ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা ছাড়িয়েছে ইরান
ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সই করা পরমাণু সমঝাতা অনুযায়ী ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা অতিক্রম করেছে ইরান। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ইরানের বার্তা সংস্থা আইএসএনএর (ইসনা) বরাতে বিবিসি জানায়, ২০১৫ সালে বিশ্ব শক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ইরান নিজেদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা হ্রাসে মজুদের পরিমাণ যে সীমার মধ্যে রাখতে রাজি হয়েছিল তা অতিক্রম করেছে।
সোমবার ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নাতাঞ্জ শহরে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ আইএসএনএ কে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির পরিমান ৩০০ কেজি ছাড়িয়েছে। আমরা আগেই এ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা পরিষ্কারভাবেই বলেছিলাম আমরা কী করবো এবং আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। এটাকে আমরা যৌথ সামগ্রিক কর্ম পরিকল্পনার অধীনে আমাদের অধিকার বলেই বিবেচনা করছি।
জাভেদ জারিফ বলেন, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ইরান ৩০০ কেজি পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করতে পারত। তবে ওই সমঝোতার ২৬ ও ৩৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অপর পক্ষ এ সমঝোতা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে তেহরান এটির কোনো কোনো ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পারবে। সে অনুযায়ী ইরান এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা ছাড়ার খবর প্রকাশের পর জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি বিষয়ক সংস্থা- আইএইএ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।
এর আগে গত ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জানিয়েছিলেন, এখন থেকে পরমাণু সমঝাতা অনুযায়ী ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা মেনে চলবে না ইরান। ২৭ জুন থেকে ইরান এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত পরমাণু কর্মসূচি হ্রাস করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে- এই শর্তে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরান ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিতে সই করে ইরান। শুরু থেকেই চুক্তির প্রতিটি শর্তই মেনে আসছে তেহরান। এর পরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে ওই সমঝোতা থেকে বেআইনি ও একতরফাভাবে আমেরিকাকে বের করে নেন। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালে তুলে নেয়া সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরিপ্রেক্ষিতে ইউরেনিয়াম ও ভারী পানি (হেভি ওয়াটার) বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। জাতিসংঘের পরমাণু তদারকিবিষয়ক সংস্থা- আইএইএর প্রতিবেদনে যদি সীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি নিশ্চিত হয় তবে পরমাণু চুক্তির কারণে দেশটির ওপর থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল সেগুলো পুনর্বহাল করা হবে।