ইউরোপের পথে সিলেটের হাজারো তরুণ, সাগরে সাঁতরে জীবিকার সন্ধান

যে কোনো মূল্যে ইউরোপে যেতে চায় সিলেটের তরুণরা। তবে, জেলার বিয়ানীবাজারের তরুণরাই এই পথে পা বাড়ায় বেশি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে হলেও জীবন সাজাতে তাদের কোনো ডরভয় নেই। এখানকার তরুণদের মনে-ইউরোপ মানে বিলাসী জীবন, সংসারের সুখ-শান্তি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই সুখ-শান্তির পেছনে ছুটতে গিয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালী যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে এখনো নিখোঁজ বিয়ানীবাজারের চার তরুণ। এছাড়াও ইউরোপ যাওয়ার ট্রানজিট রুট লিবিয়া-তুরস্কের পথ ধরেছে হাজারো তরুণ।

তবে, আশ্চর্যের বিষয়- ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে-সমুদ্রে সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় তাদের পরিবারের কোনো সদস্য সহজে মুখ খুলতে চায় না। পরিবারের উজ্জল-উচ্ছ্বল সন্তানটি অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি থাকলেও খোদ বাবা-মা-ই নীরব-নিস্তব্দ।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইউরোপ যাওয়ার পথে সাগরে নিখোঁজদের মধ্য থেকে একজনের নাম পরিচয় জানা গেছে। আব্দুল হালিম সুজন (৩২) নামের ওই যুবক উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের মাইজকাপন গ্রামের মৃত মাহমদ আলীর ছেলে।

এদিকে চারখাই ইউনিয়নের আদিনাবাদ গ্রামের তুহিন (২৮) নামের অপর আরেক তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবণী শংকর কর। তিনি ওই তরুণের বাড়ি ঘুরে এসে জানান, গত ৬ মে তুহিন তার পরিবারের সদস্যদের সাথে শেষ যোগাযোগ করেন। এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়। অপরদিকে একইপথে ইতালী যেতে নিখোঁজ হয়েছে রফিক আহমদ ও রিপন আহমদ নামের আরো দুই যুবক।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবণী শংকর কর বলেন, যারা ইউরোপ নিতে প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের সাগরে জীবনহানির জন্য দায়ী, সেসব আদম ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কোনো ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার মামলা দায়ের করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিখোঁজ সুজনের বড়ভাই আব্দুল আলিম জানান, সুজন দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। মা-বাবাহীন পরিবারের চার ভাই ও এক বোনের সংসারের হাল ধরতে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার গোয়ালি গ্রামের শাহিন আহমদ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার এলাকার পারভেজ আহমদ নামের এক দালালের সাথে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় এক বছর পুর্বে ইতালী যাবার জন্য চুক্তি হয়েছিল।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন লিবিয়াতে অবস্থান করার পর ৯ মে সমুদ্র পথে ইতালী যাওয়ার জন্য ট্রলারে চড়ে সেসহ আরো কয়েকজন। ট্রলারে চড়ার পূর্বে সুজন বাড়িতে সর্বশেষ যোগাযোগ করেছে। নৌকাডুবির ঘটনা জানার পর থেকে আমার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। কেননা ট্রলারে চড়ার পর থেকে এখনো বাড়িতে সে যোগাযোগ করেনি।

আব্দুল আলিম বলেন, ভাইয়ের খোঁজ নেয়ার জন্য দালালের সাথে সর্বশেষ যোগাযোগ করলে পারভেজ নামের ওই আদম ব্যবসায়ী জানান, আমরা সুজনকে ইতালীগামী ট্রলারে তুলে দিয়েছি।

এর আগেও বিয়ানীবাজার উপজেলার আরো তিন তরুণ ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার প্রায় তিনবছর পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ হওয়া ফতেহপুরের ইমন (২২), শ্রীধরার ফরিদুল আলম (২৪) ও খাসা গ্রামের ইমরান (৩০) আর ফিরে আসেনি। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারগুলো থেকে থানায় কোনো মামলাও দায়ের করেনি। -ইউএনবি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button