আরব লিগের হালচাল

মো: বজলুর রশীদ: সম্প্রতি আরব লিগের ৩০তম শীর্ষ সম্মেলন তিউনিসিয়ায় শেষ হলো। আরব লিগ আদৌ থাকবে নাকি ভেঙে যাবে, এমন এক সঙ্কটময় সময়ে এই সম্মেলন হলো। আরবরা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্যা নিজেরাই সমঝোতার মধ্যে শেষ করবে, এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নানা প্রশ্ন ও সমস্যা সামনে নিয়ে এবারের এই সম্মেলন। বয়স্ক আরব নেতারা এরকম সম্মেলনে প্রায়ই একটু নাকি ঘুমিয়ে নেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই যে উদ্দেশ্য নিয়ে আরব লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা এখন কার্যত নেই। অন্তত আরব লিগের চার্টার দেখে তা মনে হয়।

এসব সত্ত্বেও গত মার্চের শেষের আরব লিগ সম্মেলনকে ঘিরে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। সম্প্র্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা, গাজায় ইসরাইলের বোমা বর্ষণে আরব রাষ্ট্রগুলোর যৌথ উদ্যোগ নেয়ার প্রসঙ্গ, সিরিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশে জনরোষ ও বিক্ষোভ, আরব বিশ্বে মহিলাদের অবস্থান ও নারী অধিকার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া; এমন সব বিষয়ে যথোচিত উদ্যোগের আশা নিয়ে আরব বিশ্বের জনগণ ও মুসলিম বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। সন্ত্রাসবিরোধী সাম্প্র্রতিক যুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের শোচনীয় পরাজয় নিয়ে যত ভাবা হোক না কেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি নির্যাতন এবং এই নির্যাতনে আমেরিকার অকুণ্ঠ সহায়তা, কিছু আরব রাষ্ট্রের পাশ্চাত্য ও ইসরাইলপ্রীতি অনেক আরবের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন আরবদের নিজেদের ইউনিয়ন তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছিল।

তবে এর উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। একটি করে আরব দেশের সাথে কথা বলে সামনে এগোনোর চেয়ে একটি ফোরামের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ। ওই সময় ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়া মুখ্য বিষয় ছিল, আবার পাশ্চাত্য শক্তি ফিলিস্তিনি ভূমিতে অন্যায়ভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ার তরী রাজনীতির মহাসাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে যা এখনো ভেসেই চলেছে।

আরব বিশ্বের কাছে এই শান্তি প্রক্রিয়ার বিবদমান পক্ষের জন্য দুটি রাষ্ট্র বানানো, অর্থাৎ টু-স্টেট থিওরি গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ, আরবরা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে এবং ইসরাইল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে এটাই এ থিওরির মূল কথা। আরব বিশ্ব রাজনীতির এই ঘূর্ণিচক্রে কয়েক দশক কাটিয়ে দিলো। শুধু আশা এবং আশা। ‘টু-স্টেট’ এখন আর নেই, মৃত অবস্থায় আরব লিগের রাজনৈতিক মঞ্চে তা পড়ে আছে, এখন যেন মৃতদেহ সৎকারের উদ্যোগ চলছে। এখন চলছে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তোড়জোড়। ফিলিস্তিনিদের পাইকারিভাবে হত্যা করার পর যারা বেঁচে থাকবে, তাদের বৃহত্তর ইসরাইলের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে থাকতে হবে। এটাকে বলা হচ্ছে ইসরাইলের ‘ওয়ান-স্টেট’ থিওরি। এটা কার্যকর হলে ফিলিস্তিনিদের কোনো নিজস্ব রাষ্ট্র থাকবে না। বিশ্লেষকেরা এটাকে বলছেন ‘নো-স্টেট থিওরি’। এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বছরের মে মাসে আল-কুদসকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন, তদুপরি সম্প্রতি সিরিয়ার গোলান মালভূমি ইসরাইলের বলে ডিক্রি জারি করেছেন। অদূর ভবিষ্যতে এতে যোগ হবে পশ্চিম তীর, গাজা, জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ। এভাবে আরব বিশ্বকে শাসন করবে ইসরাইল এবং তাকে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

