বৃটেনে সিলেটের মেয়ে সায়মার বিরল সাফল্য
সিলেটের মেয়ে সায়মা। লন্ডনে পিএইচডি গবেষক। পিতার কর্মসূত্রে তিনি বৃটিশ নাগরিক। সম্প্রতি বিরল সাফল্য দেখিয়েছেন এই তরুণ গবেষক। সায়মা বেগম ও তার দল উদ্ভাবন করেছে ফ্লু ভাইরাসের ইউনিভার্সাল ভ্যাকসিনের নয়া ফর্মুলা। যা ফ্লু সংক্রান্ত মৃত্যু রোধে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
এ ফর্মুলা অনুসারে খুব অল্পদিনের মধ্যেই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এটা সব ধরনের ফ্লু প্রতিরোধে সক্ষম হবে এবং বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যু হ্রাসে সহায়ক হবে। সায়মার পৈতৃক বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামে। তার বাবা বৃটিশ মেডিকেল ডোনার বদরুল আমীন। ২৬ বছর বয়সের চিকিৎসা বিজ্ঞানী সায়মা মাস্টার্সে সেরা রেজাল্ট করে পিএইচডির জন্য এমআরসির বৃত্তি পেয়েছেন। সায়মা তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, তাদের এ গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বমানবতা উপকৃত হবে। তিনি বলেন, এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তার সাফল্য অব্যাহত রাখতে তিনি সবার দোয়া কামনা করেছেন।
ফর্মুলা উদ্ভাবন ছিল সায়মার পিএইচডি গবেষণার বিষয়। এ গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক অজিত লালভানি। এই পিএইচডি গবেষণায় অর্থায়ন করেছে বৃটিশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (এমআরসি)। ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জন্য দায়ী ফ্লু ভাইরাস। ১৯১৮-১৯১৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। ভয়াবহ এ মহামারীকে তখন নাম দেওয়া হয় স্প্যানিশ ফ্লু। এরপর বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু অন্যতম। এ ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষমতা হচ্ছে নিজের পোষক পরিবর্তনের ক্ষমতা। ভাইরাসের পৃষ্ঠ থেকে বহিঃসৃত প্রোটিন পরিবর্তন করতে সক্ষম ইনফ্লুয়েঞ্জা। ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকরা মূলত ভাইরাসের সেই মর্মবস্তুকে নিয়েই গবেষণা শুরু করে তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যেহেতু অনবরত পোষক পরিবর্তনে সক্ষম, তাই মৌসুমি ফ্লু ভ্যাকসিন কাজে আসে না। নতুন ভ্যাকসিন দরকার হয়। ইউনিভার্সাল ফর্মুলার ভ্যাকসিনটি সব ধরনের ফ্লু প্রতিরোধে সক্ষম হবে। সায়মা ও তার দলের দীর্ঘ গবেষণার ফলেই এ ফর্মুলা উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এ ভ্যাকসিনের বিষয়ে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক লালভানি নিজেই বলেছেন, সায়মাসহ তার দলের এই উদ্ভাবন বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে মানুষের জীবন রক্ষা পাবে। ইউনিভার্সাল ফ্লু ভ্যাকসিনের ফর্মুলা উদ্ভাবনের বিষয়টি বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘ন্যাচার মেডিসিনে’ প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।