ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

জয়ের ভিতটা আসলে গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা-ই। আরো ভালো করে বলতে গেলে অধিনায়ক মাশরাফি আর দীর্ঘদিন পর ছন্দে ফেরা মোস্তাফিজ। আর সেই সহজ কাজটাকেই শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। আর এই জয়ের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনায়সেই ৫ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করলো টাইগাররা। ক্যারিবীয়দের ২৪৭ রানের জবাব দিতে নেমে ১৬ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

সোমবার জয়ের জন্য ২৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ম্যাচের মতই দেখে-শুনে, ধীরে-সুস্থে ইনিংসের সূচনা করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। তবে প্রথম ম্যাচের মত এত বড় জুটি গড়তে পারেননি তারা। দু’জনের ব্যাটে ৫৪ রান ওঠার পরই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। অ্যাসলে নার্সের একটি ঘূর্ণি বল ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে মিস করে ফেলেন তামিম। ফলে বোল্ড হয়ে যেতে হয় তাকে। ২৩ বলে ২১ রান করে ফিরে যান তিনি।

এরপর সৌম্য সরকারকে নিয়ে ইনিংসের হাল ধরেন তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান। ৫২ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সাকিবও। আবারো সেই অ্যাসলে নার্স। নার্স এর একটি ঘূর্ণি বল খেলতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন রোস্টন চেজের হাতে। ৩৫ বলে ২৯ রান করে আউট হন সাকিব। তবে সৌম্য সরকার তার নিজের দায়িত্ব পালন করেন বেশ ভালো ভাবেই। তামিমের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটির পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে গড়েন ৫২ রানের জুটি। পরে ৬৭ বলে ৫৪ রান করে অবশেষে সেই নার্সের বলেই সুনিল আমব্রিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান সৌম্য।

এর আগে ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ওপেনার হিসেবে মাঠে নেমে আমব্রিস ও শাই হোপ শুরুটা ভালোই করছিলেন। কিন্তু ৫.৫ ওভারে মাশরাফির বলে স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেনে সৌম্য সরকার। আমব্রিস আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ২৩ রান সংগ্রহ করেন। ১০.৩ ওভারের দারুণ এক এলবিডব্লিউয়ের মাধ্যমে ড্যারেন ব্রাভোকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন মিরাজ। এর আগে ব্রাভো ১৩ বলে ৬ রান সংগ্রহ করেন।

২০তম ওভারের প্রথম বলেই মোস্তাফিজের শিকার হয় রোস্টার চেজ। মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার আগে ২৯ বলে ১৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি। আর ২৪তম ওভারের প্রথম বলেই আবারো উইকেটের দেখা পান কাটার মাস্টার। ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়েন জোনাথন কার্টার।

৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন হোপ। হাফসেঞ্চুরি করার পথে হোল্ডারের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়েন এই ওপেনার। কিন্তু তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। অধিনায়কের সঙ্গে ১০০ রানের জুটি গড়ে মাশরাফির শিকার হন হোপ। ৪২তম ওভারে ক্রমেই টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে ওঠা ওপেনার শাই হোপকে বিদায় করেন মাশরাফি।

উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হওয়া এই ক্যারিবীয়ান ১০৮ বলে ৬টি চার আর একটি ছক্কায় ৮৭ রানের ইনিংসটি সাজান। এরপর মাশরাফি বিদায় করেন উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডারকে। ৭৬ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ব্যক্তিগত ৬২ রান করে বিদায় নেন হোল্ডার।

এরপর ইনিংসের ৪৫তম ওভারে সাকিব ফিরিয়ে দেন ৭ রান করা ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে। ৪৯তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। নিজের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট করেন অ্যাশলে নার্সকে। ডিপ মিডউইকেটে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। একই ওভারের ৫ম বলে মোস্তাফিজের শিকার রেইমন রেইফার। মোস্তাফিজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে আউট হওয়ার আগে তিনি ১২ বলে ৭ রান করেন।

কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ৯ ওভারে একটি মেডেন ওভার ও ৪৩ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। টাইগার দলপতি মাশরাফি ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট। মেহেদি হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৪১ রানের বিনিময়ে পান একটি উইকেট। সাকিব ১০ ওভারে ২৭ রান খরচায় পান একটি উইকেট। সৌম্য সরকার ২ ওভারে ১৫ রান দিয়ে উইকেট পাননি। আবু জায়েদ রাহী ৯ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি।

ইতোমধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের আজ (সোমবার) সেই লক্ষ্যপূরণ করলো। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ক্যারিবীয়দের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের নিশ্চিত করলো মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button