ইরানের সাথে যুদ্ধ চাই না: ট্রাম্প
ইরানের সাথে যুদ্ধে অনাগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শীর্ষ উপদেষ্টাদের সাথে আলোচনায় তিনি এই অনাগ্রহের কথা জানান। ট্রাম্প প্রশাসনের তিন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি যুদ্ধে যেতে চান না। যারা যেতে চায়, তিনি তাদের মধ্যে নেই।’ হরমুজ প্রণালী নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই সামরিক সঙ্ঘাতে ট্রাম্পের অনিচ্ছার বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এলো। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও ওই অঞ্চলের তেহরানঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড মার্কিন গোয়েন্দাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব শক্তিশালী হলে তা মার্কিন স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর- এ ভাবনা থেকে পেন্টাগন এরই মধ্যে অতিরিক্ত একটি বিমানবাহী রণতরী ও বেশ কয়েকটি বোমারু বিমানও পাঠিয়েছে। উপসাগরে সৌদি তেলের ট্যাঙ্কারসহ চারটি জাহাজে হামলার ঘটনার পর গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন বাগদাদের দূতাবাস থেকে কিছু কর্মকর্তাকে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়েও নিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ড বাহিনীকে ‘বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করে।
পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে তেহরান জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব স্থাপনা ও সৈন্য এখন তাদের নিশানায় পরিণত হয়েছে। ফুটতে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্য ও অন্য উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠক করেছেন বলে তার প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন তিনি, বলেছেন এক কর্মকর্তা।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্প আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো ব্যয়বহুল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আর জড়ানো উচিত নয় বলে অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে আনারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট উয়েলি মরেরের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “আশা করছি (হবে) না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই; সুইজারল্যান্ডই তাদের মধ্যে লিয়াজোঁ রাখে। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দলের মুখপাত্র গ্যারেট মার্কুজ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সামরিক সঙ্ঘাত চায় না; তিনি ইরানের নেতৃত্বের সাথে আলোচনার দ্বারও খোলা রেখেছেন। যদিও ইরান গত ৪০ বছর ধরে সহিংসতার পথেই হেঁটেছে, আমরাও ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা ও স্বার্থ রক্ষা করে যাব।’
ট্রাম্প ও উয়েলি মরেরের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ও ভেনিজুয়েলাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে গত বছর নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ওয়াশিংটন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা তেহরানের সাথে যুদ্ধের পক্ষে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ব্যক্তিগত আলোচনায় তিনি এ নিয়ে উদ্বেগও জানিয়েছেন, বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার উপদেষ্টাদের বিরোধ নেই এবং তিনি ভিন্ন মতকে স্বাগত জানান বলে ফক্স নিউজ চ্যানেলকে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স।