চিরনিদ্রায় শায়িত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ

কেন্দ্রীয় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। রাজধানীর গ্রিন রোড ডরমেটরি মসজিদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় তার মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা এই পরিবেশবিদ ও লেখককে শেষ শ্রদ্ধা জানান রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
আজ বাদ আছর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে মাহফুজ উল্লাহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিকল্পধারার শমশের মবিন চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাপার মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহফুজ উল্লাহর বড় ভাই অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহর ছেলে মোস্তফা হাবীব অন্তিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কবি আবদুল হাই সিকদার, সাংবাদিকদের মধ্যে- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপি, কামালউদ্দিন সবুজ, বর্তমান সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা অংশ নেন। পরে জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এর আগে দেশের রাজনীতিক, সুধীজনদের পাশাপাশি পারিবারিক আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে আজ বাদ জোহর রাজধানীর গ্রিন রোড ডরমেটরি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর প্রথম জানাজা। জানাজায় মাহফুজ উল্লাহর অগ্রজ অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, তার সন্তান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস দুলু, তাবিথ আউয়াল, সাবেক কূটনীতিক হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার ইজাজ আহমেদ, জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাসাসের সিনিয়র সহ সভাপতি বাবুল আহমেদ, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান অংশ নেন। দেশের বিশিষ্ট এই সাংবাদিক শনিবার সকাল ১০টার দিকে (ব্যাংকক সময় ১১টা ৫ মিনিট) ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

শনিবার মধ্যরাতে তার মরদেহ দেশে পৌঁছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার বেয়াই নাজমুল হক মরদেহ গ্রহণ করেন। সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালের হিমঘরে তার মরদেহ রাখা হয়। এদিকে রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে মাহফুজ উল্লাহর মরদেহ নেয়া হয় তার কলবাগানের বাসায়। সেখানে বিএনপি নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন শেষবারের মতো দেখতে ছুটে যান। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান স্মৃতিচারণ করে সাংবাদিকদের বলেন, মাহফুজ উল্লাহর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় চীনে। ১৯৭০ সালের দিকে চীনের বেইজিংয়ে আমি একটি ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমি মেজর, মাহফুজ উল্লাহ তখন একটি রেডিওতে কাজ করতেন। তিনি ওই রেডিওতে রাজনৈতিক ভাষ্যকার ছিলেন। তিনি আমার একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন।’
উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম পথিকৃৎ কমরেড মুজফফর আহমেদের দৌহিত্র ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মাহফুজ উল্লাহ পেশাগত জীবনে সাংবাদিক ও শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। দেশের প্রথম পরিবেশ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের বাংলাদেশি প্রথম নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করার পাশাপাশি টকশোতে সাহসী উচ্চারণের জন্য সম্মানিত ছিলেন। রাজনীতিসহ ইতিহাস বিষয়ে ৫০টির বেশি বইয়ের লেখক তিনি।
এদিকে বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠন আওয়াজ-এর সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শাহিদা রফিক।
উল্লেখ্য, প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ শিক্ষাজীবনে প্রফেসর ড. শাহিদা রফিকের সহপাঠী ছিলেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান আলহাজ ক্বারী আবু তাহেরসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুর খবর নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছে তিনি গত রবিবার ২১ এপ্রিল দুপুরে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। সন্ধ্যার দিকে তার বড়ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ জানান, তারা কোন সূত্র থেকেই মৃত্যুর খবর জানতে পারেননি। চিকিৎসকরাও নিশ্চিত করে পরিবারকে কিছু বলেনি। তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button