জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ, চার্জশিট শিগগিরই
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগির চার্জশিট দেওয়া হবে। জামায়াতে ইসলামী বিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) অতিরিক্ত এসপি মতিউর রহমান শনিবার এমন তথ্য জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তে গঠিত তদন্ত সংস্থার সদস্য মতিউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সংগঠনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব ডকুমেন্ট, তথ্য বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংগঠনটির বিরুদ্ধে চার্জ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সংগঠন হিসেবে অপরাধ বিচারে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ তদন্তের বিষয়টি নথিভুক্ত করে এ তদন্ত কাজ শুরু করা হয়। দলটির অর্গানোগ্রামসহ অন্যান্য তথ্যাদিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন মামলায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
মতিউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযমের মামলা বিচারে সাক্ষ্য হিসেবে বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর বিষয়েও তদন্তে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার মামলায় রায় হয়েছে। দলটির আরো অনেকের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেয়া রায়েও জামায়াতে ইসলামীসহ দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনকে সন্ত্রাসী, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্তকারী এ কর্মকর্তা জানান, ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও দলীয় নীতি-আদর্শের মধ্যে থেকেই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
গত ১৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু হয়। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলারও তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন মতিউর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা এই চারটি বিষয়কে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তদন্তের কাজ চলছে বলে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক জানান।
ইতিমধ্যে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাদের মোল্লার মামলায় আনা আপিলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। সাঈদীর মামলায় আনা আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরুফে বাচ্চু রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়া হয়েছে। তবে তিনি পলাতক রয়েছেন।
জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলায়ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আবদুল আলীমের মামলায় বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। পৃথক ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফ, আবদুস সুবহান, এ টি এম আজহার, মীর কাশেম আলী, সৈয়দ মো. কায়সার, মোবরাক হোসেন, মইনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, মেয়র জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। এদের মধ্যে মইনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান, মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন পলাতক রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে দেয়া মামলাগুলোর রায়ের মধ্যে জামায়াতকে অপরাধী সংগঠন (ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন) বলা হয়েছে। ছয়টি রায়েই বলা হয়েছে, পাকিস্তান রক্ষার নামে সশস্ত্র সহযোগী বাহিনী গঠন করে নিরস্ত্র বাঙালি, হিন্দু সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবী, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য জামায়াতে ইসলামী বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও আরো ১২টি মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ১১ মামলায় আসামিরা হচ্ছেন- গিয়াস কাদের চৌধুরী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, মো. আমজাদ মিনা, মো. লাহার আলী শাহ, রুস্তম সিকদার, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ, রাজাকার সৈয়দ মো. হোসেন ওরফে হাছেন আলী, মো. নাসির, আতাউর রহমান ননী, আশরাফ হোসেন।