অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের জিততে হলে চাই ২২৪ রান, সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে এই লক্ষ্যকে একেবারে মামুলি বলা যাবে না। তার উপর প্রতিপক্ষ দলটি অস্ট্রেলিয়া। যারা কিনা কখনই বিশ্বকাপে শেষ চারের লড়াইয়ে হারেনি। কিন্তু এবার কোনো পরিসংখ্যানই কাজে এলো না। অস্ট্রেলিয়াকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে নাম লেখালো এখন পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ না পাওয়া ইংল্যান্ড।

বার্মিংহামে আজ (বৃহস্পতিবার) ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে একেবারে হেসেখেলে হারিয়েছে ইয়ন মরগানের দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের ছুড়ে দেয়া মাঝারি মানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট আর ১০৭ বল হাতে রেখে।

জনি বেয়ারস্টো আর জেসন রয়ের উদ্বোধনী জুটি আরও একবার জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ২২৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ওপেনিংয়েই ১০৪ বলে তারা তুলে দিয়েছেন ১২৪ রান। এমন শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগে! লাগেওনি।

দুই ওপেনারের মধ্যে একটু ধীরগতির ছিলেন জনি বেয়ারস্টো। ৪৩ বলে ৩৪ রান করে তিনি মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ হন। ১৪ বলের ব্যবধানে আরেক ওপেনার জেসন রয়কেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে অসি শিবিরে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিলেন প্যাট কামিন্স। ৬৫ বলে ৯ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় রয় তখন সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় (৮৫)।

ওই আশা পর্যন্তই। তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটিতে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন জো রুট আর অধিনায়ক ইয়ন মরগান। রুট ৪৬ বলে ৪৯ আর মরগান ৩৯ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একাই লড়াই করেছেন স্টিভেন স্মিথ। এক প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল, অন্যপ্রান্তে একাই অবিচল ছিলেন তিনি। ইংলিশ বোলারদের গতির আগুন কিংবা মায়াবী ঘূর্ণি জাদু- কোনো কিছুই কাবু করতে পারেনি তাকে। স্মিথের কল্যাণেই ১৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ২২৩ রানের মাঝারি মানের পুঁজি পেয়ে যায় অসিরা।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ক্রিস ওকস কিংবা জোফরা আর্চার- এই দুই পেসারের গতির আগুনে পুড়ে শুরুতেই ফিঞ্চ, ওয়ার্নার কিংবা পিটার হ্যান্ডসকম্বকে হারিয়ে দারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায় অসিরা।

সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে টেনে তুলেন স্টিভেন স্মিথ আর অ্যালেক্স ক্যারে। এই দুই ব্যাটসম্যানের ১০৩ রানের জুটিই ইংল্যান্ডের সামনে অস্ট্রেলিয়ার লড়াকু ইনিংস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন। যদিও স্মিথ শেষ পর্যন্ত রানআউটের শিকার হয়ে যান এবং আউট হওয়ার আগে ১১৯ বলে করেছিলেন ৮৫ রান। ক্যারে আউট হন ৪৬ রান করে।

মূলতঃ বড় দলগুলোর চরিত্রই এমন। কঠিন বিপদের মুখে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যাবেই। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তেমনি দলের কঠিন বিপদের সময় ত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন স্টিভেন স্মিথ এবং অ্যালেক্স ক্যারে।

যদিও তাদের দু’জনের ব্যাটে ১০৩ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ওঠার যখন বড় স্কোরের পথে হাঁটছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন হঠাৎই ঝড় তোলেন আদিল রশিদ। তার মায়াবী ঘূর্ণিতে একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং। বড় স্কোর গড়া তো দূরে থাক, শেষ পর্যন্ত ৪৯ ওভারে ২২৩ রানেই অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওকস এবং আদিল রশিদ নেন ৩টি করে উইকেট। জোফরা আর্চার নেন ২ উইকেট। ১টি নেন মার্ক উড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : অস্ট্রেলিয়া এবং ব্যাট করার সিদ্ধান্ত
অস্ট্রেলিয়া : ২২৩/১০, ৪৯ ওভার (স্টিভেন স্মিথ ৮৫, অ্যালেক্স ক্যারে ৪৬, স্টার্ক ২৯, ম্যাক্সওয়েল ২২, ওয়ার্নার ৯; ক্রিস ওকস ৩/২০, আদিল রশিদ ৩/৫৪, আরচার ২/৩২, মার্ক উড ১/৪৫)।

ইংল্যান্ড : ২২৬/২, ৩২.১ ওভার (জেসন রয় ৮৫, জো রুট ৪৯*, মরগ্যান ৪৫*, বেয়ারেস্ট ৩৪; মিচেল স্টার্ক ১/৭০, কামিন্স ১/৩৪)

ফল : ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ক্রিস ওকস (ইংল্যান্ড)

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button