গত বছর ৯ ডিসেম্বর আরব লিগ ট্রাম্পের জেরুসালেম ঘোষণাকে নিন্দা জানিয়েছিল। আরব লিগ সতর্কবার্তা প্রেরণ করেছিল এই বলে যে, ট্রাম্পের কারণে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় মোড়ল হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজায় চরম দুর্ভোগ নেমেছে ইসরাইলি বোমাবর্ষণ ও নিপীড়নের কারণে। এর পরই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সৌদি যুবরাজ বিন সালমান বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান আরো জোরদার করতে।

‘জেরুসালেম ঘোষণার’ পর ওআইসি সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ‘ইসলামী সেনাবাহিনী গঠনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক দেশ তাতে গা করেনি। এই সেনাবাহিনী আর গঠিত হলো না। এদিকে দখলকৃত গোলান মালভূমি ফেরত পাওয়ার জন্য কোনো কিছুই হয়নি। তার ওপর সেটাকে ‘ইসরাইলি ভূখণ্ড’ বলে ঘোষণা দেয়া হলো। এই ঘোষণা দেয়ার আগ থেকেই তোড়জোড় চলছে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য। আরব লিগ তাদের আগের কাহিনী যেন ভুলেই গেছে। কিভাবে আরব ভূমিতে ইসরাইল নামের একটি বিষফোঁড়া জন্ম নিয়েছে তা যেন মনেই নেই।

এই সংস্থার ওপর আরব জনগণের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে, তারা বিশ্বাসযোগ্যতাও হারাচ্ছেন। অনেক আরব রাষ্ট্র অভিন্ন শত্রু ইসরাইলের ইস্যুতে নমনীয়। কয়েক বছর ধরে গোপনে, এখন প্রকাশ্যে এসব সম্পর্কের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এসব কারণে সদস্য আরব দেশগুলো নানা হিসাব-নিকাশ করছে। ইরানোফোবিয়া নিয়ে কয়েকটি দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ তারা আরব লিগের চেয়ে ইসরাইলি শিবিরকে বেশি পছন্দ করছে। সিরিয়ার আরব লিগে ফিরে যাওয়া অনেক আরব দেশ পছন্দ করছে না।

এবার সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম আল আসসাফ আগের ধারায় ইরানবিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন, ইরানকে ‘আঞ্চলিক বিভেদকারী শক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিলেন সেক্রেটারি জেনারেলও সৌদি বক্তব্যের সমর্থনে বহু সময় নষ্ট করেন। মনে হচ্ছিল এটি ইরানবিরোধী ন্যাটো জোটের কোনো সম্মেলন। কিছু আরব দেশ এসব বক্তব্যকে স্বাগত জানায়। এসব দেশ নিয়মিত ‘আরবি সুইটেনার’ পেয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ সদস্য এসব বক্তব্যে বড় নাখোশ। আরব লিগ সম্মেলনের জৌলুস শুরুতেই ম্লান হয়ে যায়। লিগে সিরিয়ার ফিরে আসার বিষয়ে জানুয়ারিতে আম্মানে সৌদি আরব, বাহরাইন, আরব আমিরাত ও কুয়েত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন সেটাই বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরব লিগের যেন নিজস্ব গুরুত্ব নেই। আগেই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়। একপক্ষ অপর পক্ষ বা অন্যদের যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। আরব বিশ্ব ও মুসলিম বিশ্ব মনে করে সৌদি আরব এ অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থকে প্রতিফলিত করছে। দেখে মনে হচ্ছে, ইয়েমেনে অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা ও সমাধান বের করা যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-সানি উদ্বোধনী সভার পরপরই সম্মেলন ত্যাগ করে তিউনিসিয়া ছাড়েন। উদ্বোধনী আসরে তার বক্তব্য দেয়ার কথা। তিনি ওসব বাদ দিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। মিডিয়ায় তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিউনিসিয়া কর্মকর্তারা জানান, আরব লিগের সেক্রেটারি জেনারেল বক্তব্য দেয়ার সময় শেখ তামিম সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। ২০১৭ সাল থেকে কাতারকে সৌদি আরব, মিসর, আমিরাত ও বাহরাইন, যারা সবাই আরব লিগের সদস্য, অবরোধ দিয়ে রেখেছে এবং মাঝে মধ্যে কাতারবিরোধী বড় ধরনের শোডাউন করছে। সৌদি ব্লক কাতারকে ‘চরমপন্থা প্রচার’ ও ‘ইরানের কাছাকাছি থাকা’র জন্য অভিযুক্ত করেছে। এ ছাড়া নিজ দেশে বড় ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার কারণে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতেফ্লিকা এবং সুদানের ওমর আল বশীর সম্মেলন ত্যাগ করেন। তারা এখন ক্ষমতাচ্যুত। এই দু’জনের কারো পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব নয়। এরা তাদের দেশের সমস্যার সমাধান এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কোনো আকর্ষণীয় ‘সমর্থন’ সম্মেলনে দেখতে পাননি। সম্মেলনে ২২ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৩টি দেশ উপস্থিত হয়। তাদের মধ্যে তিন সদস্য চলে যাওয়ার পর মাত্র ১০টি দেশ হাজির ছিল।

