রমজানের তুহফা আল কুরআন: অনন্য বৈশিষ্ট্যের জীবন্ত প্রতীক
মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ:): রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস ও নাজাতের মাস রমজান। রমজান সমস্ত মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এ মাসে আল্লাহ পাক বান্দাদের প্রতি এত অধিক অনুগ্রহ দান করেন, যা অন্য এগারটি মাসের অনুগ্রহের সমষ্টি থেকেও সহস্র গুণ বেশী। এ মাসে আল্লাহ পাক এমন একটি রজনী দান করেছেন, যে রজনীর ইবাদত এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এ মাসে একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। এ মাসের শবে-কদরে প্রথম কুরআন পাক নাযিল হয়। সুতরাং, এ মাসটিকে শবে-কদরের মাস, কুরআন পাক নাযিলের মাস, তওবা কবুলের মাস, দোযখ থেকে পরিত্রাণের মাস বলা যেতে পারে। এ মাসটি আল্লাহ পাকের নিকট সবচেয়ে মর্যাদাবান বলেই সমস্ত সহিফা এবং আসমানী কিতাব এ মাসেই নাজিল করেছেন। সমস্ত আসমানী কিতাবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ কিতাব হল আল কুরআন। এই আল কুরআনই কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। কারণ আল্লাহ পাক নিজেই এই কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন; “নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে নাজিল করেছি এবং আমিই এর হেফাজতকারী।”
আল্লাহ পাক হেফাজত করেছেন বলেই যুগের আবর্তন, বিবর্তন, পরিবর্তন ও বিধর্মীদের সকল প্রকার চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে গত চৌদ্দশ’ বছর থেকে আছে সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত। একটি অক্ষর, এমনকি একটি নোক্তা পর্যন্ত অবিকল আছে। আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি যে, এর একটি অক্ষর বেশী না কম হয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত এবাবেই থাকবে।
কুরআন পাকের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল কুরআন পাক প্রতি দিন কোটি কোটি মানুষ তেলাওয়াত করছে এবং লক্ষ লক্ষ হাফেজ কুরআনকে তাদের সিনায় ধারণ করে আছে। অন্য আসমানী কিতাবগুলো এভাবে পঠিত হয় না। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ঐ কিতাবগুলো পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় তার তরজমা, তাও একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। এক এডিশনের সাথে অন্য এডিশন মিলালে দেখা যায় কোনটা পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত আবার কোনটা বিকৃত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই যে, পরিবর্তন, পরিবর্ধন হল, এতে কারও কোন আপত্তি হয়নি। কিন্তু কুরআনের বেলায় এটি মোটেই সম্ভব নয়। এটি জের, জবর কম-বেশী হলে এই কুরআন আর কেউ গ্রহণ করবে না।
কুরআন কেন নাযিল হল: হুজুর পাক (সা:) এর পূর্বে যত নবী-রাসূল এই পৃথিবীতে আগমন করেছেন, প্রত্যেকের উপরই দায়িত্ব ছিল আল্লাহ পাকের অহদানিয়াতের দাওয়াত দেয়া। কিভাবে সে দাওয়াত দেয়া হবে এবং মানুষ কিভাবে আল্লাহ পাকের ইবাদত করবে তার পথ নির্দেশনা ছিল তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর এবং অন্যান্য সহিফাগুলোতে। তবে ঐ পথ নির্দেশগুলো সর্বকালের জন্য পরিপূর্ণ ছিল না। আর নবী-রাসূলগণও ছিলেন কউম, এলাকা বা গোত্রে সীমাবদ্ধ। সারা পৃথিবীর মানুষের হেদায়েতের দায়িত্ব তাঁদের উপর ছিল না। আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে যখন আল্লাহ পাক সারা পৃথিবীর জন্য প্রেরণ করলেন, তখন তার পথ নির্দেশনাও থাকতে হবে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের উপযোগী।
দ্বিতীয়ত, হুজুরে পাক (সা:) যেহেতু শেষ নবী, তাই তাঁর নিকট নাযিলকৃত গ্রন্থও হবে শেষ গ্রন্থ। কাজেই কিয়ামত পর্যন্ত যত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, তার সমস্ত সমাধানই থাকতে হবে এই গ্রন্থে।
