কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি: ৫০০ কোটি ডলার জরিমানার মুখে ফেসবুক
ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে ফেসবুককে রেকর্ড ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে ফেসবুকের আট কোটি ৭০ লাখ গ্রাহকের তথ্য চলে যাওয়ার অভিযোগে এই জরিমানা করা হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৪ সাল থেকে এসব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত ও অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে এফটিসি গত বছরের মার্চে তদন্ত শুরু করে। ৩-২ ভোটে এ জরিমানার বিষয়টি অনুমোদিত হয়। রিপাবলিকান কমিশনাররা এ জরিমানার পক্ষে থাকলেও ডেমোক্রেটরা ছিলেন বিপক্ষে। তবে জরিমানার বিষয়ে এসটিসি ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করেনি।
এফটিসির তদন্তের মূলে ছিল ২০১১ সালে ফেসবুকের করা চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে কি না, তা যাচাই করা। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ব্যবহারকারীর কোনো তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করতে হলে ব্যবহারকারীকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে তার অনুমতি নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই জরিমানা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মার্কিন বিচার বিভাগের সিভিল ডিভিশন। চূড়ান্ত ওই সিদ্ধান্ত আসতে কত সময় লাগবে তা স্পষ্ট নয়।
শেষ পর্যন্ত এ ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা বহাল থাকলে, এটাই হবে কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর এফটিসির আরোপ করা সর্বোচ্চ জরিমানা। গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেসবুককে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার হতে পারে বলে আগেই অনুমান করেছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতার জন্য বেশি পরিচিত। ট্রাম্পের বিজয়ে এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে ওই প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত কোনো তথ্য ট্রাম্পের প্রচারণার তারা ব্যবহার করেনি।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনাটি সামনে নিয়ে এসেছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী ক্রিস্টোফার উইলি। তিনিই জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবং যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোটে ভূমিকা ছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার। আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে সহযোগিতা করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আলেকসান্দ্র কোগান। তিনি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করে ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে ছেড়েছিলেন।
ক্রিস্টোফার উইলি বলেন, এর মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ওই তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরকে সরবরাহ করেছিল। এ ছাড়া তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রিপাবলিকান ভোটারও চিহ্নিত করা হয়।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, সম্ভবত ৫ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে, ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে।