টাওয়ার হ্যামলেটসের আরো ৩৬ জন বাসিন্দা পেলেন বৃটিশ নাগরিকত্ব
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের রেজিস্টার অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত সিটিজেনশীপ অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধবদের সামনে রাণীর প্রতি আনুগত্য ঘোষনা করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন ৩৬ জন বাসিন্দা। নাগরিকত্ব গ্রহণের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র জন বিগস এবং কাউন্সিলের চীফ এক্সিকিউটিভ উইল টাকলি। তাঁরা নতুন বৃটিশ নাগরিকদের বারায় স্বাগত জানান।
মেয়র জন বিগস বলেন, “আমাদের নতুন ব্রিটিশ সিটিজেনদের সাথে দেখা হওয়ায এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও ব্রিটিশ হওয়া তাদের কাছে কী অর্থ বহন করে, তা শোনাটা আমার জন্য ছিলো খুবই আকর্ষনীয়। দেশের সবচেয়ে নৃতাত্বিক বৈচিত্র্যময় জনপদগুলোর অন্যতম হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের নতুন আবাসস্থল হিসেবে আমাদের এই বারাকে পছন্দ করায় আমি খুবই গর্বিত।”
রাজধানী লন্ডনের জনসংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে ও পরিবর্তন হচ্ছে। বর্হিবিশ্ব থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ লন্ডনে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। সরকার এরি মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণের ব্যাপারে ইইউ বা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের বসবাস সবচেয়ে বেশি টাওয়ার হ্যামলেটসে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই বারায় বেশি।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী, উইল টাকলি বলেন, ”টাওয়ার হ্যামলেটসের শক্তির অন্যতম উ্স হচ্চেছ এর বৈচিত্র্যময় কমিউনিটি এবং এটি এমন এক জনপদ, যেখানে আপনার নৃতাত্বিক পরিচয়কে বিবেচনা ছাড়াই আপনি অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন।”
২০০৪ সালে সিটিজেনশীপ সিরেমনি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এ বারা থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি লোক ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস রেজিস্ট্রি অফিস গত বছর ৭০টি গ্রুপ সিটিজেনশীপ সিরেমনি এবং ৩৪০টি প্রাইভেট সিরেমনির আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রায় ২ সহস্রাধিক নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করা হয়।
বারার আন্তর্জাতিক অভিবাসনের উল্লেখযোগ্য অনুপাতই এসেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো থেকে। ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ি বারার বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের জন্ম হয়েছে ইইউভূক্ত দেশগুলোতে (যুক্তরাজ্য ছাড়া)।
বৃটিশ নাগরিকত্ব লাভের জন্য ১০ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে ব্রাজিলের মারিয়া ডেলেউর। অবশেষে বৃটিশ নাগরিক হওয়ার পর তিনি বলেন, আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি, কারণ এই মূহুর্তের জন্য আমি ১০টি বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। টাওয়ার অব লন্ডনে আজ আসতে পেরে আমি অভিভূত, এখানে এই প্রথম এলাম, তাই দিনটি আমার জন্য বিশেষ আনন্দের, আমি ভীষণ খুশি। গত ৫ বছর থেকে আমি টাওয়ার হ্যামলেটসের আইল্যান্ড গার্ডেন্সে বাস করছি। এখানকার কমিউনিটি খুবই বন্ধুবৎসল।
সোমালিয়ার মোহাম্মদ আহমদ দুসেলি বলেন, আজ আমি খুবই আনন্দিত। আমার জীবনের সেরা একটি দিন হলো আজ। গত ২০ বছর ধরে টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় আমি বসবাস করছি। এই বারার সবচেয়ে বেশি যে দিকটি আমার পছন্দের, তা হলো বহু সংস্কৃতির এক মিলন ক্ষেত্র হচ্ছে এই জনপদ।
বৃটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণের পর স্পেনের নাগরিক মার্থা গোয়াস বলেন, গত ৭ বছর ধরে আমি এখানে বাস করছি এবং যুক্তরাজ্যেই আমি কাটাতে চাই আমার জীবন। ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ পেয়ে আমি খুবই সুখি। আমি টাওয়ার হ্যামলেটসকে ভালোবাসি। আমি বাস করি ক্যামব্রিজ হিথ রোডে এবং এখানে আমি আসার পর থেকে গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে দেখছি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা এবং অন্তর্ভূক্তিকরণ, যা স্বাগত জানায় সকল সংস্কৃতির মানুষদের।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে নতুন নাগরিকত্ব লাভকারীদের ৩৭ শতাংশের জন্ম ইইউ/ইইএভূক্ত দেশগুলোতে। এই এক বছরে ১২১টি দেশে জন্মগ্রহণকারীরা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে জন্মগ্রহণকারী ৪৫৩ জন ব্রিটিশ নাগকিত্ব পান। এছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত (১২৮ জন), ইটালি (১১৯ জন), পোল্যান্ড (১০৬ জন), জার্মানি (৮১ জন), ফ্রান্স (৭৯ জন), রোমানিয়া (৭৭ জন), রাশিয়া (৫৮ জন), স্পেন (৫৬ জন), ব্রাজিল (৫১ জন) ও চীন (৫১ জন)।