আর একটি লক্ষণীয় দিক হল, আসমানী কিতাবগুলো পরিবর্তিত হতে হতে এমন এক পর্যায়ে এসে গিয়েছিল, যার মধ্যে আল্লাহ পাকের বাণীর খুব অল্প বাণীই অবশিষ্ট ছিল। যার ফলে ঐ সমস্ত কিতাব তাদের মূল বাণী হতে বিচ্যুৎ হয়ে হেদায়েতের পথে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। সুতরাং, আসমানী কিতাবের অকার্যকারিতা এবং শয়তানের বিরামহীন প্রচেষ্টায় বিশ্বটা হয়ে পড়েছিল এক নরককুন্ড। বিশ্ব মানবতা উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অপমানিত হয়ে চরম দুর্দিনে নিপতিত হয়ে পড়েছিল। জড়বাদ, বস্তুবাদ ও ভোগবাদের চটকদার কথায় মানুষ হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট ও আত্মবিস্মৃত। মানবতার এমনি সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ব মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ ও সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের জন্য আল্লাহ পাকের মহান দান স্বরূপ নাজিল হল কুরআন পাক। এতে রয়েছে আল্লাহ পকের সাথে মানুষের সম্পর্ক, হুজুরে পাক (সা:) এর সাথে সম্পর্ক, মানুষের কর্তব্য ও দায়িত্ব, রাষ্ট্রনীতি, ইতিহাস, সমাজ নীতি, যুদ্ধনীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা, বিজ্ঞান, ভূতত্ত, চন্দ্র, সূর্য, আকাশ, বাতাস, গ্রহ, নক্ষত্র থেকে শুরু করে জীবজন্তু, মানুষ সৃষ্টিসহ সকল যুগের সকল সমস্যার সহজ সমাধান ও পথ নির্দেশ।
আল কুরআনই আল্লাহর কালাম: (১) আইয়ামে জাহিলিয়াত যুগেও আরবে আরবী ভাষায় বহু পন্ডিত, কবি সাহিত্যিক ছিল। তারা আরবী ভাষায় গল্প-কবিতা লিখে গেছে, বর্তমান যুগেও ভাষাবিদদের নিকট তা প্রশংসিত হয়ে আসছে। সে সময়কার গল্প-কবিতাগুলো এখনও বিভিন্ন মাদ্রাসা, বিশ^বিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় আছে।
সে যুগে আরবে বাৎসরিক একটি মেলা হত, সেখানে আরবী সাহিত্য নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হত। তাকে বলা হত ‘উক্কাজের মেলা’। সে মেলায় কবিতা পাঠের আসর বসত। দেশ-বিদেশের বহু কবি সে মেলায় অংশ গ্রহণ করত। তাদের কবিতাগুলোর মধ্যে যেগুলো শ্রেষ্ঠ হত সেই কবিতাগুলো কাবা ঘরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হত। সারা বৎসর লোকেরা এই কবিতাগুলো পড়ত এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করত। এটিই সে যুগের প্রচলিত নিয়ম ছিল। হুজুরে পাক (সা:) এর যুগে এসে যখন কুরআন পাক নাজিল হতে শুরু করল, তখন একজন সাহাবী কুরআন পাকের একটি সূরা ‘আল কাউসার’ লিখে কাবা ঘরের সেই কবিতাগুলোর সাথে চুপিসারে টানিয়ে দিয়ে আসল। পরদিন লোকেরা দেখে নিয়মের ব্যতিক্রম, সেই কবিতার সাথে আরও একটি তিন লাইনের কবিতা, কিন্তু কবির নাম নেই। হৈ চৈ পড়ে গেল। কে এটি লিখেছে? ভাষায় ও ছন্দের দিক দিয়ে অত্যন্ত উঁচু মানের। অর্থের দিক দিয়েও অসাধারণ। এটি নিয়ে সারা আরবে বিপুল আলোড়ন। দস্তুরমত এটি দেখার জন্য কাবা ঘর লোকে লোকারণ্য। বসে গেল সভা। দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল যে, এটি মানুষের বানানো কবিতা নয়। অর্থাৎ এই সূরাটিকে কবি লবিদ এভাবে লিখল;
১. ইন্না আ’তাইনা কাল কাউসার
২. ফাছাল্লিলি রাব্বিকা অয়ানহার
৩. ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার।
৪. লাইছা হাজা মিন কালামিল বাশার।
অর্থাৎ চতুর্থ লাইন জুড়ে দিয়ে স্বীকার করে নিল যে, এটি মানুষের কথা নয়। এই সিদ্ধান্তের পর ঐ সাহাবি এসে বলে দিল যে, হ্যাঁ আমরা মুসলমানগণও আপনাদের সাথে একমত যে, এটি মানুষের নয়। এটি আল্লাহ পাকের কথা।
