‘জামায়াতের বোঝা ৭১ পরবর্তী প্রজন্মের বহন করা উচিত নয়’
জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের নতুন মঞ্চ ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’
‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু। ‘স্বাধীন সত্তার বিকাশে অধিকার ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন তিনি। মূলত জামায়েতের বহিষ্কৃত ও সংস্কারপন্থীরা একত্র হয়েছেন এ নতুন উদ্যোগের সঙ্গে। আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর হোটেল ৭১ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ উদ্যোগের ঘোষণা দেন মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেন, ‘প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক ধারা বা দলের অনুসারী কিংবা অনুরক্ত নই। এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগ, একটি স্বতন্ত্র ধারা। জামায়াতে ইসলামীসহ বিদ্যমান কোনো দলের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জাতীয় জীবনের সকল অর্জন ও ঐক্যের জায়গাগুলো সমন্বিত করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করা প্রয়োজন।’
এজন্য অন্তত তিনটি বিষয়ের ওপর জাতীয় ঐক্যমতের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণপ্রতিরক্ষা; মানবাধিকার, সুশাসন ও জবাবদিহিতা; অর্থনৈতিক উন্নতি, সমতা এবং কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতির পূণর্বিন্যাস ও রাষ্ট্রের পূণর্গঠনে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টিতে কাজ করব।’
জামায়াতের বহিষ্কৃত এ নেতা বলেন, ‘যারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবেন কিংবা চিন্তা ও কর্মপন্থায় একমত পোষণ করবেন, তাদের সকলকে নিয়ে এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলব। আলোচনা, পর্যালোচনা করে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি, লক্ষ্য ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করব। শনিবার (২৭ এপ্রিল) থেকে আমাদের কাজ শুরু হল।
আমরা আশাবাদী, যথাসময়ে ইশতেহার, সাংগঠনিক কাঠামো এবং এতে যুক্ত নেতৃবৃন্দের কার কি দায়িত্ব তা জানাতে জাতির সামনে হাজির হতে পারব। যার ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে স্বাধীন সত্তায় বিকশিত হওয়ার রাজনীতি; মানবিক সম্ভাবনার বিকাশ, সমৃদ্ধ ও কল্যাণরাষ্ট্র নির্মাণের সামষ্টিক সংগ্রাম। এই রাজনৈতিক দল হবে সত্যিকার অর্থে ইনক্লুসিভ ও একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন রাজনৈতিক কার্যক্রম।’
এ সময় সাবেক সেনা সদস্য মাওলানা আব্দুল কাদের, তরুণ ব্যবসায়ী নাজমুল হুদা, ব্যরিস্টার জুবায়ের আহমেদ ভুইয়া, সাবেক বিমান বাহিনীর সদস্য সালাউদ্দিন, ব্যরিস্টার তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
‘জামায়াতের বোঝা ৭১ পরবর্তী প্রজন্মের বহন করা উচিত নয়’
জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকায় রাজনৈতিক অবস্থানের বোঝা ৭১ পরবর্তী প্রজন্মের বহন করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক কর্মপরিষদ সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জু।
তিনি বলেছেন, ‘দল হিসেবে জামায়াত মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দলের ভূমিকার জন্য দায়দায়িত্ব স্বীকার এবং ঐতিহাসিক ক্ষত উপশমে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবিকে বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে।’
মঞ্জু বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য তখন (স্বাধীনতা যুদ্ধে) কিছু মানুষ রাজনৈতিকভাবে পক্ষাবলম্বন করেছিল পাকিস্তানের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতীয় ঐক্যের ওই শীর্ষবিন্দুতে ঐতিহাসিক সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও ক্ষুদ্র একটি অংশ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দিতে এবং তাতে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছিল। কতিপয় ধর্মীয় দল ও বামপন্থীদের একটি ধারার সেই ব্যর্থতা জাতীয় ইতিহাসে এক মলিন অধ্যায় ও ক্ষত সৃষ্টি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সকলের গর্বিত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। একে বিভেদ ও সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহারের যে কোনো প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে ইতিহাসের মীমাংসা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে সমস্ত অভিযোগ তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন বিচার প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, ‘যেহেতু আমি সেখানে (জামায়াতে ইসলামী) নেই তাই তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। তালাক দেওয়ার পর আগের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’
জামায়াত ভেঙে আসছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাঙা গড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, বাংলাদেশে ভাঙা গড়ার রাজনীতির ভবিষ্যত ভালো না। এটা সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোগ। যেখানে দল মত নির্বিশেষে সকলকে আহ্বান জানানো হবে।’
ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আপনাদের সঙ্গে থাকছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আমাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। তবে আমরা অনেকের মতামত পরামর্শ নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নেব।’
সরকারের মদদে আপনারা নতুন দল গঠন করছেন কিনা জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের সন্দেহ সংশয় নিয়ে চলতে পারব না। কারও ইচ্ছায় বা কারও মদদে আমরা আসছি না।’
‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ শ্লোগানে স্বাধীন সত্তার বিকাশে অধিকার ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির মূল ধারাকে সামনে রেখে নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের যাত্রা শুরু হবে বলেও জানান তিনি।