আ’লীগ নেতার প্রবেশ ঠেকাতে শতশত গাছ কর্তন, হাতিয়ায় ১৪৪ ধারা
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সংগঠনিক সফর বানচাল করতে ৭০ কিমি. রাস্তার সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও মেঘনার কুখ্যাত ডাকাত দল দিয়ে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে- এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে উপজেলা প্রশাসন পুরো উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মোহাম্মদ আলীর কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দুর্নাম ছিল। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, জল ও বনডাকাতদের মদদ দেয়াসহ এ নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা আওয়ামী লীগে থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ফলে অনেকটা গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এমতাবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো. ওয়ালী উল্যার নেতৃত্বে হাতিয়া সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। সফরে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খায়রুল আনাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওদুদ পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ খান, সদর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিহাব উদ্দিন শাহীন, সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, কবিরহাট পৌরচেয়ারম্যান মো. রায়হানসহ ৩ শতাধিক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা থাকার কথা রয়েছে। শনিবার দুপুরের পর তাদের এ সফরে যাওয়ার কথা।
জেলা আওয়ামী লীগের সফরকে ঠেকাতে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও জল ডাকাতদের নিয়ে শুক্রবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা বাজার থেকে শুরু হয়ে নলচিরা ঘাট ও ৪নং ঘাট থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের বনবিভাগের কমপক্ষে সহস্রাধিক গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী শুক্রবার রাত থেকে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে গরু জবাই করে লোকজন জড়ো করতে থাকে। রাতে বয়ারচর আলী বাজার থেকে জবাইকরা গরুর মাংস আটক করে পুলিশ।
পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সফর বনচাল করতে গত কয়েকদিন ধরে চক্রান্ত করে আসছে। তিনি দ্বীপের বিভিন্নস্থান থেকে ডাকাত ও তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ভাড়া করে এনে তার বাসায় রেখেছে। এদের সকলের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মহিউদ্দিন আাহাম্মদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী তার ডাকাতবাহিনী দিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। আওয়ামী লীগের মান-ইজ্জত নষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ থেকে সে বহিষ্কৃত হলেও এখনও তিনি আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে নদীতে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো. ওয়ালী উল্যাহ বলেন, ‘এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা মোহাম্মদ আলী স্বভাব। তার অতীতের কর্মকাণ্ড এখনো অব্যাহত রেখেছে। তিনি চান না উপজেলায় আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত হোক। তাই তিনি জেলা নেতাদের প্রতি এমন আচরণ করেছে। তাছাড়া গত কয়েক দিন ধরে তার বাসায় মেঘনার ডাকাতরা সশস্ত্র অবস্থান করছে।’ এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
হাতিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আসাকে কেন্দ্র করে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর সমর্থকরা রাতে গাছ কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপের কুখ্যাত ডাকাত জামুবাহিনী, ভোলার কালাম বাহিনী এবং লক্ষ্মীপুরের সোলেমান, ফারুক কমান্ডার বাহিনীসহ মেঘনার কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালী উর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে পুরো উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’