(২) কুরআনের প্রথম বাক্যেই বলে দেওয়া হয়েছে, এই কিতাব, এতে বিন্দু মাত্রও সন্দেহ নেই। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের নিকট থেকে যে এটি অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে আদৌ কোন সন্দেহ নেই। এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাথে সাথে এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে দুনিয়াবাসী অবিশ^াসীদের উপর যে, তোমাদের যদি সন্দেহ হয় তা হলে এমন একটি কুরআন রচনা করে দেখাও তো! এরশাদ হচ্ছে;
“বলুন, যদি মানব ও জিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়, তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।”
অন্যত্র আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন,
“আমার বান্দার প্রতি যে কুরআন নাজিল করেছি তার ব্যাপারে যদি তোমরা কোন সন্দেহ পোষণ কর তবে অনুরূপ একটি সূরা তোমরা উপস্থাপন কর। এক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সে সব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।” (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩)
এই চ্যালেঞ্জটি গত চৌদ্দ শত বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কেউ এটি গ্রহণ করতে সামর্থ হয়নি। মানুষ কত নব নব আবিষ্কার করে চলেছে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাতায়াত করার চেষ্টা করছে, এতো কিছু করার পরও কুরআনের মোকাবেলা করার সাহস পাচ্ছে না।
(৩) কুরআন পাক যে আল্লাহ পাকেরই কালাম, এর প্রমাণ স্বরূপ প্রথমেই আলোচনা করতে চাই, কুরআন পাকের প্রথম দুই আয়াত “বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম” দিয়ে। এই বিস্মিল্লাহই প্রমাণ করে যে, এটি আল্লাহ পাকের কালাম। কারণ এই বিস্মিল্লাহ লিখতে অক্ষর লাগে ১৯টি। সংখ্যাটির প্রথম ১ ও শেষ ৯। এই দু’টি সংখ্যার কোনটিই বিভাজ্য নয়। সংখ্যা ১৯ দিয়ে প্রমাণকরা যায় কুরআন আল্লাহ পাকের কালাম। প্রথমত; কুরআন পাকে বিস্মিল্লাহ এসেছে ১১৪ বার। কুরআন পাকের সূরার সংখ্যাও ১১৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। বিস্মিল্লাহ লিখতে শব্দ লাগে ৪টি। ইসম, আল্লাহ, রাহমান ও রাহীম। এবারে দেখুন পুরো কুরআন শরীফে ইসম শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে ৩৮ বার, আল্লাহ ২৬৯৮ বার, রাহমান ৫৭ বার এবং রাহীম ১১৪ বার। এই চারটি শব্দের সমষ্টিই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এবারে আসুন, কুরআন পাকে ব্যবহৃত কোডগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আরবী অক্ষর ২৮টি। এর অর্ধেক অক্ষর কোড হিসেবে ব্যহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ১৪টি অক্ষর। আর এই ১৪টি অক্ষর দিয়ে ১৪টি কোড তৈরি করা হয়েছে। এই কোডগুলো আবার কুরআন পাকে ২৯টি সূরার প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আলিফ লাম মীম, হামীম, আলিফ লাম রা ইত্যাদি। এবারে দেখুন কোডগুলোর সংখ্যা ১৪টি, অক্ষরের সংখ্যা ১৪টি এবং ১৯টি সূরায় ব্যবহৃত হয়েছে। এ দু’য়ের সমষ্টি ৫৭, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
এখন কোড অক্ষর ‘ক্বাফ’ নিয়ে একটু আলোচনা করি। কোড ‘ক্বাফ’ দু’টি সূরার প্রথমে ব্যবহৃত হয়েছে, সূরা ক্বাফ এবং সূরা আশ শুরায়। এই ২টি সূরাতে ক্বাফ এসেছে ৫৭ বার করে, অর্থাৎ ১১৪ বার, যা কুরআন পাকের সূরার সমান। আর কুরআন পাকের নামের প্রথম অক্ষর ‘ক্বাফ’। এই ‘ক্বাফ’গুলো ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কুরআন পাকে কউমে লুত শব্দটি ১২ বার এসেছে। কিন্তু আল্লাহ পাক শুধু এক স্থানে কউমে লুত না বলে বলেছেন ইখওয়ানে লুত। চিন্তা করে দেখুন, যদি এই স্থানেও কউমে লুত উল্লেখ করা হতো তাহলে ক্বাফ হয়ে যেত ৫৮টি। আর তখন ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হত না।