এর আগে আরব লিগের সম্মেলন হয়েছিল বৈরুতে। মাত্র তিনটি দেশ সেখানে উপস্থিত ছিল। তারা হলো- লেবানন, কাতার ও মৌরিতানিয়া। বলা হলো, লেবাননের অভ্যন্তরীণ প্রচণ্ড রাজনৈতিক চাপ এবং সম্মেলনের নিরাপত্তার কারণে অন্যান্য দেশ অনুপস্থিত ছিল। এর আগে মার্কিন প্রশাসনের অন্যতম কাণ্ডারি মাইক পম্পেও লেবাননে আসেন এবং ইরানবিরোধী উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। অনেকে দেশ ওই বক্তব্যকে সম্মেলনবিরোধী বলে ধরে নেন এবং সম্মেলনে আসা থেকে বিরত থাকেন। আরব লিগের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করা প্রায়ই তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ইরানের পরম বন্ধু। আরব লিগ ও যুক্তরাষ্ট্র চায় না সিরিয়া আবার আরব লিগে আসুক। কিন্তু কার্যত তাই হলো। আরব লিগের ভিশনের সম্পূর্ণ বিরোধী হলেও মিসরের সামরিক একনায়ক সিসি ২০১৭ সাল থেকে ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলছেন। অনেক সমালোচক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকে এমনভাবে সংযুক্ত হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকেও আরব লিগের সদস্যপদ দেয়া দরকার!

ইসরাইল ইতোমধ্যে কিছু আরব দেশ ও মিসরকে হাত করতে পেরেছে ফলে আরব লিগের বিশ্বাসযোগ্যতার অবশিষ্ট নেই। অথচ আরব দেশগুলো একত্রে থাকতে হবে নিয়ামক ইসরাইলের আগ্রাসী অস্তিত্বের কারণেই। আরব ইসরাইল যুদ্ধগুলো, ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন, ভূমি দখল প্রক্রিয়া, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরবদের শোচনীয় পরাজয়, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি- এসব আরব বিশ্বকে চাঙ্গা রেখেছে বলে মনে হয়। ইরান বিপ্লবের পর মুসলিম বিশ্ব ও আরব বিশ্বে পরিবর্তন এসেছিল। রাজনীতির ধারাকে ইরান পশ্চিমাবিরোধী অস্ত্রে শান দিতে চেয়েছে। শিয়া মতবাদের প্রচার, ‘শিয়া ক্রিসেন্ট’ তৈরি, সৌদি আরববিরোধী বলয় তৈরি এসব বিষয় অনেকে এগিয়ে নিয়ে এসে আঞ্চলিক মুসলিম দেশগুলোকে আরো বিষাক্ত করে তুলেছে। ইরানের ইস্যু প্রাধান্য পাওয়ার ফলে, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও সুন্নি বিশ্ব ভিন্ন ভিন্ন বলয় তৈরি করে তপ্ত আগুনে ঘি ঢালছে।
অবস্থা দেখে আশঙ্কা হয়, আরব বিশ্বে সঙ্কট তৈরি হতেই থাকবে। ইসরাইল ও আমেরিকা এটার ছক কষে বসে আছে। জেরুসালেম দখল বা গোলান ইসরাইলের বলে ঢোল পেটানো কি হঠাৎ করেই ঘটেছে? গোলান দখল করা হয়েছে ৫২ বছর আগে।

