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অ্যাসাঞ্জকে ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণ মওকুফ চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই উইকিলিকস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়ে চলেছে। ২০১০ সালে পেন্টাগন ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেন অ্যাসাঞ্জ। যার মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধসম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল। যা মার্কিন সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
তখন থেকেই তাকে ঠেকানোর পথ খুঁজতে থাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এরপর সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। অ্যাসাঞ্জ এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তার আশঙ্কা ছিল, সুইডেনে গেলে সুইডিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করবে। অন্যদিকে মার্কিন সরকার তাকে হাতে পেলেই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে প্রহসনের বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
এ কারণে ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তিনি ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বের হলে সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ না করার নিশ্চয়তা চান। এ অবস্থায় গত বছর সুইডিশ প্রসিকিউটররা ওই অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করে দেন। তবে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ইকুয়েডর সরকার শুরু থেকেই অ্যাসাঞ্জকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে গেছে। এমনকি ২০১৮ সালের শুরুর দিকে তাকে ইকুয়েডরের নাগরিকত্বও দেয়া হয়ছে।
তবে এ বছরেরই মার্চে দূতাবাসের ভেতর অ্যাসাঞ্জের বেশ কিছু সুবিধা রহিত করা হয়। কেটে দেয়া হয় তার ইন্টারনেট সংযোগ। তাকে তার চিকিৎসা খরচ এবং পোষা বেড়ালের জন্য পরিচ্ছন্নতার খরচ দিতেও বলা হয়। যার বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্ত হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। উভয় আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দেয়।