সূরা কলম, এ ‘নুন’ কোড ব্যবহার করা হয়েছে, এই সূরাতে ‘নুন’ অক্ষর এসেছে ১৩৩ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। সোয়াদ কোড এসেছে তিনটি সূরাতে, সূরা আরাফ, সূরা মারইয়াম, সূরা সোয়াদ এ। এই তিনটি সূরায় সোয়াদ এসেছে ১৫২ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
সূরা আরাফে একটি বিষয় লক্ষ্য করুন দেখবেন, ৬৯ নং আয়াতটিতে একটি শব্দ ‘বাসতাতুন’। ‘বাসতাতুন’ শব্দটি লেখা হয় সিন দিয়ে, কিন্তু এখানে এর ব্যতিক্রম। এখানে সোয়াদ দিয়ে লেখা হয়েছে। এটিই বিস্ময়ের ব্যাপার যে, যদি এই ‘সিন’ শব্দটিকে সোয়াদ না করা হত তা হলে, সোয়াদের সংখ্যা হয়ে যেত ১৫১টি এবং তখন ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হত না। সূরা ইয়াসিন এ কোড অক্ষর ‘ইয়া’ এবং ‘সিন’। এখানেও একই অবস্থা। এই সূরাতে এই দু’টি অক্ষর এসেছে ২৮৫ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এভাবে আরও অনেক প্রমাণ পেশ করা যায়।
পরিশেষে বলতে চাই যে, এই কুরআন আল্লাহ পাকের কালাম বলেই;
১. যুগের আবর্তন-বিবর্তন এর উপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, এখনও সম্পূর্ণ সংরক্ষিত আছে, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
২. সর্বত্র ও সর্বদা পাঠ করা হয়।
৩. লাখ লাখ লোক মুখস্থ করে রেখেছে। এ বিশ্বে আর কোন এমন কিতাব নেই, যা লাখ লাখ মানুষ মুখস্থ করে রাখে।
৪. এই গ্রন্থ সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়।
৫. বিশশ্ববাসী একটি ক্ষুদ্র সূরাও কুরআনের মত করে তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।
৬. এর প্রভাবে আরবের নিকৃষ্টতম লোকগুলো বিশ্বের দরবারে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
৭. এই গ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করে নব নব আবিষ্কার, এমনকি নভো-ভ্রমণ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে।
৮. এ গ্রন্থের ভাষার অলংকার, ভাবের উচ্ছাস ও শব্দ চয়নে এটি অনন্য ও অসাধারণ।
৯. বারবার পড়লেও বিরক্তি বা পুরাতন মনে হয় না।
১০. এই গ্রন্থের তফসীর এবং অনুবাদ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষায় হয়েছে। আরবী ভাষায় এক একটি কিতাব ৫শ’ খন্ড পর্যন্ত হয়েছে। আমাদের জানা মতে, উর্দুতে ৯২টি, হিন্দী ভাষায় ১৮টি, এভাবে ফার্সী, ইংরেজী, জার্মান, ল্যাটিন, ফ্রেন্স, রুশ, ইতালী, চীন সহ অন্যান্য প্রায় সকল ভাষায়ই শত শত অনুবাদ ও তফসীর প্রকাশিত হয়েছে।
কুরআন পাক হুজুরে পাক (সা:) এর জন্য একটি মুজিযা। প্রত্যেক নবী-রাসূলের কোন না কোন মুজিযা ছিল। যেমন- মূসা (আ:) এর লাঠি, নূহ (আ:) এর নৌকা, ঈসা (আ:) এর দুরারোগ্য ব্যধি ভাল করার ক্ষমতা ইত্যাদি। ঐ নবী-রাসূলগণের মুজিযা ছিল ক্ষণস্থায়ী। এখন আর এগুলো নেই, আমরা দেখতেও পাইনি। কোন প্রমাণও আমাদের নিকট নেই। শুধুমাত্র কুরআনের বর্ণনা ছাড়া।
কিন্তু হুজুরে পাক (সা:) এর এই মুজিযাটি কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। হুজুরে পাক (সা:) এর যামানায় এই কুরআন যেভাবে মানুষকে প্রভাবিত করত, এখনও সেভাবেই প্রভাবিত করছে। আর কিয়ামত পর্যন্তও এভাবেই প্রভাবিত করবে। কুরআনের বাণী হযরত ওমর (রা:) এর অন্তরে যেভাবে ঝড় সৃষ্টি করেছিল, কিয়ামত পর্যন্তও এ ভাবেই মানুষের অন্তরে ঝড়ের সৃষ্টি করতে থাকবে। একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, সূরা ফাতিহা একটি মানুষ দিনে কতবার তেলাওয়াত করে। কোন দিনও সে বলেছে যে, এই একটি সূরা আর পড়তে ভাল লাগে না? বরং যতবার পড়ে ততই ভাল লাগে। বিশ্বের এমন একটি গল্প-কবিতা কি দেখাতে পারবেন যে, এটি একটি লোক প্রতিদিন বার বার পড়ে? একটি কবিতা বা গল্প একবার বা দু’বার পড়লে, এটি পড়ার আর কোন আগ্রহ থাকে না।
কিন্তু কুরআন আল্লাহ পাকের কালাম বলেই অন্য মানব রচিত গল্প-কবিতার সাথে এর কোন তুলনা হয় না। অমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।