জেরুসালেম দখল করার ঘোষণা এখন হলেও কাজ শুরু হয়েছিল ইসরাইল জন্মের শুরু থেকে। আরো আরব ভূমি দখল, বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র বানানো এবং এক রাষ্ট্র পলিসির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব উদ্দেশ্য কার্যকর করতে আরব বিশ্বে আরো যুদ্ধ ও বিরোধ লাগানো দরকার মনে করা হচ্ছে, নতুবা ইসরাইলের পথ চলা সহজ হবে না। যুদ্ধ চললে লাগবে অস্ত্র তখন মরবে মানুষ যখনই আরব লিগের কোনো সভা হয়, সেখানে সহযোগিতার পরিবর্তে বিরোধিতা ও বিভাজন বেশি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। কিছু দেশ, যা বলে তাই পাস হয়ে যায়। তাই সম্মেলনে কোনো টেনশন থাকে না। ভালো খাওয়া-দাওয়ার পর অনেকে, কেউ ঝিমিয়ে বা ঘুমিয়েও নেন।

আরব লিগের নেতারা মূলত বাদশাহ, আমির, শেখ ও একনায়ক। তাদের হাতে আছে পেট্রোল ডলার, খনিজ সম্পদ ও নগদ অর্থ যা আরব দেশগুলোর অবকাঠামো ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যয় করতে পারেন। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ থাকলে এতদঞ্চলে কোনো উন্নয়ন হবে না। নিজে নিজে ক্ষমতায় বসা ও দীর্ঘদিন শাসন করার বাতিক এদের রয়েছে। জনগণ যেন তৃতীয় পক্ষ। উন্নয়নের পরিবর্তে মধ্যপ্রাচ্যে এখন আগুন জ্বলছে, মানুষ মরছে। কিন্তু আরব লিগের কোনো চেতনা বা জবাবদিহিতা নেই। ৭১ বছর আগে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরবদের ভূখণ্ডের ওপর। এতে ইন্ধন যুগিয়েছে পশ্চিমারা, ব্রাইটনরা দিয়েছে কুখ্যাত ‘বালফোর ডিক্লারেশন। এত দীর্ঘ দিনে অনেক কিছু করা যেত যদি আরব লিগের মেরুদণ্ড শক্ত ও সোজা থাকত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা যত দিন আরব লিগের দিকে তাকিয়ে থাকবে, ততদিন কোনো সুরাহা হবে না সঙ্কটের। হলে এর মধ্যেই হয়ে যেত। রাজনৈতিক মঞ্চে দৌড়ঝাঁপ করা মাহমুদ আব্বাসের কথা এখন কেউ আর বলে না। মনে হচ্ছে জীবিত থাকতেই তিনি ইতিহাসের পাতায় মৃত হয়ে গেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন কোনো প্রস্তাব এই মুহূর্তে টেবিলে নেই। এখন আরব লিগের বড় অ্যাজেন্ডা হলো- ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। আমেরিকাও বিশ্বব্যাপী সেনা মোতায়েন ও যুদ্ধ করছে একই ব্যানারে। জনৈক ইসরাইলি কূটনীতিবিদ বলেছেন, ‘আরবরা কখনো কোনো সুযোগ হাতছাড়া করে না।’ আরব লিগের ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি বেশি প্রযোজ্য।
-লেখক: অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button